নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ফকির নিটওয়্যারস লিমিটেডের কারখানায় কাজ করেন প্রায় সাড়ে ১১ হাজার শ্রমিক। ফকির গ্রুপের কারখানাটিতে মূলত টি-শার্ট, পোলো শার্টস ও ট্যাংক টপস তৈরি করেন শ্রমিকরা। গত বুধবার কারখানা ছুটি হয় নিয়মিত কর্মঘণ্টার বেশ আগেই। কারণ জানতে চাইলে একজন শ্রমিক বলেন, কারখানায় কাজ কম। এ কারণে কর্মঘণ্টা কমিয়ে এনেছেন উত্পাদন ব্যবস্থাপকরা। আগে প্রতিদিন যেখানে ৮-১০ ঘণ্টা মেশিন চলত, এখন চলে ৪-৬ ঘণ্টা।
পোশাক শিল্পের অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হা-মীম গ্রুপ। ৫০ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করছেন গ্রুপের পোশাক কারখানাগুলোয়। প্রডাকশন লাইন আছে সব মিলিয়ে সাড়ে তিন শতাধিক। এর ৩০ শতাংশ এখন বসিয়ে রাখতে হচ্ছে।
তৈরি পোশাক শিল্পের সংগঠন বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, বড় কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বৃহত্ উত্পাদন সক্ষমতা নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে ২০০-এর মতো প্রতিষ্ঠান। এ খাতের মোট কারখানার যা ১০ শতাংশ। এ ১০ শতাংশ বড় কারখানাই মূলত নিয়ন্ত্রণ করছে দেশের পোশাক খাতের সিংহভাগ ব্যবসা। কাজের সংকটে উত্পাদন সক্ষমতা অব্যবহূত রাখতে হচ্ছে এসব কারখানাকে। ফকির ও হা-মীম গ্রুপ ছাড়াও স্ট্যান্ডার্ড, আল-মুসলিম ও স্টারলিং গ্রুপের মতো প্রতিষ্ঠান রয়েছে এ তালিকায়।
১৯৮৪ সালে একটিমাত্র কারখানার মাধ্যমে পোশাক খাতে যাত্রা করে হা-মীম গ্রুপ। এরপর সাড়ে তিন দশকে গ্রুপটিতে যুক্ত হয়েছে আরো দুই ডজনের বেশি কারখানা। ৫০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক রফতানি আয়। কিন্তু বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সাড়ে তিনশর বেশি প্রডাকশন লাইনের ৩০ শতাংশ বসিয়ে রাখতে হচ্ছে।
সামগ্রিকভাবেই পোশাক শিল্পে ক্রয়াদেশ সংকট চলছে বলে জানান হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ক্রেতাদের চলে এমন কারখানার সবাই ক্রয়াদেশ সংকটে আছে। কারণ ওই অঞ্চলের দেশগুলোয় পোশাকের বিক্রি কমে গেছে। বিশেষ করে ওভেন পণ্যের ক্রয়াদেশ কমেছে ২০-৩০ শতাংশ। পাশাপাশি মূল্যও কম পাওয়া যাচ্ছে। ক্রেতারা পণ্য বিক্রির গতি-প্রকৃতি দেখে অর্ডার দেন। বিক্রি কমে যাওয়ায় তারা ক্রয়াদেশ কমিয়ে দিয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জে পোশাক কারখানাগুলো মূলত নিট পণ্য উত্পাদন করে। নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর প্রতিনিধিরা বলছেন, এ মুহূর্তে পোশাক শিল্প-কারখানাগুলো মোট উত্পাদন সক্ষমতার ৫০ শতাংশ ব্যবহার করছে। যদিও স্বাভাবিক সময়ে সক্ষমতার ৭৫ শতাংশ ব্যবহার হয়। অর্ডার সংকটে ছোট ও মাঝারি কারখানাগুলো বসে যাচ্ছে। বড়রা তুলনামূলক ভালো থাকলেও উত্পাদন সক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার করতে পারছে না কেউই।
বার্ষিক ১৪-১৫ কোটি ডলারের পোশাকপণ্য রফতানি করে ফকির নিটওয়্যার। প্রতিষ্ঠানটির সব কারখানাই নারায়ণগঞ্জে। তুলনামূলক কম কাজ থাকার কথা স্বীকার করেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফকির আখতারুজ্জামান। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, আমাদের উত্পাদন সামর্থ্য প্রতি মাসে ৬৫ লাখ পিসের। আমাদের ক্রেতারা মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই ৪০-৫০ লাখ পিসের ক্রয়াদেশ দিত। মৌসুম শেষ হওয়ার আগে পরবর্তী সময়ে তারা ক্রয়াদেশ আরো বাড়িয়ে দিত, যেটাকে তারা বলে ‘ইনক্রিজড কোয়ান্টিটি’। এখন এ মৌসুমে ইনক্রিজড কোয়ান্টিটি নেই। অনেক ক্রেতা তাদের মোট অর্ডারের পরিমাণও কমিয়ে দিয়েছে। আমার কারখানায় এখন ওভারটাইম চলার কথা কিন্তু নিয়মিত কর্মঘণ্টাও পুরোপুরি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। আমাদের প্রডাকশন লাইন ১০০টি। এ লাইনগুলোর ব্যবস্থাপনায় এখন পরিবর্তন আনতে হয়েছে। এখন ৫টা পর্যন্ত কাজ করিয়ে ছেড়ে দিচ্ছি শ্রমিকদের। কাজ যেহেতু নেই তাই দ্রুত কাজ শেষ করার চাপও দেয়া হচ্ছে না শ্রমিকদের।
গাজীপুর ও
- বাড়তি ভাড়ায় রেলভ্রমণ ৪ মে থেকে
- দুদিনের সফরে ঢাকায় কাতারের আমির
- সাবেক আইজিপি বেনজীরের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্ত করবে দুদক
- মালদ্বীপে নির্বাচনে ‘চীনপন্থী’ মোহাম্মদ মুইজ্জুর নিরঙ্কুশ জয়
- মাকে অভিভাবকের স্বীকৃতি দিয়ে নীতিমালা করতে হাইকোর্টের রুল
- এলএনজিতে ভর করে দুই দেশের বাণিজ্য পৌনে তিনশ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে