চীনা কোম্পানিতে বিনিয়োগে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞায় শুধু চীনের ওপরই সীমিত প্রভাব পড়বে না, বরং যুক্তরাষ্ট্রেও তার ঢেউ লাগবে। কয়েকজন বিশ্লেষক সিএনবিসিকে এ আশঙ্কার কথা জানান। খবর সিএনবিসি।
যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজার থেকে চীনা
কোম্পানিগুলো বাদ দেয়াসহ হোয়াইট হাউজ চীনভিত্তিক কোম্পানিতে মার্কিন বিনিয়োগ
হ্রাসের কথা ভাবছে—এ রকম খবরের পরিপ্রেক্ষিতে সিএনবিসিকে মতামত জানিয়েছেন কিছু বিশ্লেষক।
বেইজিংয়ের সিনহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের
ফিন্যান্সের অধ্যাপক নিং ঝু রোববার এক টেলিফোন সাক্ষাত্কারে সিএনবিসিকে বলেন, মার্কিন
শেয়ারবাজার থেকে চীনা কোম্পানিগুলোকে বাদ দেয়া হলে এ বার্তা দেয়া হবে যে
যুক্তরাষ্ট্র আগের মতো আর মুক্তবাজার নয়। এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব অবশ্যই পড়বে।
ব্লুমবার্গে মার্কিন শেয়ারবাজার থেকে
চীনা কোম্পানিগুলো বাদ দেয়ার খবর প্রকাশ হওয়ার পর শুক্রবার মার্কিন শেয়ারদরে বড়
পতন হয়। নিউইয়র্ক বা হংকংয়ে তালিকাভুক্ত চীনের প্রধান ইন্টারনেটভিত্তিক
কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর পতন হয়েছে ৩ দশমিক ৮০ শতাংশ।
আসন্ন চীন-মার্কিন
বাণিজ্য আলোচনায় কিছুটা চাপ সৃষ্টিতে হোয়াইট হাউজ ওই নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ভাবছে
বলে মনে করছেন কিছু বিশ্লেষক। মার্কিন বিনিয়োগ কতটুকু হ্রাস করার ঘোষণা দেবে
হোয়াইট হাউজ, সে বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়।
এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ
মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা মনিকা ক্রাউলি জানান, চীনা
কোম্পানিগুলোর যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তি ঠেকাতে কোনো পদক্ষেপের কথা
ভাবছে না প্রশাসন। আমরা যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগকে স্বাগত জানাই।
এদিকে চীনের সিকিউরিটিজ রেগুলেটরি কমিশনকে
সিএনবিসির পাঠানো এক ফ্যাক্স বার্তার এখনো কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্র যদি এভাবে বিনিয়োগ
সংকোচনের চেষ্টা করে, তাহলে তা কার্যকর করা কঠিন হবে এবং মার্কিন মূলধন বাজারে তা নেতিবাচক
প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন ঝু। তিনি বলেন,
সামরিক নির্দেশনা বা রফতানি ক্রয়াদেশ বা
বাণিজ্যের চেয়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ কিছুটা ভিন্ন। একে নিয়ন্ত্রণ করা অনেক কঠিন।
অনেক চীনা কোম্পানি তাদের ব্র্যান্ড
চাঙ্গা করতে এবং ডলারের সুবিধা নিতে যুক্তরাষ্ট্রে তালিকাভুক্তির আবেদন করে। যদি
মার্কিন শেয়ারবাজারগুলোয় চীনা কোম্পানিগুলোকে কোণঠাসা করে রাখা হয়, তাহলে
বৈশ্বিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় পিছিয়ে থাকবে মার্কিন ব্যাংক ও মিউচুয়াল ফান্ড
কোম্পানিগুলো।
গত আগস্টে আলিবাবার মতো বৃহৎ
কোম্পানিসহ দুইশতাধিক চীনা কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজার থেকে শত কোটি ডলার
বিনিয়োগ সংগ্রহ করেছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান গেভক্যাল ড্রাগোনমিকসের দুই গবেষক
অ্যান্ড্রু ব্যাটসন ও ল্যান্স নোবল সিএনবিসির কাছে এ তথ্য জানান। তবে প্রধান সব
চীনা কোম্পানিই নিউইয়র্ক শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করেনি।
উইচ্যাট মেসেজিং অ্যাপ ও বিভিন্ন
মোবাইল গেমসের প্রধান ডেভেলপার টেনসেন্ট তালিকাভুক্ত হয়েছে হংকং শেয়ারবাজারে। গত
বছর একই শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে স্মার্টফোন নির্মাতা শাওমি ও ফুড ডেলিভারি
কোম্পানি মেইতুয়ান-দিয়ানপিং। ঝু বলেন,
চীনা কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তির বিকল্প আরেকটি
শেয়ারবাজার হচ্ছে লন্ডন।
চীন সরকার চাচ্ছে, তাদের
বৃহৎ কোম্পানিগুলো দেশেই তালিকাভুক্ত হোক এবং সেজন্য গত জুলাইয়ে নতুন একটি স্টক
বোর্ড করা হয়েছে। প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো পাবলিক এন্টারপ্রাইজে রূপান্তরিত হওয়ার
ক্ষেত্রে যাতে ভালো পরিবেশ পায়,
সেজন্য এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে মূল ভূখণ্ড চীনের
তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোয় বিদেশী বিনিয়োগের সুযোগ বেশ সীমিত। যদিও বিদেশী
বিনিয়োগকারীদের জন্য দেশটির বাজার উন্মুক্তের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বেইজিং। খুচরা
বিনিয়োগকারীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত দেশীয় শেয়ারবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের
কাছ থেকে আরো অধিক স্থিতিশীল বিনিয়োগ আকৃষ্টের চেষ্টা চালাচ্ছে চীনা কর্তৃপক্ষ।
এখন সেখানে যদি মার্কিন বিনিয়োগ নিষিদ্ধ করা হয়, তাহলে আমেরিকান বিনিয়োগকারীরা
দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির গল্প থেকে বঞ্চিত হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্সের
অধ্যাপক মাইকেল পেটিস এক ই-মেইল বার্তায় বলেন,
চীনে মার্কিন বিনিয়োগ আটকানোর রাজনৈতিক কারণ
থাকলেও ওয়াশিংটনকে এটাও বুঝতে হবে যে তারা যা চাচ্ছে, তা
বাণিজ্যবৈষম্য তৈরি করবে।