মুকেশ আম্বানির ‘সতর্ক পদক্ষেপ’ কীভাবে অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত

বণিক বার্তা ডেস্ক

ভারতের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি মুকেশ আম্বানি কি আকাশে মেঘের ঘনঘটা দেখছেন? শেয়ারহোল্ডারদের উদ্দেশে দেয়া একটি বিবৃতিতে মনে হচ্ছে না তিনি এ নিয়ে চিন্তিত। তবে তার কথার চেয়ে কাজের মধ্যে অন্য ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে।

সোমবার শেয়ারহোল্ডারদের সঙ্গে বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যানকে আশাবাদে ভরপুর মনে হয়েছে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ভারতের জিডিপি ৮০ শতাংশ বাড়িয়ে ৫ ট্রিলিয়ন ডলারে নিয়ে যেতে তিনি শুধু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রূপকল্পকে সমর্থনই করেননি, বরং কয়েক সরেস এগিয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে তা ১০ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি মনে করেন এটা শুধু সম্ভবই নয়, বরং ‘অবশ্যম্ভাবী’।

তবে তার এমন আশাবাদের সঙ্গে বাস্তব পরিস্থিতি যেন কথা বলছে না। যদি পরিস্থিতি এত সুন্দরই হতো, তাহলে রিফাইনিং, পেট্রোকেমিক্যাল, টেলিকম ও রিটেইল খাতে সাত বছরে ১০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগে ব্রেক কষছেন কেন আম্বানি? ব্যাপক বিনিয়োগ তত্পরতার পর কিছুটা বিরতি স্বাভাবিক হলেও কেন তিনি রিলায়েন্সকে আগামী ১৮ মাসের মধ্যে শূন্য ঋণের কোম্পানিতে পরিণত করতে চাইছেন? ভারতের বৃহত্তম এ কোম্পানি ও তার সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশ্বজুড়ে ঋণ দেয়া শতাধিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য এটি কী বার্তা দিচ্ছে? সর্বোপরি রিলায়েন্সের এমন ঋণভার কমাতে সম্পদ বিক্রি (ডিলিবারেজিং) ভারতের জন্য কী অর্থ বহন করছে?

২০১৬ সালের অক্টোবরে এ বিষয়ে কিছুটা ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল, যখন ভারতের রেলওয়ে ও রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডসহ দেশটির ১ হাজার ২৫০টি তালিকাভুক্ত শীর্ষ কোম্পানির ১৩ থেকে ১৪ শতাংশ বিনিয়োগ ছিল রিলায়েন্সের। সে সময় যে জিনিসটা খুব অল্প কয়েকজনই ভেবেছে, তা হলো ফোরজি মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু, আজীবন ফ্রি ভয়েস কল রেট চালু এবং সস্তায় ডাটা প্রদানের মাধ্যমে আম্বানির টেলিকম খাতে উচ্চাশার ইতির সূচনা শুরু হলো। রিলায়েন্স জিওর উদ্দেশ্য ছিল ভারতের ১০০ কোটি মোবাইল গ্রাহকের প্রায় অর্ধেককে নিজেদের ভাগে আনা। এ উচ্চাশা পূরণে রিলায়েন্স জিওকে অব্যাহত বিনিয়োগ করে যেতে হয়েছে।

বর্তমানে ৩৪ কোটি গ্রাহকের কাছে পৌঁছাতে পেরেছে রিলায়েন্স জিও। তবে কয়েক প্রান্তিকের মধ্যে আমরা হয়তো শেষ খেলাটা দেখব। ভারতের অন্যান্য কোম্পানি ঋণ ও আত্মবিশ্বাসহীনতায় ধুঁকছে, যা গ্রাহকদের ওপর চাপ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

জিও নেটওয়ার্কে বিনিয়োগচক্র সম্পন্ন হয়েছে বলে শেয়ারহোল্ডারদের জানিয়েছেন মুকেশ আম্বানি। অন্যান্য ইউনিটেও বিনিয়োগের খুব অল্প জায়গাই রয়েছে। আম্বানি পরিবারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত রিলায়েন্সের রিফাইনিং ও পেট্রোকেমিক্যাল খাতের ২০ শতাংশের শেয়ার সৌদি আরামকোর কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে, যদিও ঋণ শোধের চেয়ে অনেকটা কৌশলগত কারণে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ২০ শতাংশ শেয়ার ক্রয়ে ৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলার নির্দিষ্ট মূল্যের চেয়ে কিছুটা চড়া বলেই মনে করছেন ডেভিড ফিকলিং নামে ব্লুমবার্গের এক কলাম লেখক। সৌদি আরবের উদ্বৃত্ত তেল অন্য দেশে পাঠিয়ে তা যদি জেট ফুয়েলে রূপান্তর করা যায়, তাহলে রিলায়েন্সের হাতে এত বড় অংকের অর্থ তুলে দিতে পিছপা হওয়ার কথা নয় তাদের। রিলায়েন্স রিফাইনারিতে দিনপ্রতি পাঁচ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল জেট ফুয়েল ও পলিমারে রূপান্তর করা হবে।

এদিকে শেয়ারহোল্ডারদের কাছে মুকেশ আম্বানি যে বার্তা দিচ্ছেন, তা হলো শূন্য নিট ঋণে তারা উচ্চ মুনাফা (ডিভিডেন্ড), বোনাস ও অন্যান্য সুযোগ পাবেন। কিন্তু রিলায়েন্স থেকে প্রাপ্ত মুনাফা পুনরায় বিনিয়োগ করতে পারবেন না বিনিয়োগকারীরা। একটা জিনিস স্পষ্ট ভারতের অর্থনীতিতে শ্লথগতি গভীর হচ্ছে। ডিজিটাইজেশনে কোম্পানির অতিরিক্ত মনোযোগে রিলায়েন্সে অপ্রত্যাশিত বিঘ্ন ঘটাছে।

ভারতের অর্থনীতি নিয়ে দেশটির বেশ কয়েকজন ব্যবসায়িক নেতা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আম্বানি হয়তো তাদের মতো প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন না, কিন্তু তার সতর্ক পদক্ষেপে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে সামনে হয়তো কোনো বিপর্যয় অপেক্ষা করছে।               সূত্র: ব্লুমবার্গ

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন