বৈশ্বিক মন্দার শঙ্কায় দাম কমেছে জ্বালানি তেলের

বণিক বার্তা ডেস্ক

আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম কমেছে। মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) এক প্রতিবেদনে বিশ্বের বৃহৎ অর্থনীতিগুলোয় মন্দা ভাবের খবর প্রকাশের পর নিম্নমুখী হয়ে ওঠে পণ্যটির বাজার। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্যটির মজুদ টানা দ্বিতীয় সপ্তাহের মতো বৃদ্ধির তথ্য প্রকাশের পর এ দরপতন হয়ে ওঠে আরো অবশ্যম্ভাবী। খবর মার্কেট ওয়াচ।

নিউইয়র্ক মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জে (নিমেক্স) বুধবার জ্বালানি তেলের মার্কিন বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম কমেছে ব্যারেলে ১ ডলার ৮৭ সেন্ট। আগের তুলনায় ৩ দশমিক ৩ শতাংশ কমে এদিন এখানে পণ্যটির বাজার স্থির হয় প্রতি ব্যারেল ৫৫ ডলার ২৩ সেন্টে। অন্যদিকে লন্ডনের ইন্টার কন্টিনেন্টাল এক্সচেঞ্জে (আইসিই) এদিন পণ্যটির দাম কমেছে ৩ শতাংশ বা ব্যারেলে ১ ডলার ৮২ সেন্ট। আগের দিনের চেয়ে ৩ শতাংশ কমে আইসিইতে এদিন পণ্যটির সর্বশেষ মূল্য দাঁড়ায় প্রতি ব্যারেল ৫৯ ডলার ৪৮ সেন্টে।

চীন ও ইউরোপের অর্থনীতির শ্লথগতির খবরে বেশ সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। অন্যদিকে মার্কিন ট্রেজারি ইল্ডের (সরকারি ঋণের সুদহার) গতিও এখন নিম্নমুখী। ফলে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণপত্রের মধ্যকার স্প্রেড নেমে এসেছে ঋণাত্মক ১ বেসিস পয়েন্টে (দশমিক শূন্য ১ শতাংশ)।

এ বিষয়ে নিউইয়র্কভিত্তিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান টাইকে ক্যাপিটাল অ্যাডভাইজর্সের ম্যানেজিং মেম্বার তারিক জহির বলেন, সবার চোখ এখন একটি দিকেই নিবদ্ধ। সেটি হলো, কখন ২/১০ (দুই ও ১০ বছর মেয়াদি) বন্ডের ইনভারশন (যখন স্বল্পমেয়াদি বন্ডের সুদহার দীর্ঘমেয়াদি বন্ডের সুদহারের তুলনায় বেশি হয়) ঘটে। এ ধরনের ইনভারশন-পরবর্তী এক বছরের মধ্যে মন্দা ঘটার ইঙ্গিতবাহী। 

এর আগে দুই ধরনের বাজার আদর্শেই টানা চারদিন ধরে দাম বেড়েছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের। এর মধ্যে মঙ্গলবার পণ্যটির দরবৃদ্ধি হয়েছিল সবচেয়ে বেশি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনা পণ্য আমদানিতে নতুন করে শুল্কারোপের জন্য নির্ধারিত দিন পিছিয়ে দেয়ার পাশাপাশি এ বিষয়ে বেইজিংয়ের সঙ্গে আলোচনার ঘোষণা দেয়ার কারণে ওইদিন বাজারে পণ্যটির দরবৃদ্ধির গতি বেশ জোরালো হয়ে ওঠে। ফলে বাণিজ্যযুদ্ধ নিয়ে চলমান অচলাবস্থা কাটার ইঙ্গিত দেখতে পেয়েছিলেন অনেকেই। একই সঙ্গে এর মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক জ্বালানি চাহিদা নিয়ে চলমান শঙ্কা কেটে যাবে বলে মনে করছিলেন তারা।

কিন্তু জ্বালানি তেলের বাজারে নতুন করে হতাশার সঞ্চার করেছে চীন ও ইউরোপের অর্থনৈতিক শ্লথতার খবর। চীনে গত জুলাইয়ে শিল্প উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি হয়েছে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। যেখানে জুনে এ প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। একই সময়ে দেশটিতে খুচরা বিক্রির প্রবৃদ্ধি হয়েছে গত বছরের জুলাইয়ের তুলনায় ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। অথচ আগের মাসেও এ হার ছিল ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। সামনের দিনগুলোয়ও দেশটির শিল্প উৎপাদন ও খুচরা বিক্রির প্রবৃদ্ধিতে এ শ্লথ ভাব বজায় থাকবে বলে পূর্বাভাস রয়েছে।

অন্যদিকে ইউরোস্ট্যাট বলছে, ইউরো অঞ্চলে চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) প্রবৃদ্ধির হার শ্লথ হয়ে এসেছে দশমিক ২ শতাংশে। এ সময় অঞ্চলটিতে শিল্প উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে ১ দশমিক ৬ শতাংশ। এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ জার্মানিতে এ সময় প্রবৃদ্ধির হার হ্রাস পেয়েছে আগের প্রান্তিকের তুলনায় দশমিক ১ শতাংশ। 

বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মন্দার পদধ্বনির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ মজুদ বৃদ্ধির খবরটিও এদিন অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দরপতনে বড় ভূমিকা রেখেছে। মার্কিন এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (ইআইএ) তথ্য অনুযায়ী, ৯ আগস্ট শেষ হওয়া সপ্তাহে দেশটিতে জ্বালানি তেলের মজুদ বেড়েছে ১৬ লাখ ব্যারেল। এর আগের সপ্তাহেও দেশটিতে পণ্যটির মজুদ বেড়েছিল ২৪ লাখ ব্যারেল। যদিও এ সময় দেশটিতে পণ্যটির মজুদ কমবে বলে এক বিশেষজ্ঞ জরিপের ভিত্তিতে পূর্বাভাস দিয়েছিল এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল প্লাটস।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন