কাঁচা চামড়া রফতানির প্রভাব নিয়ে এলএফএমইএবি : হুমকির মুখে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য-পাদুকা রফতানি বৈচিত্র্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ থেকে কাঁচা চামড়া ও ওয়েট ব্লু সরাসরি বিদেশে রফতানি নিষিদ্ধ। এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে বলে আভাস পেয়েছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। এর প্রতিক্রিয়ায় তারা বলছেন, এ সিদ্ধান্তের প্রভাবে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য-পাদুকা রফতানি খাতে বৈচিত্র্য আনার বিষয়টি হুমকির মুখে পড়বে। লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) পক্ষ থেকে গতকাল এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সম্ভাব্য এ সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া জানানো হয়।

এলএফএমইএবি বলছে, বাংলাদেশ রফতানি নীতি আদেশ অনুযায়ী, যেকোনো ধরনের কাঁচা চামড়া ও ওয়েট ব্লু সরাসরি বিদেশে রফতানি নিষিদ্ধ। বাংলাদেশের লেদার গুডস ও ফুটওয়্যার শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বিপুল পরিমাণ তৈরি চামড়ার কথা বিবেচনায় নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ-সংক্রান্ত আদেশটির বাস্তবায়ন বহাল রেখেছে। মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সারা দেশে কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখ, যা গত বছর থেকে ৩ লাখ বেশি। এসব কোরবানির পশুর চামড়া থেকে উৎপাদিত ফিনিশড লেদার, জুতা, স্যান্ডেল, ব্যাগসহ অন্যান্য চামড়াজাত পণ্য দেশের শিল্পোৎপাদন ও রফতানি খাতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে।

সম্ভাব্য এ সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে সংগঠনটি বলছে, সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনায় রফতানি বাজার বহুমুখীকরণের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। চামড়াজাত পণ্যের রফতানি ও বিদেশী বিনিয়োগের ধারা সচল রাখার প্রধান উপকরণই হচ্ছে দেশীয় কাঁচামাল। সহজ ও সুলভ কাঁচামালের নিরন্তর জোগানকে ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানি ও বিনিয়োগ খাত। কাঁচা চামড়া থেকে ওয়েট ব্লু তৈরি করলে তাতে মূল্য সংযোজন হয় মাত্র ১০ শতাংশ। কিন্তু ফিনিশড লেদারে এ মূল্য সংযোজিত হয় ৭০-৮০ শতাংশ। সুতরাং, ওয়েট ব্লু রফতানি সরকার গৃহীত মূল্য সংযোজন নীতির পরিপন্থী হবে এবং মূল্য সংযোজনের যে ধারায় বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে; এর ফলে তার অগ্রযাত্রা বাধাপ্রাপ্ত হবে।

সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক কাজী রওশন আরা বলেন, আমরা জানতে পেরেছি সরকার কাঁচা চামড়া রফতানির সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এ ধরনের ভাবনাকেই হুমকি মনে করছি আমরা।

সংগঠনটির ভাষ্য অনুযায়ী, রফতানি বৈচিত্র্য আনতে এবং বাজারে নিজের স্বকীয় অবস্থান ধরে রাখতে প্রতিবেশী দেশ ভারতে ওয়েট ব্লু এবং ট্যানিংকৃত ক্রাস্ট চামড়া রফতানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে বৈশ্বিক রফতানি প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে দেশের চামড়া শিল্পের স্থানীয় কাঁচামাল নিজস্ব শিল্পোৎপাদন প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করতে হবে এবং দেশের বাজারে এর সহজলভ্যতা সুনিশ্চিত করতে হবে।

এলএফএমইএবি মনে করছে, রফতানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হলে দেশী কাঁচামালের কোনো বিকল্প নেই। ওয়েট ব্লু রফতানির সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প মালিকরা, যাদের উৎপাদন প্রক্রিয়া সরাসরি দেশী কাঁচা চামড়ার ওপর নির্ভরশীল। একজন ক্ষুদ্র বা মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তার পক্ষে কাঁচামাল তিন গুণ মূল্যে বিদেশ থেকে আমদানি করা এবং তা থেকে পণ্য উৎপাদনের খরচ বহন করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া কঠিন। এছাড়া কাঁচামাল আমদানির দোলাচলে লেদার গুডস ও ফুটওয়্যার রফতানি প্রক্রিয়া আরো দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এছাড়া ওয়েট ব্লু রফতানিতে বাংলাদেশের পরিবেশগত দিক দিয়েও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে এলএফএমইএবি। সংগঠনটি বলছে, কাঁচা চামড়া থেকে ওয়েট ব্লু তৈরিতে বর্জ্য তৈরি হয় মূল উৎপাদন প্রক্রিয়ার ৭০-৮০ শতাংশ, যা ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব মূলত বাংলাদেশের ওপর বর্তাবে। পরিবেশ রক্ষায় সিইটিপি নির্মাণ ও হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি স্থানান্তরে সরকারের বিপুল বিনিয়োগের সুফল শিল্প মালিকদের বদলে মূলত ওয়েট ব্লু ক্রেতা দেশগুলোই ভোগ করবে।

সংগঠনটির ভাষ্যমতে, বাংলাদেশের লেদার ফুটওয়্যার সম্প্রতি ১ বিলিয়ন ডলার রফতানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সফল হয়েছে। ওয়েট ব্লু রফতানির সিদ্ধান্তে এ শিল্পের বিদেশী ক্রেতাদের মধ্যে কাঁচামাল সংকটের শঙ্কা তৈরি করবে। এতে করে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা দেশের উৎপাদন খাতে বিনিয়োগের উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন। দেশের রফতানিনির্ভর শিল্পটির জন্য এ ধরনের সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী হবে এবং কোনো অবস্থাতেই ওয়েট ব্লু বা কাঁচা চামড়া রফতানির অনুমতি দেয়া সমীচীন হবে না।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন