ছোট কক্ষে নেই পর্যাপ্ত আলো-বাতাস। এসএ গেমসের ক্যাম্পে থাকা ২২ জনের একসঙ্গে অবস্থান করাই দায়! রুগ্ণ জিমনেশিয়ামের পরিবেশ এক কথায় ভয়াবহ। এখানেই দিনের পর দিন অনুশীলন করেন দেশসেরা ভারোত্তোলকরা; আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে দেশকে এনে দেন পদক।
পল্টন আইভি রহমান সুইমিংপুল-সংলগ্ন ওই জিমনেশিয়ামে একপলক দৃষ্টি রাখলেই বোঝা যাবে দেশের ভারোত্তোলনের বর্তমান চিত্রটা কেমন। বাহ্যিক এ রুগ্ণ দশার পর আছে অন্দরের সাংগঠনিক রুগ্ণতা, যা খেলাটির সব বিষয়কে প্রভাবিত করে। অন্দরে-বাইরে এমন রুগ্ণতার পরও বাংলাদেশ এ ক্রীড়া ডিসিপ্লিন থেকে ধারাবাহিক আন্তর্জাতিক সাফল্য পাচ্ছে কীভাবে? খেলাটির সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের এক কথায় জবাব, ‘ভাগ্যের কল্যাণে’। আসন্ন এসএ গেমসে ভারোত্তোলনের সম্ভাবনা ওই ভাগ্যের ওপরই নির্ভরশীল। ‘আমাদের বর্তমান অবস্থার সঙ্গে প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনা টানার পর আমি যদি বলি এসএ গেমসে স্বর্ণপদক পাব, সেটা হবে অসত্য’—বণিক বার্তাকে বলেন খেলাটির কোচ কাজল দত্ত। যোগ করেন, ‘তার অর্থ এই নয় যে বাংলাদেশের স্বর্ণপদক জয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। তা পেতে হলে সামর্থ্যের সর্বোচ্চ প্রয়োগ ঘটাতে হবে। পেতে হবে ভাগ্যের সহায়তা।’
নারী ও পুরুষ দলের ১১ জন করে ২২ অ্যাথলিট নিয়ে শুরু হয়েছে এসএ গেমস প্রশিক্ষণ। তাদের অনুশীলনের জন্য প্রয়োজন সাতটি প্লাটফর্ম। কিন্তু জিমনেশিয়ামে একসঙ্গে মাত্র দুটি প্লাটফর্ম স্থাপনের মতো জায়গা রয়েছে। এখানে একদল যখন অনুশীলন করে, বাকিদের তখন অপেক্ষায় থাকতে হয়। নেই ওয়েট ট্রেনিং ও মাল্টি জিমের প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি।
কোচ ও সংশ্লিষ্টদের কথায়, ‘এসএ গেমসের মতো আসরের প্রশিক্ষণের জন্য যে সুবিধাদি প্রয়োজন, তার মাত্র ৩০ শতাংশ পাচ্ছেন বাংলাদেশী ভারোত্তোলকরা।’ এ অবস্থায় কতটুকু কী করা সম্ভব? উত্তরে কাজল দত্ত বলেছেন, ‘ভালো কিছু করা বেশ কঠিন।’
উত্তরণের পথ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) কর্মকর্তারা যদি ভারোত্তোলনের অনুকূলে পুরনো ভবনের সভাকক্ষ আপাতত বরাদ্দ দেয়, তবে সেখানে জিমনেশিয়াম স্থাপন করা সম্ভব, যা আমাদের সংকট অনেকটা দূর করবে।’ যোগ করেন, ‘সভাকক্ষ বরাদ্দ না দিয়ে বারান্দার ফাঁকা জায়গাটুকু দিলেও আমরা কাজ চালিয়ে নিতে পারি। সেখানে নতুন কিছু সরঞ্জাম যুক্ত হলে আমরা ভালোভাবেই প্রস্তুত হতে পারি।’
অপর্যাপ্ত জায়গায় নেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, যা ভারোত্তোলকদের স্বাভাবিক অনুশীলন কার্যক্রম ব্যাহত করছে। এ সম্পর্কে আরেক কোচ ফারুক আহমেদ কাজল বলেছেন, ‘শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকায় প্রচণ্ড গরমে অবর্ণনীয় কষ্ট করতে হচ্ছে আমাদের। ক্যাম্পে ২২ ভারোত্তোলক থাকলেও একসঙ্গে মাত্র ছয়জন অনুশীলন করতে পারেন। বাকিদের বসে থাকতে হয়।’
অপর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার কারণে ছেলেদের বিভাগের ১১ ভারোত্তোলকের পাঁচজন খুলনায় আলাদা অনুশীলন করছেন বলে জানা গেছে। ফেডারেশনের অনুমতি নিয়ে আলাদা অনুশীলন করা সবাই বাংলাদেশ আনসারের ভারোত্তোলক।
অনুশীলনের পরিবেশ নিয়ে হতাশ ২০১৬ সালের এসএ গেমসে স্বর্ণজয়ী মাবিয়া আক্তার সীমান্ত। আগামী অক্টোবরে ২০ বছরে পা দিতে যাওয়া এ ভারোত্তোলকের কথায়, ‘আমরা যেখানে অনুশীলন করছি, তাকে জিমনেশিয়াম বলার সুযোগ নেই। গুদামঘরেই আমরা নিজেদের প্রস্তুত করছি। এমন রুগ্ণ জিমনেশিয়াম আমি পৃথিবীর কোথাও দেখিনি।’
ভারোত্তোলনের অপর্যাপ্ত সুবিধাদি সম্পর্কে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) ট্রেনিং কমিটির সদস্য সচিব এ কে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেছেন, ‘সীমিত সুযোগ-সুবিধা বাংলাদেশ ক্রীড়াঙ্গনে নতুন নয়। যেটুকু আছে, তা নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। শরীর গঠনের জিমনেশিয়াম ভারোত্তোলনের অনুকূলে বরাদ্দ দিলে সমস্যা কিছুটা কমে আসবে।’
এসএ গেমসের প্রশিক্ষণের জন্য বাংলাদেশ ভারোত্তোলন ফেডারেশন অন্তত ছয়টি ভারোত্তোলন সেট চেয়ে এনএসসিতে চিঠি দিয়েছে অনেক আগেই। সম্প্রতি ওই চাহিদাপত্র যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে এনএসসি। কিন্তু প্রয়োজনের সময় আদৌ সরঞ্জাম এসে পৌঁছবে কি না, সেটিই এখন প্রশ্ন।