শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় জাতির পিতাকে সঙ্গরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

যথাযথ মর্যাদায় গতকাল দেশব্যাপী জাতীয় শোক দিবস পালিত হয়েছে। জাতির পিতার প্রতি শোকার্ত বাঙালির বিনম্র শ্রদ্ধা ও হূদয় নিংড়ানো ভালোবাসার ফুলে ফুলে ভরে ওঠে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি।

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গতকাল সকালে ধানমন্ডিতে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। সকাল সাড়ে ৬টায় জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সবার শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য খুলে দেয়া হয়। এ সময় মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ, তাঁতী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি হাজারো মানুষ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান।

বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাইদ খোকন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়।

সকাল ৬টার মধ্যেই অগণিত মানুষের পদচারণে ভরে ওঠে ৩২ নম্বর সড়ক। হাতে কালো ব্যানার ও বুকে কালো ব্যাজ ধারণ করে সেখানে উপস্থিত হয় নারী-পুরুষ, স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী, শিশু-কিশোরসহ সর্বস্তরের মানুষ। হালকা বৃষ্টি হলেও লাইনে দাঁড়িয়ে সবাই পরম শ্রদ্ধায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে জাতির জনককে স্মরণ করেন। সকাল ৭টা থেকে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানানো শুরু করেন। শোকাবহ ভাবগাম্ভীর্যের মাঝেও জোরালো কণ্ঠে উচ্চারিত হয়, ‘বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করতে হবে।’

রাজধানী ছাড়াও সারা দেশে এবং দেশের বাইরে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনগুলো বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদনসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে শোক দিবস পালন করে। শোক দিবস উপলক্ষে দিনব্যাপী কোরআন  তেলাওয়াত, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ প্রচার, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, কালো ব্যাজ ধারণ, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, মিলাদ মাহফিল, রক্তদান কর্মসূচি, আলোচনা সভা, আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়।

শোক দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার ভোরে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দলের ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন ইউনিট কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। শোক দিবসে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বেসরকারি ভবন ও বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোয় জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে একদল বিপথগামী সেনা কর্মকর্তা মুক্তযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে। সেদিন বিদেশে থাকায় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রাণে বেঁচে যান।

শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে শোক দিবসের বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা সরাসরি সম্প্রচারসহ বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার এবং সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। বেসরকারি চ্যানেলগুলোও শোক দিবসে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচার করেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন