এলএনজি অবকাঠামোয় হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে জাপান

বণিক বার্তা ডেস্ক

বৈশ্বিক তরলীকৃত গ্যাসের (এলএনজি) বাজার চাঙ্গা করতে চায় জাপান। পাশাপাশি জ্বালানি সরবরাহ নিরাপত্তাও জোরদার করতে ইচ্ছুক দেশটি। আর এ লক্ষ্যে বৈশ্বিক এলএনজি অবকাঠামো উন্নয়নে ১ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে এলএনজি আমদানিতে শীর্ষ তালিকায় থাকা দেশটি। খবর রয়টার্স।

দুই বছর আগে জ্বালানি সাপ্লাই চেইন বাড়াতে জাপান ১ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের কথা জানিয়েছিল। আর এখন দেশটি নতুন করে আরো ১ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুত দিল। ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বিরাজ করায় মধ্যপ্রাচ্য থেকে জ্বালানি তেল সরবরাহ হুমকির মধ্যে রয়েছে। ফলে জ্বালানি তেল সংগ্রহে মধ্যপ্রাচ্যের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনতে যাচ্ছে দেশটি। তারই অংশ হিসেবে এ খাতে বিনিয়োগ করার কথা জানিয়েছে জাপান।

সম্প্রতি রাজধানী টোকিওতে অনুষ্ঠিত এলএনজি উৎপাদক-ভোক্তা দেশগুলোর বার্ষিক সম্মেলনে নতুন এ বিনিয়োগের কথা জানিয়েছেন জাপানের অর্থ, বাণিজ্য ও শিল্পবিষয়ক মন্ত্রী ইশুহু সুগাওয়ারা। তিনি বলেন, দুই বছর আগে আমরা এলএনজির সাপ্লাই চেইন খাতে ১ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের কথা জানিয়েছিলাম। এখন নতুন করে আরো ১ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের জন্য প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে এ বিনিয়োগ করা হবে।

শীতলীকৃত জ্বালানি ব্যবহার বাড়াতে জাপানের এ উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে ৫০০ কর্মীকে এলএনজি প্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া। এর আগের বিনিয়োগেও প্রযুক্তি এবং পরিবেশগত বিষয়ে ৫০০ কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেয়ার কথা জানিয়েছিল দেশটি।

মন্ত্রী বলেন, এলএনজির বৈশ্বিক বাজার চাঙ্গা করার প্রয়াসে এ প্রতিশ্রুতি দেয়া হচ্ছে। জাপান বৈশ্বিক জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সবসময় কঠোরভাবে কাজ করে যাবে।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র অনুযায়ী, ২০১৭ সালে দেয়া ১ হাজার কোটি ডলারের বিনিয়োগের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বড় প্রকল্পগুলোয় ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যে কানাডাও রয়েছে। দেশটির এলএনজি খাতে মিত্সুবিশি করপোরেশনও বড় বিনিয়োগ করেছে। এছাড়া মোজাম্বিকের এলএনজি খাতেও বিনিয়োগ করেছে জাপান। এছাড়া এরই মধ্যে দেশটি ৪০০ কর্মীকে এলএনজি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছে বলেও জানায় সূত্রটি।

বিদ্যুৎ উৎপাদনে এখনো কয়লার ওপর অত্যধিক নির্ভরতা রয়েছে জাপানের। ফলে দেশ-বিদেশে সমালোচিত হচ্ছে। এ অবস্থায় এলএনজিতে বিনিয়োগ দেশটির কার্বন নির্গমন কমিয়ে আনতে সাহায্য করবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক-বিষয়ক বিভাগের পরিচালক তাকেশিই সোডা মনে করেন, ২০১১ সালে ফুকুসুমা পারমাণবিক বিপর্যয়ের মতো সংকট অবস্থা মোকাবেলায় বিকল্প জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা করতে হবে। আর সেজন্যই এলএনজির আমদানি বাড়ানো প্রয়োজন। এছাড়া উৎপাদক দেশগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা তৈরি করে বাজারে দাম কমিয়ে আনতে হলেও জাপানকে আরো বেশি এলএনজি আমদানি বাড়াতে হবে।

সম্প্রতি সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় জ্বালানি তেল উত্তোলন প্রতিষ্ঠান আরামকোর দুটি স্থাপনায় ড্রোন হামলা হয়। এতে জ্বালানি তেল উত্তোলনে শীর্ষে থাকা দেশটির উত্তোলন অর্ধেকে নেমে আসে, যা জ্বালানি তেলের সরবরাহ সংকট তৈরি করবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। যদিও এটি তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। এর পরও জ্বালানি তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সচেতন হচ্ছে ভোক্তা ও সরবরাহকারী দেশগুলো। নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করতে এ কারণেই এ খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে জাপান।

ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির বাজার ও নিরাপত্তা-বিষয়ক পরিচালক কেইসুকে সাদামরি বলেন, সৌদি হামলা এলএনজি খাতে বড় প্রভাব ফেলতে পারেনি। তবে হরমুজ প্রণালিতে বড় কোনো ঘটনা ঘটলে সংকট তৈরি করতে পারে। কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে জ্বালানি তেল সরবরাহের প্রধান পথ এ প্রণালি। সেখানে কয়েক মাস ধরে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার দ্বন্দ্বের জেরে অস্থিরতা বিরাজ করছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন