বিবিসি বাংলাকে প্রধানমন্ত্রী : হেফাজতে নির্যাতনের মানসিকতা সরকারের নেই

বণিক বার্তা ডেস্ক   

দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিবিসি বাংলার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, এমন মানসিকতা আমাদের নেই এবং আমরা সেটি করি না। ঘটনাচক্রে কিছু ঘটতে পারে। বরং আপনি যদি গত ১০ বছরে আমাদের অবস্থান দেখেন, আমরা কিন্তু অপরাধ নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পেরেছি। একশ্রেণীর মানুষ হেফাজতে মৃত্যুর বিষয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং এরা সেই মানুষ, যারা সারাক্ষণ খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আমাদের পেছনে লেগেই আছে।

লন্ডনে বিবিসি বাংলার মানসী বড়ুয়াকে দেয়া সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, আমার নিজের কথাই চিন্তা করেন। যখন আমি আমার বাবা-মা সবাইকে হারালাম, গুলি করে মারা হলো। কই আমি তো বিচার পাইনি। খুনিদের বিচার না করে তাদের ইনডেমনিটি দেয়া হলো। অর্থাৎ অপরাধকে প্রশ্রয় দেয়া হলো। উল্টো তাদের পুরস্কৃত করা হলো। যে দেশে অপরাধকে স্বীকৃতি দিয়ে একটা সামাজিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়, সে দেশে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। হেফাজতে মানুষ হত্যার সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী আমার দলের নেতাকর্মীরা।

নির্যাতনের সংস্কৃতি বন্ধ করা সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি। এখন ঠিক ওইভাবে হেফাজতে মৃত্যু হয় না। নির্যাতনও সেভাবে করা হয় না। তবে আন্তর্জাতিকভাবে অপরাধীর কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহের কিছু নিয়ম রয়েছে। এর বাইরে কিছু করা হয় না। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

একটা শ্রেণী হেফাজতে মৃত্যুর বিষয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাদের মধ্যে কিছু আছে যারা অসাংবিধানিক সরকার। জরুরি অবস্থা অথবা মার্শাল ল বা মিলিটারি রুলার এলে তাদের খুব দাম বাড়ে। কাজেই তারা সারাক্ষণ খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আমাদের পেছনে লেগেই আছে।

যেসব দেশ দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে, বাংলাদেশ তাদের একটি। কিন্তু এর সুফল সব পর্যায়ের মানুষের কাছে পৌঁছচ্ছে কিনা, জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, সেভাবেই আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি। ২০০৫ বা ২০০৬ সালের দিকে আমাদের দারিদ্র্যের হার ৪১ শতাংশের উপরে ছিল। এখন সেটা ২১ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে এসেছে। মাত্র ১০ বছরের মধ্যে আমরা সেটা অর্জন করতে পেরেছি। মানুষের মাথাপিছু আয় যেখানে ৪০০-৫০০ মার্কিন ডলার ছিল, এখন তা প্রায় ২ হাজার মার্কিন ডলারে উঠে এসেছে। আমরা ৮ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পেরেছি।

ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণসংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঋণ নিয়ে সেটা ফেরত না দেয়ার সংস্কৃতিটাও আমাদের এখানে শুরু হয় সামরিক শাসনের আমলে। আমরা যখনই ক্ষমতায় এসেছি, অনেক টাকা উদ্ধার করেছি। তার পরও কিছু মানুষের প্রবণতা থাকে যে টাকা দিলে মনে হয় সেটা আর ফেরত দিতে হবে না।

বাংলাদেশে গণতন্ত্রের মান ও এর চর্চা সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, দেশে এখন ৪৪টি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আছে। তারা স্বাধীনভাবে কাজ করছে। স্বাধীনতা না থাকলে তারা আমার বিরুদ্ধে বা সরকারের বিরুদ্ধে এত অপপ্রচার করছে কীভাবে।

গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে অনেক কেন্দ্রে ১০০ শতাংশ ভোট পড়েছে এবং এ নিয়ে যে সমালোচনা রয়েছে সে সম্পর্কে তিনি বলেন, সেটা এখন কোনো কেন্দ্রে গোনার দিক থেকে হয়তো পেয়েছে। কোনো কেন্দ্রে হয়তো হতে পারে। কিন্তু আমাদের ট্রাইব্যুনাল আছে, সেখানে মামলা করতে পারে, কোর্টে মামলা করতে পারে। মানুষ যদি সত্যিই ভোট দিতে না পারত, তাহলে তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে মানুষ আন্দোলনে নামত এবং আমরা ক্ষমতায় থাকতে পারতাম না।

ডেঙ্গু রোগের জীবাণুর বাহক এডিস মশার বিস্তার রোধে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের গাফিলতির অভিযোগ সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, সংবাদমাধ্যমে ডেঙ্গুবিষয়ক খবর অনেক বেশি প্রকাশিত হচ্ছে এবং এর ফলে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে। আর সেটাই সমস্যা সৃষ্টি করছে। একটু উচ্চবিত্ত যারা, সেই জায়গাগুলোতেই এর প্রকোপ বেশি। আমাদের সব সময় লক্ষ্য থাকে বস্তি এলাকা, ড্রেন এসব দিকে। মশা মারা কিন্তু নিয়মিত একটা ব্যাপার। শুধু সিটি করপোরেশনকে দোষ না দিয়ে সব মানুষকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

মশার ওষুধ কেনায় দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠেছে, তা নাকচ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মশার ওষুধ কেনার ক্ষেত্রে টেন্ডার আহ্বান করা হয়। যারা টেন্ডারে উপযুক্ত হয়, তারা কিনে নিয়ে আসে এবং সেগুলো ব্যবহারও হয়। তবে কোন ওষুধ এডিস মশার উপরে কাজ করে, সেই ব্যাপারে বিভক্তিকরণ করা হয়নি বা সে ধরনের সতর্কতা ছিল না।

ভবিষ্যতে মশা নিয়ন্ত্রণ আরো সুষ্ঠুভাবে কীভাবে করা যায়—সে সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং সরকারের পাশাপাশি তার দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরও পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশেই একটা পরিচ্ছন্নতা অভিযান দরকার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারো ঘরের কাছে বা ঘরে কোথাও যদি পানি জমা থাকে এবং সেখানে মশার লার্ভা তৈরি হয়, তবে তাদের জরিমানা করা হবে। মানুষ যদি আগামীর জন্য প্রস্তুত থাকে, তবে ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি হবে না।

পদ্মা সেতু নিয়ে চলা গুজব সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তরে গুজবে কান না দেয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা গুজব ছড়াচ্ছে তাদের কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে। আপনিই বলুন রক্ত আর কাটা মাথা দিয়ে কি সেতু তৈরি হয়? এ গুজবটা যারা ছড়াচ্ছে, অপরাধী তো তারা। পদ্মা সেতুর ব্যাপারে শুরু থেকেই একটা চক্রান্ত ছিল।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন