ঈদের পরও কমছে না আদা-রসুনের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক চট্টগ্রাম ব্যুরো

কোরবানির ঈদ ঘিরে এক-দেড় মাস ধরে ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে মসলাপণ্য আদা ও রসুনের বাজার। ঈদের পর পণ্য দুটির চাহিদা কমেছে ভোক্তা পর্যায়ে। কিন্তু পাইকারি বাজারে এখনো কমেনি এগুলোর দাম। আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং দর স্বাভাবিক থাকলেও আমদানিকারকদের কারসাজিতে দেশীয় বাজারে পণ্য দুটির দাম কমছে না বলে মনে করছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। 

জানা গেছে, কোরবানি ঈদের ছুটি কাটিয়ে এখনো পুরোদমে বিকিকিনি শুরু হয়নি ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে। গত বুধবার থেকে কিছু দোকানপাট খোলা শুরু হলেও বাজারে ক্রেতা আসছে কম। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আজ থেকে আবারো সরগরম হয়ে উঠবে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজার।

এদিকে ঈদের ছুটি শেষে গত বৃহস্পতিবার পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ প্রতি কেজি আমদানীকৃত চীনা আদা বিক্রি হয়েছে ১৬০ টাকায়। ঈদের আগের সপ্তাহে বাজারে একই মানের আদা বিক্রি হয়েছে ১৬০-১৮০ টাকায়, যা ঈদের দুই সপ্তাহ আগে ছিল ১২০-১৪০ টাকার মধ্যে।

একই সময়ে ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে আমদানীকৃত চীনা রসুনের বাজারও। ঈদের দুই সপ্তাহ আগে খাতুনগঞ্জে প্রতি কেজি চীনা রসুন বিক্রি হয়েছে ১২০-১৩০ টাকার মধ্যে, যা কোরবানির ঈদের আগ মুহূর্তে ১৪০-১৫০ টাকায় পৌঁছে। কোরবানির ঈদ শেষে বর্তমানে চীনা রসুন ১৪০-১৪৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

পণ্য দুটির ঊর্ধ্বমুখী দামের বিষয়ে খাতুনগঞ্জের কাঁচা পণ্য ব্যবসায়ী মিফতাহুল বারী বণিক বার্তাকে বলেন, কোরবানির ঈদ ঘিরে মসলাপণ্য হিসেবে পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের চাহিদা এবং বিক্রি বেড়েছিল। কিন্তু ওই বাজারে পণ্যগুলোর সরবরাহ চাহিদার চেয়ে কিছুটা কম ছিল। চাহিদা বৃদ্ধি পেলেও সরবরাহ ঘাটতির সুযোগে পাইকারি ব্যবসায়ীরা পণ্যগুলোর দাম বাড়িয়ে দেন। এরপর ঈদ শেষে পণ্য দুটির চাহিদা কমেছে ভোক্তা পর্যায়ে। কিন্তু আমদানিকারকরা কারসাজি করে পণ্য দুটির দাম না কমিয়ে বরং বাড়িয়ে দেয়ার পাঁয়তারা করছেন।

এ ব্যবসায়ীর মতে, কোরবানির ঈদের আগে বেশির ভাগ আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীর আদা-রসুনের সরবরাহ শেষ হয়ে গেছে। বর্তমানে বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছে আদা-রসুন মজুদ রয়েছে। ফলে ওই কয়েকজন ব্যবসায়ী বেশি মুনাফা করতে অস্বাভাবিকভাবে পণ্য দুটির দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।

কাঁচা পণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স আল মদিনা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. জুনায়েদ বণিক বার্তাকে বলেন, দীর্ঘদিন দেশীয় বাজারে আদা-রসুনের দর কম থাকায় ব্যবসায়ীরা পণ্য দুটির আমদানি করেছেন কম। কিন্তু কোরবানির ঈদ ঘিরে দেশীয় বাজারে পণ্য দুটির চাহিদা বৃদ্ধি পায়। এতে চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম থাকার সুযোগে ব্যবসায়ীরা পণ্যটির দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এমনকি ঈদের পরও সেই দাম বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। অথচ এক-দেড় মাস ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে বিশেষ করে চীনে আদা ও রসুনের বুকিং দর নিম্নমুখী।

এদিকে আমদানীকৃত চীনা আদা-রসুনের প্রভাবে কয়েক বছর ধরে দেশী আদা-রসুনের চাহিদা কমে আসছে। ফলে মৌসুমের পর পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জসহ চট্টগ্রামের বাজারে দেশী আদা-রসুনের সরবরাহ নেই বললেও চলে। বর্তমানে খাতুনগঞ্জের মাত্র কয়েকটি আড়ত ও দোকানে দেশী আদা-রসুনের সরবরাহ রয়েছে। এসব দোকানে গতকাল দেশী আদা কেজিপ্রতি ১০০-১১০ টাকা এবং দেশী রসুন ১০০-১২০ টাকা দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

দেশী আদা-রসুনের সরবরাহ কম হওয়ার বিষয়ে মেসার্স গ্রামীণ বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী বলয় কুমার পোদ্দার বণিক বার্তাকে বলেন, চট্টগ্রামে দেশী রসুনের চাহিদা ও বিক্রি কম। কারণ আমদানীকৃত চীনা আদা-রসুন দেশী আদা রসুনের তুলনায় অপেক্ষাকৃত বড় আকারের এবং দেখতে সুন্দর। ফলে এ অঞ্চলের ভোক্তাদের কাছে দেশী রসুনের চেয়ে চীনা আদা-রসুনের কদর বেড়েছে। অথচ চীনা আদা-রসুনের চেয়ে দেশী আদা-রসুনের গুণগত মান অনেক ভালো।

পাইকারি বাজারের প্রভাবে ঈদের আগে থেকে খুচরা বাজারেও অস্বাভাবিক বেড়েছে আদা-রসুনের দাম। কয়েক দিন ধরে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চীনা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৬৫-১৮৫ টাকায় এবং চীনা আদা বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৪৫ টাকার মধ্যে। যেখানে সপ্তাহ থেকে ১০ দিন আগেও পণ্য দুটি সর্বোচ্চ ১২০-১৩০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন