হংকংয়ে চীনের সামরিক হস্তক্ষেপের আশঙ্কা জোরদার

বণিক বার্তা ডেস্ক

বিক্ষোভকারীদের দমনে হংকংয়ে চীনের সামরিক হস্তক্ষেপের আশঙ্কা আরো জোরদার হয়ে উঠেছে। হংকং সীমান্ত থেকে মাত্র সাড়ে চার কিলোমিটার দূরের এক স্টেডিয়ামে কয়েকশ সাঁজোয়া যান প্রস্তুত রেখেছে চীনা সেনাবাহিনী। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত এক পোস্টে চীনা সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, সীমান্তের অদূরবর্তী সৈন্য মোতায়েনের স্থান থেকে হংকংয়ের মূল শহরে হামলা চালাতে তাদের সময় লাগবে মাত্র ১০ মিনিট। খবর রয়টার্স।

গত দুই দিন ধরে শেনঝেন প্রদেশের সীমান্তবর্তী শেনঝেন বে স্পোর্টস সেন্টারে (সিল্কওয়ার্ম স্টেডিয়াম নামে পরিচিত) কুচকাওয়াজ ও মহড়া চালাচ্ছে চীনা সৈন্যরা। এদিকে হংকংয়ের বিক্ষোভকারীরা আগামীকালই এক বড় ধরনের সমাবেশের আয়োজন করেছে।

বিক্ষোভকারীদের দাবি, তাদের এ আন্দোলন সম্পূর্ণ যৌক্তিক ও অহিংস। তবে এর মধ্যে গত সপ্তাহে হংকংয়ের বিমানবন্দরে সংঘটিত এক অবস্থান ধর্মঘট শেষ পর্যন্ত সহিংসতায় মোড় নেয়। মূলত বিক্ষোভকারীদের প্রতি হংকংয়ের স্থানীয় জনগণের সমর্থনের মাত্রা প্রদর্শনের জন্যই আগামীকালের এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্যদিকে সিল্কওয়ার্ম স্টেডিয়ামে ক্যামোফ্লেজ পোশাক পরা চীনা সৈন্যদের কুচকাওয়াজের বিষয়টিকে হামলা-পূর্ববর্তী মহড়া হিসেবে উপস্থাপন করছেন অনেকেই। যদিও এখন পর্যন্ত চীনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ধরনের বলপ্রয়োগের ঘোষণা দেয়া হয়নি।

গত সপ্তাহে হংকং বিমানবন্দরে সংঘটিত সহিংসতার পর এতে অংশগ্রহণকারীদের ‘সন্ত্রাসীসম’ হিসেবে ঘোষণা দেয় চীন। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শেনঝেন স্টেডিয়ামে সৈন্যদের সমাবেশ শুরু হয়।

এদিকে চীনের কাছ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না আসায় বিষয়টি শেষ পর্যন্ত ১৯৮৯ সালের তিয়েনআনমেন স্কোয়ারের মতো ঘটনার দিকে মোড় নেবে না বলে প্রত্যাশা করছেন অনেকে। প্রসঙ্গত, ১৯৮৯ সালে বেইজিংয়ের তিয়েনআনমেন স্কোয়ারে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে চীনা সৈন্যদের হামলায় নিহত হয়েছিল অনেক মানুষ, যাদের প্রকৃত সংখ্যা আজও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সীমান্তের এত কাছাকাছি সৈন্য জড়ো করার মাধ্যমে বিক্ষোভ দমনে নিজের সক্ষমতা প্রদর্শন করতে চাইছে চীন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম উইচ্যাটে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) পক্ষ থেকে শেনঝেন বে স্পোর্টস সেন্টারের বাইরে জড়ো করা সামরিক ট্রাকের একটি ছবি পোস্ট করা হয়। ছবিটি পোস্ট করে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়, শেনঝেন উপসাগরের কাছে অবস্থিত সিল্কওয়ার্ম স্টেডিয়াম থেকে হংকং বিমানবন্দরের দূরত্ব মাত্র ৫৬ কিলোমিটার এবং সেখানে পৌঁছতে সময় লাগবে মাত্র ১০ মিনিট। পরবর্তী সময়ে পোস্টটি মুছে দেয়া হয়।

গত কিছুদিন ধরেই ওই এলাকায় মোতায়েনকৃত সৈন্য ও সাঁজোয়া যানের ছবি পোস্ট করে আসছে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম। স্যাটেলাইট ইমেজে দেখা গেছে, সেখানে সাঁজোয়া ও সৈন্যবাহী যানের সংখ্যা প্রায় ৫০০। এছাড়া সেখানে জলকামানও প্রস্তুত অবস্থায় দেখা গেছে।

এদিকে চীনের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়, হংকংয়ের ক্ষেত্রে ১৯৮৯ সালের ৪ জুনের রাজনৈতিক ঘটনাটির পুনরাবৃত্তি হবে না। কারণ চীন এখন আরো কার্যকর পন্থা অবলম্বনে সক্ষম।

তিয়েনআনমেন স্কোয়ারের ঘটনাটির কথা সাধারণত চীনের গণমাধ্যমে সেভাবে প্রকাশ পায় না। এমনকি দেশটির নাগরিকদের জন্য ওই ঘটনার কথা উচ্চারণও রীতিমতো ট্যাবু।

এদিকে বিক্ষোভকারীদের দমনে আরো কঠোর অবস্থান নিয়েছে হংকং পুলিশ। এখন পর্যন্ত ৭৪৮ বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়।

হংকংয়ের এবারের বিক্ষোভের ঘটনাটিকে ১৯৯৭ সালে যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে চীনের অধিকারে যাওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় সংকট হিসেবে দেখা যাচ্ছে। চীনের মূল ভূখণ্ডে বন্দি হস্তান্তর বিলের প্রস্তাব আনার পর থেকে এ বিক্ষোভের শুরু। এপ্রিলে শুরু হওয়া এ বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছে কয়েক লাখ মানুষ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন