বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ সেলফোন অপারেটর রিলায়েন্স জিও

বণিক বার্তা ডেস্ক

রিলায়েন্স জিও ইনফোকম গ্রাহক সংখ্যার বিবেচনায় ভারতের টেলিযোগাযোগ খাতের বৃহৎ এবং বৈশ্বিক টেলিযোগাযোগ খাতের দ্বিতীয় বৃহৎ সেলফোন অপারেটরের তকমা দখলে নিয়েছে। ভারতের টেলিযোগাযোগ খাতে ভোডাফোন-আইডিয়া লিমিটেড ও ভারতী এয়ারটেলকে পেছনে ফেলে শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে প্রতিষ্ঠানটি। বৈশ্বিক টেলিযোগাযোগ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে গ্রাহক সংখ্যার বিবেচনায় এখন জিওর চেয়ে এগিয়ে রয়েছে চীনের রাষ্ট্রীয় সেলফোন অপারেটর চায়না মোবাইল কমিউনিকেশন্স করপোরেশন। খবর ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস।

রিলায়েন্স জিওর প্যারেন্ট কোম্পানি রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের (আরআইএল) ৪২তম বার্ষিক সাধারণ সভায় চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুকেশ আম্বানি জানান, ৩৪ কোটি গ্রাহক নিয়ে এখন ভারতের বৃহত্তম সেলফোন অপারেটরে পরিণত হয়েছে রিলায়েন্স জিও। ভারতে কার্যক্রম শুরুর মাত্র তিন বছরের মধ্যে এ কৃতিত্ব অর্জন করেছে জিও। শুধু তা-ই নয়, স্থানীয় বাজারে দ্রুত গ্রাহক প্রবৃদ্ধির সুবাদে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ সেলফোন অপারেটরের তকমাটিও এখন জিওর দখলে।

আরআইএলের চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানি জানান, আগামী ১ জানুয়ারি থেকে রিলায়েন্স জিও গোটা ভারতে ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) সেবা চালু করতে যাচ্ছে। যেখানে ব্রডব্যান্ড সার্ভিসও থাকবে। পাশাপাশি ফোরজি সেবা উন্নত করায় এরই মধ্যে বড় অংকের বিনিয়োগ সম্পন্ন করেছে। এর ফলে ভারতজুড়ে পৌঁছাবে জিওর ফোরজি সেবা।

তিনি বলেন, রিলায়েন্স জিওর সুবাদে ভারত এখন বিশ্বের ডাটাকেন্দ্রিক দেশে পরিণত হয়েছে। আমাদের টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক সংখ্যা শিগগিরই ৫০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেয়ায় জিওর গ্রাহক দ্রুত বাড়ছে। জিওর সঙ্গে প্রতি মাসে এক কোটি গ্রাহক যুক্ত হচ্ছে।

রিলায়েন্স জিওর প্রবেশ ভারতের টেলিযোগাযোগ খাতে তীব্র প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করেছে। শুরু থেকেই আগ্রাসী ব্যবসায় নীতি অনুসরণ করে আসা জিওর কারণে চাপে রয়েছে ভোডাফোন-আইডিয়া ও ভারতী এয়ারটেলের মতো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী সেলফোন অপারেটরগুলো।

মুকেশ আম্বানির ভাষ্যে, রিলায়েন্স জিওর গ্রাহক গত জুন শেষে ৩৪ কোটির মাইলফলক অতিক্রম করেছে। একই সময় ভারতের টেলিযোগাযোগ খাতে দীর্ঘদিন আধিপত্য বিস্তার করে থাকা ভারতী এয়ারটেলের গ্রাহক কমেছে প্রথমবার। ভারতী এয়ারটেল এরই মধ্যে টাটা টেলিসার্ভিসেসকে অধিগ্রহণ করেছে। শিগগিরই প্রতিষ্ঠানটির ১ কোটি ১৪ লাখ ৭০ হাজার গ্রাহককে নিজেদের সেবার আওতায় আনবে প্রতিষ্ঠানটি।

টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অব ইন্ডিয়ার (টিআরএআই) তথ্যমতে, গত মে-জুনে ভারতী এয়ারটেল ও ভোডাফোন আইডিয়ার বহু গ্রাহক তাদের সেবা ব্যবহার ছেড়েছে। ওই সময় উভয় প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক যথাক্রমে ১৫ ও ৫৭ লাখ করে কমেছে।

টিআরএআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতী এয়ারটেল সক্রিয় গ্রাহক সংখ্যার বিবেচনায় এখনো রিলায়েন্স জিওর চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। এয়ারটেলের মোট ওয়্যারলেস গ্রাহক সংখ্যার ৯৯ দশমিক ৮৬ শতাংশই সক্রিয়ভাবে সেবা ব্যবহার করছে। অন্যদিকে রিলায়েন্স জিওর মোট সংযোগের বিপরীতে সক্রিয়ভাবে সেবা ব্যবহার করছে ৮২ দশমিক ৯৯ শতাংশ গ্রাহক।

টিআরএআইয়ের তথ্যমতে, রিলায়েন্স জিও কয়েক মিলিয়ন ইন-অ্যাক্টিভ সিম কার্ড ব্যবহারকারীকে নিজেদের ফোরজি নেটওয়ার্কে যুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। এয়ারটেল ও ভোডাফোন-আইডিয়া এখন ইন-অ্যাক্টিভ সিম কার্ডধারীদের নিজেদের ফোরজি সেবার সঙ্গে যুক্ত করার মাধ্যমে গ্রাহকপ্রতি গড় রাজস্ব বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।

২০১৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর কার্যক্রম শুরু করে রিলায়েন্স জিও। কার্যক্রম শুরুর ছয় মাস যেতে না যেতেই স্থানীয় বাজারে ১০ কোটি ছাড়িয়ে যায় এর গ্রাহক। অর্থাৎ ওই সময় গড়ে প্রতিদিন ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৫০০-এর বেশি মানুষ জিওর নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়। রিলায়েন্স জিও বিনা মূল্যের বিভিন্ন ওয়েলকাম অফার নিয়ে কার্যক্রম শুরু করে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বিনা মূল্যে ভয়েস কল, ডাটা ও এসএমএস সার্ভিস। এসব অফারের কারণে শুরুর দিন থেকেই জিওর গ্রাহক দ্রুত বাড়তে থাকে।

বিশ্লেষকদের ভাষ্যে, রিলায়েন্স জিওর কার্যক্রম দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে। যে কারণে খুব অল্প সময়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ সেলফোন অপারেটরের তকমা দখলে নিতে সমর্থ হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। জিও খুব অল্প সময়ে গ্রাহক প্রবৃদ্ধি বিবেচনায় সোস্যাল মিডিয়া জায়ান্ট ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও স্কাইপকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরুর মাত্র ২৬ দিনের মাথায় জিওর গ্রাহক ১ কোটি ৬০ লাখ ছাড়িয়ে যায়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন