ওয়াশিংটনের শুল্ক পেছানো পর্যাপ্ত নয়, পাল্টা প্রস্তুতি বেইজিংয়ের

বণিক বার্তা ডেস্ক

চীনের ৩০ হাজার কোটি ডলারের পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দুই দেশের প্রেসিডেন্টের মধ্যকার চুক্তির লঙ্ঘন। সম্প্রতি কিছু ইলেকট্রনিকস পণ্যে শুল্ক পেছানোর সিদ্ধান্ত পর্যাপ্ত নয় এবং শিগগিরই পাল্টা পদক্ষেপে যাচ্ছে বেইজিং। এছাড়া সম্প্রতি হংকংয়ে চলমান বিক্ষোভের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধকে যুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্যকে উড়িয়ে দিয়েছে বেইজিং। খবর ব্লুমবার্গ ও ডন।

গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্প এক টুইটে জানান, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে শিগগিরই টেলিফোনে কথা বলতে যাচ্ছেন তিনি। তবে বৃহস্পতিবার চীনের স্টেট কাউন্সিল ট্যারিফ কমিটি এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে জানায়, ৩০ হাজার কোটি ডলারের পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের মাধ্যমে আলোচনায় সমাধানের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে চীন কোন দিকে এগোচ্ছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানায়নি তারা।

চলতি বছরের শুরুতে আলোচনায় স্থবিরতা দেখার পর গত জুনে জাপানে আয়োজিত জি২০ সম্মেলনে এক বৈঠকে মিলিত হন ট্রাম্প ও শি। তখন উভয় পক্ষ আলোচনা ফের শুরু করার ব্যাপারে সম্মত হয়। কিন্তু চলতি মাসের শুরুতে ট্রাম্প প্রশাসন এক ঘোষণায় জানায়, আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে চীনের ৩০ হাজার কোটি ডলারের পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। এতে চীন থেকে আমদানীকৃত প্রায় সব পণ্য অতিরিক্ত শুল্কের মুখোমুখি হয়। তবে চলতি সপ্তাহে সেলফোন, ল্যাপটপ ও অন্যান্য ভোগ্যপণ্যে শুল্ক পেছানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ট্রাম্প প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্রে হলিডে সিজনে কেনাকাটা যেন মার্কিন ভোক্তাদের কাছে চাপ হিসেবে আবির্ভূত না হয়, সেজন্য এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ওই পণ্যগুলোতেও শুল্ক কার্যকর হবে।

বৃহস্পতিবার এক টুইটে ট্রাম্প শি জিনপিংয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন, তিনি যেন হংকংয়ের আন্দোলনের ইতি টানতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা করেন। এতে হংকং সমস্যার প্রীতিকর ও আলোকিত সমাধান হবে বলে মনে করেন তিনি।

তবে পৃথক এক বিবৃতিতে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র আশা প্রকাশ করেন, যুক্তরাষ্ট্র হংকং ইস্যুকে চীন সরকারের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার হিসেবে ছেড়ে দেবে।

ফক্স বিজনেসকে বৃহস্পতিবার ট্রাম্প জানান, চীনের সঙ্গে চুক্তি ‘আমাদের শর্তে’ হতে হবে। পরবর্তী সময়ে নিউজার্সির মরিসটাউনে সাংবাদিকদের কাছে ট্রাম্প বলেন, বাণিজ্য ইস্যুতে শির সঙ্গে শিগগিরই টেলিফোন আলাপ হচ্ছে। তারা কিছু একটা করতে চায় বলে জানান ট্রাম্প। তবে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি।

বিষয়সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্র বলছে, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে উভয় পক্ষের মধ্যস্থতাকারীরা ফের আলোচনা করবেন এবং আগামী সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র সফরের পরিকল্পনা অপরিবর্তিত রেখেছেন চীনা প্রতিনিধিরা।

কিছু পণ্যে মার্কিন শুল্ক স্থগিত করা যে পর্যাপ্ত নয়, চীনের বিবৃতিতে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বলে মনে করেন চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা ও কূটনীতিক ঝু শিয়াওমিং। চীনের অবস্থান হচ্ছে, নতুন আর কোনো পণ্যে শুল্ক আরোপ নয় এবং চীনের পাল্টা পদক্ষেপ শুধু ‘শুল্কেই সীমাবদ্ধ থাকবে না’ বলে মনে করেন তিনি।

চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির মুখপাত্র গ্লোবাল টাইমস পত্রিকার এডিটর ইন চিফ হিউ শিজিনও একই মনোভাব প্রকাশ করেন। বৃহস্পতিবারের ঘোষণার কিছুটা আগে এক টুইটে তিনি আশা প্রকাশ করেন, গত জুনে ওসাকার বৈঠকে ট্রাম্প ও শি জিনপিংয়ের সমঝোতাকে উভয় পক্ষ শ্রদ্ধা জানাবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীন বড় আকারে কৃষিপণ্য আমদানি করবে কিনা, সে ব্যাপারে সন্দিহান শিজিন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন