এখনো যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন কাশ্মীর

বণিক বার্তা অনলাইন

জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা বিলোপের একদিন পরেও ওই এলাকা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। গত রোববার থেকে বিচ্ছিন্ন করা রাজ্যের টেলিফোন, মোবাইল এবং ইন্টারনেটের সংযোগ এখনও ঠিক করা হয়নি। কাশ্মীরের রাস্তায় হাজার হাজার সেনা টহল দিচ্ছে। খবর বিবিসি

কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপ করার ঘটনায় ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু এমন ঘোষণায় সেখানকার মানুষ কী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে - সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কিছু জানা যায়নি। এরই মধ্যে স্থানীয় নেতাদের আটক করা হয়েছে।

ভারত শাসিত কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরের বিবিসি সংবাদদাতা আমির পীরজাদা বলেন, রাজ্যের অন্যান্য অংশে কী হচ্ছে তা কেউ জানে না, আমরা কারো সাথে কথাও বলতে পারছি না। মানুষ ভীষণ চিন্তিত, তারাও জানে না আসলে কী হচ্ছে এবং কী হতে যাচ্ছে।

ভারতের অন্যান্য স্থানে থাকা কাশ্মীরিরা তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না এবং সে বিষয়ে তাদের শঙ্কার বিষয়টি জানিয়েছেন। দিল্লিতে থাকা এক ছাত্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকাকে জানিয়েছেন, তিনি স্থানীয় পুলিশের সঙ্গেও যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি।

যোগাযোগ ব্যবস্থা কখন ঠিক হবে, সে বিষয়ে কোনো ইঙ্গিত দেয়া হয়নি। তবে স্থানীয়ভাবে পাওয়া খবর থেকে জানা যাচ্ছে যে সাধারণ মানুষকে ওই অঞ্চলে প্রবেশ করতে বাধা দেয়া হচ্ছে না।

অনেক কাশ্মীরি মনে করেন, সংবিধানের যে ৩৭০ অনুচ্ছেদ কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দিত, সেটিই ছিল রাজ্যটির ভারতের অংশ থাকার পেছনে প্রধান যুক্তি। আর ওই অনুচ্ছেদ বিলোপের মাধ্যমে দিল্লির সঙ্গে কাশ্মীর অঞ্চলের সম্পর্কের যে ক্ষতি হয়েছে, তা অপরিবর্তনীয়।

অনুচ্ছেদ ৩৭০ কাশ্মীর রাজ্যকে বিশেষ ধরনের স্বায়ত্বশাসন ভোগ করার সুযোগ দিত যার ফলে তারা নিজস্ব সংবিধান, আলাদা পতাকা এবং আইন প্রণয়নের অধিকার রাখতো, যদিও পররাষ্ট্র বিষয়ক সিদ্ধান্ত, প্রতিরক্ষা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে। ফলে, জম্মু ও কাশ্মীর নাগরিকত্ব, সম্পদের মালিকানা এবং মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত আইন নিজেরা তৈরি করার ক্ষমতা রাখতো। 

ওই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ভারতের অন্যান্য রাজ্যের মানুষ জম্মু ও কাশ্মীরে জমি কেনা এবং সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করার সুযোগ ছিল না। 

ভারত কেবল সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলই করেনি। কাশ্মীরকে ভেঙে দুই টুকরো করে ফেলেছে। এখন থেকে জম্মু এবং কাশ্মীর ‘ইউনিয়ন টেরিটরি’ বা কেন্দ্রীয়ভাবে শাসিত রাজ্য হিসেবে পরিচালিত হবে। আর লাদাখ কেন্দ্রশাসিত তৃতীয় একটি এলাকা হিসেবে বিবেচিত হবে।

ভারতের সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অনুচ্ছেদ ৩৭০ এর বিলোপের ঘোষণা দেয়ার কয়েকদিন আগে থেকেই কাশ্মীর উপত্যকায় উত্তেজনা বিরাজ করছিল। সংসদে ঘোষণা দেয়ার কয়েকদিন আগে ঐ অঞ্চলে অতিরিক্ত দশ হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়। পর্যটকদের ঐ এলাকা ছেড়ে যেতে বলা হয়, হিন্দু তীর্থযাত্রীদেরও নির্দেশ দেয়া হয় ঘরে ফিরে যেতে। 

এই ঘোষণার পরই কাশ্মীরে রাজধানী শ্রীনগর আর জম্মু অঞ্চলে ১৪৪ ধারা অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। একই সঙ্গে সব স্কুল-কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ওই অঞ্চলে থাকা বিবিসি সংবাদদাতা জানান, স্থানীয়রা সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে কয়েকমাসের খাবার মজুদ করে রাখেন। সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হবে ধারণা করে পুলিশ কর্মকর্তাদের জন্য স্যাটেলাইট ফোন বরাদ্দ করা হয়।

ভারত এবং পাকিস্তান দুই দেশই সম্পূর্ণ কাশ্মীরের অধিকার দাবি করলেও দুই দেশই রাজ্যটির কিছু নির্দিষ্ট অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ভারত শাসিত কাশ্মীরে অনেকদিন ধরেই বিদ্রোহ হয়ে আসছে। ফলে এখন পর্যন্ত বহু বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন