মহাসড়কের ঠিকাদাররাও রাজনৈতিক পরিচয়ের সুবিধা নিচ্ছেন

শামীম রাহমান

চলতি বছরের মে মাসে সওজ অধিদপ্তরের অধীনে চলমান কাজ ছিল প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকার।

দেশের অন্যতম বড় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন। বর্তমানে সড়ক জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের ৫৮৮ কোটি টাকার কাজ বাস্তবায়ন করছে প্রতিষ্ঠানটি। এর আগে রাজধানীর মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের একাংশের নির্মাণকাজও করেছিল নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আতাউর রহমান ভূঁইয়ার (মানিক) এই প্রতিষ্ঠান।

শুধু সওজ অধিদপ্তর নয়, বাংলাদেশ রেলওয়ের বাস্তবায়নাধীন সবচেয়ে বড় প্রকল্প দোহাজারী-কক্সবাজার-গুনদুম সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ রেলপথের নির্মাণের কাজও পেয়েছে তমা। রেলপথের দোহাজারী থেকে চকরিয়া পর্যন্ত অংশটি চীনের চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন বা সিআরইসির সঙ্গে যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে প্রতিষ্ঠানটি। কাজটির চুক্তিমূল্য হাজার ৬৮৭ কোটি ৯৯ লাখ ৩৪ হাজার টাকা।

সওজ অধিদপ্তরের ৮৫৪ কোটি টাকার কাজ বাস্তবায়ন করছে রাজশাহীর পরিবহন মালিক নেতা মঞ্জুর রহমান পিটারের মালিকানাধীন ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন। পিটার এক সময় রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের শিল্প বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে স্থানীয় আওয়ামী লীগে সরাসরি কোনো পদে না থাকলেও বেশ প্রভাব-প্রতিপত্তি রয়েছে তার। তার প্রতিষ্ঠানটির বাস্তবায়নাধীন কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম রাজশাহী-নওগাঁ আঞ্চলিক মহাসড়কের একাংশ।

যশোর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু। যশোর পৌরসভার মেয়রের দায়িত্বও পালন করছেন তিনি। এক সময় সওজ অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত ঠিকাদার ছিলেন। যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের একটি অংশের কাজ বাস্তবায়ন করেছেন তিনি। কিন্তু নিম্নমানের নির্মাণকাজের অভিযোগে তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান চাকলাদার কনস্ট্রাকশনকে কালো তালিকাভুক্ত করে সওজ অধিদপ্তর।

চলতি বছরের মে মাসে সওজ অধিদপ্তরের অধীনে চলমান কাজ ছিল প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকার। এসব কাজে নিয়োজিত ছিল ১০৭টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্ণধারদের অনেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছেন। কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে তারা রাজনৈতিক পরিচয়ের সুবিধা নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

রাজনৈতিক পরিচয়ে কাজ পাওয়া এসব ঠিকাদার নিম্নমানের কাজ করে থাকেন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক . সামছুল হক। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, আমাদের এখানে ঠিকাদারি ধারণাটি এমন যে এটা করলে রাতারাতি মোটা অংকের টাকা আয় হবে। ঠিকাদারের যদি প্রভাব থাকে, সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ থাকে, তাহলে সেই ঠিকাদার কাজ পান। এসব ঠিকাদার আবার নিজেরা কাজ করে না। নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন নিয়ে কাজটি অন্য কোনো ঠিকাদারের কাছে হস্তান্তর করে। এই যে কমিশনের একটা ভাগ-বাটোয়ারা হলো, তাতে কিন্তু আসল কাজের বারোটা বেজে যায়। আবার রাজনীতির সঙ্গে ঠিকাদার জড়িত থাকলে সে যতই অনিয়ম করুক না কেন, তার কোনো শাস্তি হয় না। এটা টেকসই উন্নয়নের একটা বড় বাধা।

ঢাকা-মাওয়া চার লেন মহাসড়কের একটি অংশের কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রানা বিল্ডার্স প্রাইভেট লিমিটেড। কাজটির চুক্তিমূল্য ৩০০ কোটি টাকা। একইভাবে ১৯৪ কোটি টাকায় কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজও করছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া বাগেরহাটে প্রায় ১৫০ কোটি টাকার সড়ক-সেতু-ফুটওভারব্রিজের কাজ এবং কুষ্টিয়া সড়ক বিভাগে আরো প্রায় শতকোটি টাকার কাজ পেয়েছে তারা। সওজ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, চলতি বছরের মে মাসে রানা বিল্ডার্সের ঠিকাদারিত্বে সংস্থাটির কাজ চলমান ছিল হাজার ১৭৬ কোটি টাকার।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) থেকে ২০১৩ সালের আগস্টে প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদার হিসেবে ট্রেড লাইসেন্স নেয় রানা বিল্ডার্স। পরের পাঁচ বছরেই সওজ অধিদপ্তরের শীর্ষ ১০ ঠিকাদারের তালিকায় চলে আসে প্রতিষ্ঠানটির নাম। রানা বিল্ডার্সের স্বত্বাধিকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলম। কুমিল্লার ব্যবসায়ী আওয়ামী লীগের সরাসরি রাজনীতি না করলেও এলাকায় সরকার সমর্থক

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন