পাঁচ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ ৩ পর্ষদই অকার্যকর

সাইফ সুজন

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থের সংকুলান এবং সার্বিক তদারকি ও চূড়ান্ত অনুমোদনের দায়িত্ব বোর্ড অব ট্রাস্টিজের ওপর। আর একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমের পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নের জন্য রয়েছে শীর্ষ তিনটি পর্ষদ—সিন্ডিকেট, একাডেমিক কাউন্সিল ও অর্থ কমিটি। আইনে এসব পর্ষদের কাজের বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। যদিও শীর্ষ এসব পর্ষদের সবক’টিই অকার্যকর হয়ে পড়েছে পাঁচটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বছরে কোনো পর্ষদেরই একটি সভাও অনুষ্ঠিত হয়নি ।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) তথ্যমতে, সিন্ডিকেট, একাডেমিক কাউন্সিল ও অর্থ কমিটি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে এমন পাঁচ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে—শরীয়তপুরের জেডএইচ সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব স্কলারস, এনপিআই ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, কুষ্টিয়ার রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রামের ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি। ইউজিসি প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭ সালে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেট, একাডেমিক কাউন্সিল ও অর্থ কমিটির কোনো সভাই অনুষ্ঠিত হয়নি।

এ বিষয়ে ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক ড. মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ পর্ষদগুলো কার্যত অচল। সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের একটি পর্ষদের মেয়াদ থাকে দুই বছর। তাহলে বছরে একটি সভাও যদি অনুষ্ঠিত না হয়, তাহলে ওই পর্ষদ বা কমিটির কোনো অস্তিত্ব থাকে? আমরা এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা করে বারবার সতর্ক করছি, লিখিতভাবে জানাচ্ছি। যখন কোনো সভা হয় সেখানে বলছি। তার পরও কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এ সভাগুলো নিয়মিত করছে না। গুরুত্বপূর্ণ এসব পর্ষদের সভা ছাড়া তারা কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করছে, তা খতিয়ে দেখা দরকার।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০-এর ১৭ ও ১৮ ধারায় সিন্ডিকেট বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, উপাচার্য সিন্ডিকেটের সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন। উপউপাচার্য, ট্রেজারার, উপাচার্য মনোনীত একাডেমিক কাউন্সিলের একজন সদস্য, একজন ডিন, একজন বিভাগীয় প্রধান, সরকার মনোনীত একজন শিক্ষানুরাগী বা শিক্ষাবিদ, বিওটি মনোনীত তিনজন সদস্য, ইউজিসি মনোনীত একজন অধ্যাপক নিয়ে এ পর্ষদ গঠন করতে হবে। এছাড়া রেজিস্ট্রার সিন্ডিকেটের সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন।

কার্যক্রম বিষয়ে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যাবলির পাশাপাশি সাধারণ ব্যবস্থাপনা পরিচালনা ও তত্ত্বাবধান সিন্ডিকেটের দায়িত্ব। শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ সৃষ্টি, বেতনক্রম নির্ধারণ, শিক্ষার্থী ফি নির্ধারণ ও নিয়োগসংক্রান্ত অনুমোদনের জন্য বিওটিতে পাঠানোর দায়িত্ব সিন্ডিকেটের। একাডেমিক কাউন্সিলের সুপারিশক্রমে পরীক্ষা ও ফলাফলের অনুমোদনের কাজও সিন্ডিকেটের। এছাড়া সব পরীক্ষার সনদপত্র প্রদান ও হেফাজত, বার্ষিক প্রতিবেদন প্রণয়ন, শিক্ষার্থী ভর্তিসহ বেশকিছু দায়িত্ব রয়েছে সিন্ডিকেটের।

অথচ এক বছরে সিন্ডিকেটের একটি সভাও অনুষ্ঠিত হয়নি পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়ে। সভা না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জেডএইচ সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার খোন্দকার তাহমিনা হক বলেন, মূলত উপাচার্য না থাকায় এ সভা আহ্বান করা যাচ্ছে না। কেননা উপাচার্যই সিন্ডিকেটের সভাপতি হবেন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদটি শূন্য রয়েছে, তাই সিন্ডিকেটের সভা হচ্ছে না। ২০১৮ সালে একটি সভা হলেও এ বছর এখনো কোনো সভা অনুষ্ঠিত হয়নি বলে জানান তিনি।

একাডেমিক কাউন্সিল বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ১৯ ও ২০ ধারায়। সেখানে বলা হয়েছে, এ পর্ষদটির সভাপতিও হবেন উপাচার্য। উপউপাচার্য ও সব অনুষদের ডিন, সব বিভাগীয় ও ইনস্টিটিউট প্রধান, প্রত্যেক বিভাগ থেকে জ্যেষ্ঠতা ও অনুক্রমণের ভিত্তিতে মনোনীত একজন অধ্যাপক, সিন্ডিকেট মনোনীত দুজন শিক্ষানুরাগী বা শিক্ষাবিদ, বিওটি মনোনীত তিনজন সদস্য এ পর্ষদে থাকবেন। এছাড়া রেজিস্ট্রার এ পর্ষদটিরও সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন।

কার্যক্রম বিষয়ে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ভর্তি, শিক্ষাদান, শিক্ষা ও পরীক্ষার মান উন্নয়ন, পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যসূচি প্রণয়ন, গবেষণার বিষয় নির্ধারণের দায়িত্ব এ পর্ষদের। যদিও গুরুত্বপূর্ণ এ পর্ষদটির কোনো সভাও অনুষ্ঠিত হয়নি এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ২৫ ও ২৬ ধারায় বলা হয়েছে অর্থ কমিটি বিষয়ে। সেখানে বলা হয়েছে, বিওটি মনোনীত তিনজন সদস্য অর্থ কমিটিতে থাকবেন, এর মধ্যে একজন সদস্য সভাপতি হবেন। এছাড়া উপাচার্য, ট্রেজারার, উপাচার্য মনোনীত একজন বিভাগীয় প্রধান, সিন্ডিকেট মনোনীত দুজন অভিজ্ঞ প্রতিনিধি এ কমিটিতে থাকবেন। এ কমিটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো বাজেট প্রণয়ন।

অর্থ কমিটির সভা না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে দি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব স্কলারসের অর্থ ও হিসাব বিভাগের উপপরিচালক বলেন, ২০১৭ সালে আমাদের অর্থ কমিটি গঠিত হয়নি। তাই কোনো সভাও অনুষ্ঠিত হয়নি। এখন নিয়মিত সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন