রোহিঙ্গা শিবিরে আনন্দ-বেদনার ঈদ

বণিক বার্তা প্রতিনিধি কক্সবাজার

প্রতি বছর লাখ টাকার গরু কিনে কোরবানি দিতেন মিয়ানমারের মংডু শহরের বলিবাজারের বাসিন্দা আলী হোসেন (৭২)। কিন্তু দুই বছর ধরে তার ঈদ কাটছে কক্সবাজারের টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরে। জীবন বাঁচানোর তাগিদে রাখাইন থেকে টেকনাফে আশ্রয় নেয়া আলী হোসেন এখন ঈদের খুশি ভাগ করে নেন ক্যাম্পের অন্য শরণার্থীদের সঙ্গে।

শুধু আলী হোসেন নন, তার মতো একই অবস্থা অন্যান্য রোহিঙ্গা শিবিরের অসংখ্য শরণার্থীর।

বড়দের মন খারাপ থাকলেও ঈদ উপলক্ষে খুব সকালে নতুন জামা পরে ঘুরতে বের হয় রোহিঙ্গা শিশু জানি আলম (৮) ও মনির আলম (১০)। তারা জানায়, ঈদের সারা দিন তারা ঘুরে বেড়াবে। আইসক্রিম আর চকোলেট খাবে, দোলনায় চড়বে।

সরেজমিন টেকনাফের লেদা, উখিয়ার কুতুপালং, লম্বাশিয়া, বালুখালী ও হাকিমপাড়া রোহিঙ্গা শিবিরে দেখা গেছে, শিশুরা সকাল থেকেই মেতেছে ঈদের আনন্দে। তরুণরা নতুন পাঞ্জাবি, লুঙ্গি, টুপি পরে মসজিদের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। অতিথি আপ্যায়নে কিছু পরিবারে সেমাই ও পিঠার আয়োজন দেখা গেছে।

গত সোমবার কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩০টি আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গারা ঈদের নামাজ আদায় করেন। সকাল ৮টায় রোহিঙ্গা শিবিরে সবচেয়ে বড় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয় কুতুপালং ডি-৪ মারকদ মসজিদে। চার হাজার ধারণক্ষমতা হলেও সাড়ে ছয় হাজারের বেশি রোহিঙ্গা ওই মসজিদে একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেন।

কুতুপালং শিবিরের দলনেতা নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘আমরা নিরাপদে রাখাইনে ফিরতে চাই। আল্লাহর কাছে এ প্রার্থনাই করেছি। বাংলাদেশের মানুষ আমাদের আশ্রয় দিয়ে মানবিকতার পরিচয় দিয়েছে।’

কুতুপালং শিবিরের বাসিন্দা আরিজা বেগম বললেন, ‘ঈদের দিন ভালো কোনো খাবার জোটেনি। ছোট তিনটি সন্তানকে কোনো নতুন কাপড় দিতে পারিনি।’ এ রকম কোরবানির মাংস না পাওয়ার আক্ষেপ শোনা গেছে আরো অনেক রোহিঙ্গার কণ্ঠে।

এ বিষয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ আবুল কালাম জানান, এবার ১ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা পরিবারের মধ্যে কোরবানির মাংস বিতরণ করা হয়েছে। প্রতিটি পরিবারকে দুই কেজি মাংস দেয়া হয়েছে। অন্তত পাঁচ হাজার পশু কোরবানি করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং ক্যাম্প ইনচার্জদের তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গাদের মধ্যে মাংস বণ্টন করা হয়েছে। সরকার ও বেশকিছু বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা মিলেই এসব পশু কোরবানি দিয়েছে।

তিনি জানান, কক্সবাজারের ৩০টি রোহিঙ্গা শিবিরে ১ হাজার ২০০টি মসজিদ ও ৬৪২টি নুরানি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব মসজিদ ও নুরানি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঈদের জামাত আদায় করেন রোহিঙ্গারা।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আশরাফুল আফসার বলেন, এ বছর কোরবানির ঈদে রোহিঙ্গাদের মধ্যে মাংস বিতরণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন ছাড়াও রোহিঙ্গা শিবিরে অবস্থানরত বিভিন্ন এনজিও, সংগঠন এবং ব্যক্তিগতভাবেও কোরবানির মাংস বিতরণ করা হয়।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টে কোরবানি ঈদের মাত্র কয়েক দিন আগে রাখাইনের ৩০টি নিরাপত্তা চৌকিতে একযোগে হামলার ঘটনা ঘটে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর শুরু করে ব্যাপক নিপীড়ন। প্রাণ বাঁচাতে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। বর্তমানে উখিয়া-টেকনাফের ৩০টি শিবিরে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। তবে জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখ ৮৫ হাজার ৫৫৭।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন