চট্টগ্রাম নগরীর ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকায় নিজস্ব বিপণিবিতান শাহ আমানত সিটি করপোরেশন সুপার মার্কেটের গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায় দোকান নির্মাণ করছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। আয় বাড়াতে করপোরেশনের নেয়া এ উদ্যোগে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিপণিবিতানটির ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায় দোকান হলে রাস্তায় গাড়ি পার্কিং বেড়ে যাবে। এতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হবে নগরীর ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা আমতল-জুবিলী রোডে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) অনুমোদন ছাড়াই নগরীর আমতল এলাকায় ১৯৯৫ সালে চারতলা এ বিপণিবিতান নির্মাণ করে চসিক। তত্কালীন মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর আমলে নির্মিত এ বিপণিবিতানে প্রায় ২৫০টি দোকান রয়েছে। কম্পিউটার, টেলিভিশন, বৈদ্যুতিক পাখা, মুঠোফোনসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক সামগ্রীর জন্য পরিচিত এ বিপণিবিতান। সম্প্রতি বিপণিবিতানটির নিচতলার ২ হাজার ২৫০ বর্গফুট জায়গা শামীম করপোরেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে ৯ কোটি টাকায় বরাদ্দ দেয় করপোরেশন। পাঁচ বছরের জন্য বরাদ্দ পেয়ে প্রতিষ্ঠানটি এখন সেখানে দোকান নির্মাণ করছে। ফলে গাড়ি রাখার জায়গা সংকুচিত হয়ে পড়েছে। পার্কিং স্পেসের পাশাপাশি বিপণিবিতানের দোতলায় খালি জায়গাও দোকানের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
শামীম করপোরেশনকে দোকানের জন্য স্পেস বরাদ্দ দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন সিটি করপোরেশনের ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা এখলাছ উদ্দিন আহম্মদ। তিনি বলেন, শামীম করপোরেশনের কাছ থেকে উন্নয়ন চার্জ বাবদ ৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা নেয়া হয়েছে। তারা নিজ উদ্যোগে দোকান নির্মাণ করবে। তবে দোকানগুলোর প্রতি বর্গফুট ১৫ টাকা হারে করপোরেশনকে ভাড়া দিতে হবে। আর পাঁচ বছর পরপর চুক্তি নবায়ন করা হবে।
গতকাল দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নির্মাণ শ্রমিকরা মার্কেটের নিচতলায় দোকানের নির্মাণকাজ করছেন। খালি জায়গায় আটটি দোকানের জন্য ইটের দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণকাজের কারণে এ জায়গায় গাড়ি রাখা যাচ্ছে না।
নিচতলা ও দোতলার খালি জায়গায় বরাদ্দ দেয়ায় ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা। যদিও প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না তারা। বরাদ্দ বাতিলের আবেদন জানিয়ে সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের সঙ্গে দেখাও করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু মেয়র তাদের আবেদন রাখেননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিপণিবিতানের একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, তারা গাড়ি রাখার জায়গা এবং দোতলার উন্মুক্ত পরিবেশের কারণে এ বিপণিবিতানে দোকান ইজারা নিয়েছিলেন। কিন্তু ২০ বছর পর এসে করপোরেশন নকশা না মেনেই নতুন করে দোকান নির্মাণের জন্য স্পেস বরাদ্দ দিয়েছে। এতে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের গাড়ি রাখার সুযোগ কমে যাবে। আবার দোতলায় যে আলো-বাতাস ছিল, তা আর আসবে না। কখনো আগুন ও ভূমিকম্পের মতো দুর্ঘটনা ঘটলে বিপদ নেমে আসবে এতে।
শাহ আমানত সিটি করপোরেশন সুপার মার্কেটের বিপরীত পাশে রয়েছে সিটি করপোরেশন পরিচালিত দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আরেক পাশে রয়েছে নগরের বড় খুচরা ও পাইকারি বাজার রেয়াজউদ্দিন বাজার। এ বাজারে ২৫০টির বেশি দোকান রয়েছে। একই এলাকায় অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী নিউ মার্কেট ও হকার্স মার্কেটও। এসব বিপণিবিতানে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষের সমাগম ঘটে।
বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এ এলাকায় শাহ আমানত সুপার মার্কেট, নিউ মার্কেট ও গোলাম রসুল মার্কেটে গাড়ি রাখার সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে শাহ আমানত সুপার মার্কেটে গাড়ি রাখার জায়গা সংকুচিত করে দোকান নির্মাণ করা হচ্ছে।
শাহ আমানত সুপার মার্কেটের গাড়ি পার্কিংয়ের ইজারাদার জাহেদ উদ্দিন বলেন, বিপণিবিতানের নিচতলায় প্রায় এক হাজার মোটরসাইকেল রাখার সুযোগ ছিল। কিন্তু গাড়ি রাখার জায়গায় এখন দোকান নির্মাণ করা হচ্ছে। দোকানের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে ৩০০ থেকে ৩৫০ গাড়ি রাখা যাবে। তাহলে বাড়তি গাড়িগুলো কোথায় থাকবে, নিশ্চয় রাস্তার ওপর রাখা হবে। তখন যানজট প্রকট আকার ধারণ করবে।
বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা বলেন, দোকান নির্মাণের জন্য গাড়ি রাখার পুরো জায়গা তো আর নেয়া হচ্ছে না। সেখানে গাড়ি রাখার জন্য যথেষ্ট জায়গা রয়েছে।
ভবনের অনুমোদনের বিষয়ে তিনি বলেন, ২০-২৫ বছর আগেকার কথা। তখন আমি ছিলাম না। তবে যতটুকু জানি ওই সময়ে সিটি করপোরেশন কোনো ভবন নির্মাণের জন্য সিডিএর অনুমোদন নিত না।
নিয়ম অনুযায়ী, নগরে কোনো ভবন নির্মাণ করতে হলে সিডিএর কাছ থেকে অনুমোদন নেয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু শাহ আমানত সুপার মার্কেট নির্মাণের জন্য সিডিএর কাছ থেকে কোনো অনুমোদন নেয়নি সিটি করপোরেশন। অনুমোদন না থাকলেও এখন পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলা নির্মাণ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে সিডিএর অথরাইজড কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামীম বলেন, তাদের জানা মতে শাহ আমানত সিটি করপোরেশন সুপার মার্কেটের ভবনের অনুমোদন নেই। তার পরও বিষয়টি খতিয়ে দেখব। বিপণি বিতানের নিচতলা দীর্ঘদিন ধরে গাড়ি রাখা হচ্ছিল। এখন সেখানে দোকান হচ্ছে কিনা তা জানা নেই। এ ব্যাপারেও খোঁজখবর নেবে সিডিএ।