পিরিয়ডকালীন শারীরিক ও মানসিক সুস্থতায় কী খাবেন?

ফিচার ডেস্ক

একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ নারীর জীবনে পিরিয়ড একটি স্বাভাবিক ঘটনা। মাসের চার থেকে সাত দিনব্যাপী এ সময়টায় নারীরা কিছু শারীরিক ও মানসিক সমস্যার মধ্য দিয়ে যান। যেমন অতিরিক্ত পেটব্যথা, পিঠব্যথা, রক্তক্ষরণের কারণে শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা দেয়। এ সময় অনেকেই অরুচির সমস্যায় ভোগেন। ফলে প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব দেখা দিতে পারে শরীরে। এসব সমস্যা সমাধানে সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। কিছু খাবার রয়েছে, যা পিরিয়ডকালীন শারীরিক অবসাদ ও সমস্যা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে—

আয়রনজাতীয় খাবার

পিরিয়ডের সময় আয়রনসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ খুবই জরুরি। মাছ, মাংস, ডিম, কলিজা, কচুশাক, পুঁইশাক, ডাঁটাশাক, ফুলকপির পাতা, ছোলাশাক, ধনেপাতা, তরমুজ, কালো জাম, খেজুর ইত্যাদি খাবারে প্রচুর আয়রন পাওয়া যায়। শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণে চর্বি ছাড়ানো লাল মাংস খাওয়া যেতে পারে। অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে খাদ্যতালিকায় পরিমিত পরিমাণে লাল মাংস রাখতে হবে। পাশাপাশি রাখতে হবে লেবু ও সালাদ। লাল মাংস ছাড়াও সবুজ শাকসবজিতে রয়েছে প্রচুর আয়রন, যা শরীরের ক্ষয় পূরণে সহায়তা করে। আয়রন ও ‘বি’ ভিটামিনসহ এতে রয়েছে পর্যাপ্ত ফাইবার।

ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার

ক্যালসিয়ামজাতীয় খাবার পিরিয়ডের উপসর্গগুলো কমাতে সহায়তা করে। এ সময় অনেকেই পেটব্যথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশের ব্যথায় ভোগেন। তাই পিরিয়ডকালে ঈষদুষ্ণ দুধ খাওয়া জরুরি। দুগ্ধজাত খাবার ও ডিম রাখতে হবে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণে।

আঁশজাতীয় খাবার

পিরিয়ডকালে ফলের রস না খেয়ে গোটা ফলটাই খেয়ে নিন। কারণ ফলের রসে আঁশ পাওয়া যায় না। অন্যদিকে ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণে আঁশ থাকে। আঁশজাতীয় খাবার হজমশক্তি উন্নত করে।

পর্যাপ্ত প্রোটিন

এ সময়ে খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত প্রোটিন থাকা জরুরি। রাখতে হবে ডাল, ডিম, মাছ ও মাংস। প্রোটিনজাতীয় খাবার রক্তে শর্করার পরিমাণ ঠিক রাখে। এগুলো পিরিয়ড চলাকালীন শরীরের ক্ষয় পূরণ করে এবং পেটব্যথা কমাতেও সহায়তা করে। এ সময় খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন ছোট-বড় মাছ। খুব ভালো হয় সামুদ্রিক মাছ খেলে। এতে থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ ও ফ্যাটি অ্যাসিড।

ভিটামিন ‘সি’

একটা ভুল ধারণা রয়েছে যে, পিরিয়ডের সময় টক ফল খাওয়া উচিত নয়। কিন্তু এ সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ খাওয়া উচিত। শরীরের আয়রন ঠিকমতো শোষণের জন্য ভিটামিন ‘সি’ খাওয়া খুবই জরুরি। তাই এ সময়ে খাদ্যতালিকায় পেয়ারা, আমড়া, আমলকী, লেবু, জলপাই, জাম্বুরা, পাকা টমেটো, কামরাঙ্গা, পাকা পেঁপে, আনারস ইত্যাদি রাখতে হবে।

ভিটামিন ও খনিজ

পিরিয়ডকালে বিকালের স্ন্যাকস হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন বিভিন্ন ধরনের বাদাম। বাদামে ভিটামিন ও খনিজ উপাদান রয়েছে, যা পিরিয়ডের সময় শরীরের উপকার সাধন করে। তবে অতিরিক্ত লবণ দিয়ে রোস্ট করা বাদাম খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এগুলো শরীরের উপকারের বদলে খারাপই বেশি করে। চীনাবাদাম, কাজুবাদাম, আমন্ড, পেস্তা, আখরোট ইত্যাদি পিরিয়ডজনিত শরীরের ঘাটতি পূরণে বেশ উপকারী। এছাড়া মিষ্টিকুমড়ার বীজ, কলা, মিষ্টি আলু ইত্যাদি ম্যাগনেশিয়াম ও পটাশিয়ামের খুব ভালো উৎস। এসব খাবার খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ম্যাগনেশিয়াম ও পটাশিয়ামযুক্ত খাবার পিরিয়ডকালে পেশি টান ও পেটব্যথা কমাতে সাহায্য করে। কলা পটাশিয়াম ও ভিটামিনের খুব ভালো উৎস। এটি পিরিয়ডকালে বিষণ্নতা ও খিটখিটে ভাব দূর করতেও সহায়তা করে। এছাড়া খেতে হবে ভিটামিন বি৬ সমৃদ্ধ খাবার। ব্রোকলি, টমেটো, লেবু, কমলা ইত্যাদিতে রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন বি৬। এগুলো বিষণ্নতা দূর করে।

পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খেতে হবে

উপরের খাবারগুলো ছাড়াও পিরিয়ডের সময় পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। কারণ পিরিয়ডের সময় শরীর থেকে প্রচুর পানি বেরিয়ে যায়। পানির এ ঘাটতি পূরণ করতে সারা দিনে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। পাশাপাশি এড়িয়ে যেতে হবে সফট ড্রিংকস, অতিরিক্ত ক্যাফেইন ও অস্বাস্থ্যকর পানীয়।

 

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট

ফিচার ডেস্ক

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন