বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কায় এশিয়ার শেয়ারবাজারে পতন

বণিক বার্তা ডেস্ক

একটি বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কায় বিনিয়োগকারীরা ইকুইটি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ায় গতকাল এশিয়ার শেয়ারবাজারে পতন দেখা গেছে। এর আগে চলতি বছরের সবচেয়ে বড় পতন ঘটে ওয়াল স্ট্রিটের ডাও জোনস সূচকে। খবর এএফপি, রয়টার্স ও বিবিসি।

গত বুধবার চীন ও জার্মানির শোচনীয় অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান বিশ্ব অর্থনীতির হোঁচট খাওয়ার আভাস দিয়েছে। এর পাশাপাশি শীর্ষ অর্থনীতি দুটির বাণিজ্যযুদ্ধ, ব্রেক্সিট অনিশ্চয়তা ও ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা পুরো বিশ্বের অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে জিডিপি সংকোচনের কথা জানিয়েছে জার্মানি। অন্যদিকে জুলাইয়ে চীনের শিল্প প্রবৃদ্ধি ১৭ বছরের নিম্নে দাঁড়িয়েছে।

গতকাল সকালের লেনদেনের শুরুতে জাপানের প্রধান নিক্কেই ২২৫ সূচক প্রায় ২ শতাংশ হারায়। পরে ১ দশমিক ২ শতাংশ পতন দিয়ে সকালের লেনদেন শেষ করে সূচকটি। হংকংয়ের হাং সেং সূচক ১ দশমিক ৪ শতাংশ পতন দিয়ে লেনদেন শুরু করলেও পরে কিছুটা গতি ফিরে পায় সূচকটি।

এর বাইরে এশিয়ার শেয়ারবাজারগুলোর মধ্যে সাংহাই ও জাকার্তা দশমিক ৭ শতাংশ এবং সিডনি ২ শতাংশের বেশি হারায়। সিঙ্গাপুর হারায় দশমিক ৯ শতাংশ।

জাপানের ওকাসান অনলাইন সিকিউরিটিজ এক নোটে জানিয়েছে, মার্কিন শেয়ারবাজারের তীব্র পতনের প্রভাবে জাপানের শেয়ারবাজারও নিম্নমুখী রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্যযুদ্ধ নিয়ে উদ্বেগ ও বৈশ্বিক অর্থনীতির মন্থরগতির কারণে বিশ্বব্যাপী শেয়ারবাজারগুলো গতি হারাচ্ছে। এর মধ্যে বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারের প্রধান তিনটি সূচকের সবগুলোই প্রায় ৩ শতাংশ হারায়। ইউরোপীয় শেয়ারবাজারেও পতন দেখা যায়।

ইন্ডিয়ানাভিত্তিক হরাইজন ইনভেস্টমেন্ট সার্ভিসেসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা চাক কার্লসন বলেন, এটা একটা সম্পূর্ণ নেতিবাচক দিন, খুব বেশি ইতিবাচক কিছু নেই। আমরা আয় মৌসুমের বাইরে রয়েছি এবং বাজারগুলো খবর দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। এ মুহূর্তে বাজার প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে আছে এবং সম্ভবত এ অবস্থা অব্যাহত থাকবে। এ পরিস্থিতি ‘লেবর ডে’ পর্যন্ত চলতে থাকবে বলে মনে করছেন তিনি। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর সেপ্টেম্বরের প্রথম সোমবার ‘লেবর ডে’ পালন করা হয়।

বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের দুই বছর ও ১০ বছর মেয়াদি বন্ড ইল্ডে ধস দেখা যায়, যা ২০০৭ সালের জুনের পর প্রথমবার। সে সময় ইল্ড বিপর্যয়ের কয়েক মাস পরেই ২০০৮-০৯ সালের বৈশ্বিক আর্থিক মন্দা দেখা দেয়, যা বহু বছর বাজারগুলোকে অসহায় করে রেখেছিল। এদিকে গত ৫০ বছরে প্রত্যেকটি মন্দার আগে মার্কিন বন্ড ইল্ড বিপর্যয়ের মুখে পড়তে দেখা গেছে।

এ প্রসঙ্গে কার্লসন বলেন, এবার বিষয়টি ভিন্ন হতে পারে। কারণ যখন ১৫ ট্রিলিয়ন ডলারের বৈশ্বিক সরকারি ঋণ ঋণাত্মক ইল্ডে থাকে, তখন সেটা নতুন কিছু। এমনকি ইল্ড বিপর্যয় যদি সত্যি মন্দার পূর্বাভাস হয়, তার মানে এই নয় আগামীকালই তা ঘটতে চলেছে।

বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ পরিমাপের সিবিওই সূচক ৪ দশমিক ৫৮ পয়েন্ট বেড়ে ২২ দশমিক ১০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। বুধবার ডাও জোনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজ ৮০০ দশমিক ৪৯ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ হারিয়ে ২৫ হাজার ৪৭৯ দশমিক ৪২ পয়েন্ট, এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ৮৫ দশমিক ৭২ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ হারিয়ে ২ হাজার ৮৪০ দশমিক ৬ পয়েন্ট ও নাসডাক কম্পোজিট ২৪২ দশমিক ৪২ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ হারিয়ে ৭ হাজার ৭৭৩ দশমিক ৯৪ পয়েন্ট দিয়ে লেনদেন শেষ করে।

এদিকে দ্রুত সুদহার না কমানোয় বুধবার ফেডারেল রিজার্ভের প্রধান জেরোম পাওয়েলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। জেরোম পাওয়েল ‘তাল’ হারিয়ে ফেলেছেন বলে মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প।

অন্যদিকে বৈশ্বিক অর্থনীতির এ নিম্নগতি রুখতে ফেড ও অন্যান্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো যথেষ্ট পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হবে কিনা সে সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বেশ কিছু পর্যবেক্ষক।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন