আজ জাতীয় শোক দিবস

বণিক বার্তা ডেস্ক

আজ ১৫ আগস্ট। জাতীয় শোক দিবস। জাতির পিতার ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকী। বাঙালি জাতির জন্য বেদনাবিধুর একটি দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে জাতি হারিয়েছে তার শ্রেষ্ঠ সন্তান, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ধানমন্ডি লেকের পাড়ের যে বাড়িটি ছিল বাংলার মানুষের প্রাণের উৎস, পঁচাত্তরের অভিশপ্ত দিনটিতে সেই বাড়িতেই ঘাতকের বুলেটের আঘাতে খুন হন বঙ্গবন্ধু।

জাতির জনককে হত্যার মধ্য দিয়ে নিজেদের মুখোশও উন্মোচন করেছিল বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যে থাকা খন্দকার মোশতাকের মতো চক্রান্তকারীরা। এ হত্যাকাণ্ড ছিল তাদের নীলনকশা বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপ। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরদিন বিবিসির এক বিশ্লেষক মন্তব্য করেছিলেন, ‘বুলেট হয়তো শেখ মুজিবকে হত্যা করতে পেরেছে, কিন্তু বাংলার মানুষের সঙ্গে তার যে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক, তা কখনই ছেদ করতে সক্ষম হবে না।’ ঘটেছেও তা-ই। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুর প্রয়াণ হলেও আজ তিনি বেঁচে আছেন বাঙালির হূদয়ে। বিদেহী বঙ্গবন্ধু আরো শাণিত হয়ে বারবার ফিরে এসেছেন প্রজন্মের চেতনায়। কবি সুফিয়া কামাল লিখেছেন, ‘এই বাংলার আকাশ, বাতাস, সাগর, গিরি ও নদী/ ডাকিছে তোমারে বঙ্গবন্ধু ফিরিয়া আসিতে যদি/ হেরিতে এখনও মানব হূদয়ে তোমার আসন পাতা/ এখনও মানুষ স্মরিছে তোমারে, মাতা পিতা বোন ভ্রাতা।’ ১৫ আগস্ট ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ হারিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশু শেখ রাসেলসহ পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল।

পৃথিবীর এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর অনুজ শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ, মেয়ে বেবি ও সুকান্ত, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শেখ ফজলুল হক মনি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি এবং আবদুল নাঈম খান রিন্টু, কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ সদস্য ও ঘনিষ্ঠজন। এ সময় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে রক্ষা পান।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্টের সব শহীদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।

জাতীয় শোক দিবস সামনে রেখে এ মাসের প্রথম দিন থেকেই আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করছে। এ উপলক্ষে তথ্য ভবনে পক্ষকালব্যাপী এক আলোকচিত্র প্রদর্শনী চলছে।

বরাবরের মতো এবারো সরকারিভাবে দিবসটিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শোক দিবসে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বেসরকারি ভবনসহ বিদেশের বাংলাদেশ মিশনগুলোয় জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা ও আলোচনা সভা। এছাড়া দিনটি উপলক্ষে আজ থাকছে সরকারি ছুটি।

ভোরে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পুুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন। এ সময় সশস্ত্র বাহিনী গার্ড অব অনার প্রদান করবে। এছাড়া ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। পরে সকাল সাড়ে ৭টায় প্রধানমন্ত্রী বনানী কবরস্থানে জাতির পিতার পরিবারের শাহাদত বরণকারী সদস্য ও অন্য শহীদদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ফাতেহা পাঠ এবং দোয়া করবেন।

সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এছাড়া সেখানে ফাতেহা পাঠ, সশস্ত্র বাহিনীর গার্ড অব অনার প্রদান এবং মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি সমাধিস্থলে বিশেষ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সারা দেশের মসজিদগুলোয় বাদ জোহর বিশেষ মোনাজাত এবং মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সুবিধাজনক সময়ে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বেসরকারি টেলিভিশন ও রেডিওতে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করা হবে।

জাতীয় দৈনিক ও সাময়িকীতে ক্রোড়পত্র প্রকাশ, পোস্টার মুদ্রণ ও বিতরণ এবং বঙ্গবন্ধুর ওপর প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গ্রোথ সেন্টারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জাতীয় শোক দিবসের পোস্টার স্থাপন করা হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও জাতীয় কর্মসূচির সঙ্গে সংগতি রেখে যথাযোগ্য মর্যাদায় শোক দিবসের আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে।

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠন টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিস্থলে এবং ধানমন্ডি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা করবে। দেশের সব সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় শোক দিবস পালনের জন্য জাতীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন