মিয়ানমারের জাতিগত বিদ্রোহীদের হামলায় সেনাসদস্যসহ নিহত ১৫

বণিক বার্তা ডেস্ক

মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় একটি প্রদেশে সেনাবাহিনীর একটি অভিজাত কলেজসহ বেশ কয়েকটি লক্ষ্যবস্তুতে জাতিগত বিদ্রোহীরা হামলা চালিয়েছে। গতকাল এ হামলায় অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এক সেনা মুখপাত্র। খবর রয়টার্স।

সেনাবাহিনীর মুখপাত্র তুন তুন নিই জানান, শান রাজ্যের পিইন উ লিউন এলাকার ডিফেন্স সার্ভিসেস টেকনোলজিক্যাল একাডেমিতে হামলার দায় স্বীকার করেছে দ্য নর্দান অ্যালায়েন্স নামে আঞ্চলিক সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর একটি জোট। অভিজাত এ সামরিক একাডেমিতে সেনাবাহিনীর প্রকৌশলীরা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। অঞ্চলটির আরো চারটি স্থানেও হামলা চালানো হয়েছে। এসব হামলার দায় স্বীকার করেছে উত্তরাঞ্চলীয় সশস্ত্র জোটটি।

সেনাবাহিনীর ওই মুখপাত্র আরো জানান, নাউং চো শহরে বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধ করছিল সেনারা। বিদ্রোহীরা গোকটুইন উপত্যকার ওপারে আরেকটি সেতু ধ্বংস করেছে এবং শহরের মাদক পুলিশের দপ্তরে অগ্নিসংযোগ করেছে।

অগ্নিনির্বাপণ বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শান রাজ্যের সবচেয়ে বড় শহর লাশিওর মহাসড়কের টোল গেটেও হামলার ঘটনা ঘটেছে।

টেলিফোনে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তুন তুন নিই বলেছেন, ‘তারা গোকটুইনে সাত সেনাসদস্যকে এবং টোল গেটে দুই সেনা, এক পুলিশ সদস্য ও এক বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে।’ সেনা কলেজে এক বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে বিধ্বস্ত ভবন এবং দগ্ধ ও বুলেটে ঝাঁজরা গাড়ির ছবি দেখতে পাওয়া গেছে।

দশকপুরনো বিরোধ সাম্প্রতিক এ হামলার ঘটনায় তিক্ততর রূপ নিয়েছে। জাতিগত সংখ্যালঘুদের বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে বেশ কয়েকটি সংগঠন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

মান্দালয় শহরের কিছুটা দূরে অবস্থিত মিলিটারি টাউন পিইন উ লিউন এর আগে কোনো হামলার শিকার হয়নি। এর আগে বেশির ভাগ হামলা মূলত গ্রামীণ অঞ্চলে সংঘটিত হয়েছে।

বিদ্রোহী ও সেনাবাহিনীর মধ্যে কয়েক মাসব্যাপী অস্ত্রবিরতি গত জুনে শেষ হলেও তা ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল।

নর্দান অ্যালায়েন্স জোটের সদস্য তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, জাতিগত সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় সাম্প্রতিক সেনা হামলার জবাবে এ হামলা চালানো হয়েছে।

টেলিফোনে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে মং আইক কিয়াও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় বার্মিজ সেনাবাহিনীর ক্রমবর্ধমান হামলার জবাবে আমরা যুদ্ধক্ষেত্র পরিবর্তন করে এ হামলা চালিয়েছি।

তিনি আরো বলেন, অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন সরকার শান্তি কামনা করে। কিন্তু সেনাবাহিনী যদি এতে অংশ না নেয় তাহলে কিছুই হবে না।

মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়া বেসামরিক নেতা সু চির নেতৃত্বাধীন সরকারের জন্য বড় একটি প্রতিবন্ধক।

২০১৬ সালের শেষের দিকে নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর জাতিগত সশস্ত্রগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনী ও বেসামরিক সরকারের শান্তি আলোচনায় গুরুত্ব দেয়ার ব্যাপারে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলেন নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী সু চি।

কিন্তু উত্তরাঞ্চলীয় কাচিন ও শান রাজ্যে সংঘর্ষ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর দমন-নিপীড়নের ফলে আন্তর্জাতিক মহল থেকে গভীর চাপের মুখে রয়েছে মিয়ানমার।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন