বন্যায় ব্যবহার অনুপযোগী বগুড়ার ৩৮০ কিলোমিটার সড়ক

বণিক বার্তা প্রতিনিধি বগুড়া

বন্যার পানি নামতে থাকায় ফুটে উঠেছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠছে ক্ষতবিক্ষত সড়ক। কোথাও পিচ উঠে ইট-পাথর বেরিয়ে এসেছে, আবার কোথাও সড়কের বড় অংশই ভেসে গেছে পানির তোড়ে। জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, কাঁচা-পাকা মিলিয়ে এবারের বন্যায় বগুড়ার ছয় উপজেলায় ৩৮০ দশমিক ৬০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১১টি সেতু। এ কারণে পানি কমতে থাকলেও সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি বছরের জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময় ভারি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বগুড়ায় যমুনা নদীতীরবর্তী এলাকাগুলোতে বন্যা দেখা দেয়। দুই সপ্তাহে এ বন্যা জেলার ছয় উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ে। বন্যার কারণে জেলার তিন লাখের বেশি মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পানিতে ডুবে ২৫ হাজার ৩৪৯ দশমিক ৯০ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া ২২৬টি প্রতিষ্ঠান ও ৪ হাজার ৪৪৪টি টিউবওয়েল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি প্রায় নেমে যাওয়ায় এখন বন্যায় অবকাঠামোর ক্ষতিও স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ছয় উপজেলা মিলিয়ে বন্যায় ২৮৫ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা, ৯৫ দশমিক ৬০ কিলোমিটার পাকা রাস্তা এবং ১১টি সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনো অনেক উপজেলায় সড়ক থেকে পানি সরে না যাওয়ায় টাকার অংকে ক্ষতির পরিমাণ বলা যাচ্ছে না। এসব সড়ক ও সেতু পুরোপুরি নষ্ট না হলেও ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

সূত্র জানায়, এবারের বন্যায় অবকাঠামোর সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সোনাতলা উপজেলার। এ উপজেলার একটি পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নের প্রায় ৩৮ কিলোমিটার পাকা সড়ক ধুয়েমুছে খানাখন্দে রূপ নিয়েছে। পানির স্রোতের তোড়ে কার্পেটিং পিচ উঠে গিয়ে ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে সোনাতলার চরপাড়া বাসস্ট্যান্ড-হুয়াকুয়া ভায়া পদ্মপাড়া হরিখালী সড়ক, সোনাতলা-হরিখালী ভায়া নামাজখালী সড়ক, সোনাতলা-ভেলুরপাড়া ভায়া কলেজ স্টেশন সড়ক, চরপাড়া তিনমাথা-ঠাকুরপাড়া ভায়া হাটকরমজা সড়ক, মধুপুর-জুমারবাড়ী ভায়া ফুলবাড়ী সড়ক, মধুপুর-তেকানী চুকাইনগর সড়ক, জোড়গাছা ইউপি-চরপাড়া হাট ভায়া সোনাকানিয়া সড়ক, জোড়গাছা ইউপি-কলেজ স্টেশন সড়ক, বালুয়া-রানীরপাড়া সড়ক, হরিখালী-পাকুল্লা সড়ক, বালুয়া-কর্পূরহাট সড়ক, পাকুল্লা-তালতলা সড়ক, পাকুল্লা-চরপাড়া সড়ক, মহেশপাড়া-তেকানী চুকাইনগর সড়ক, কর্পূর-মূলবাড়ীয় সড়ক, দিগদাইড় ইউপি-কলেজ স্টেশন-চরপাড়া সড়ক, সোনাতলা ঘোড়াপীড়-জুমারবাড়ি সড়ক, সোনাতলা উপজেলা পরিষদের দক্ষিণ পাশের গেট থেকে কামারপাড়া সড়ক, কামারপাড়া থেকে সমজাতাইড় সড়ক, কামারপাড়া থেকে বালুয়াহাট সড়ক, সোনাতলা বন্দর-শাহবাজপুর ভায়া মহর আলীর বাড়ি সড়ক, সোনাতলা হাসপাতাল-মাগুরাদহ সড়ক, সোনাতলার চমরগাছা-নিত্যনন্দনপুর মসজিদ ভায়া কানুপুর সড়ক, সোনাতলা রেলগেট-চমরগাছা ভায়া ব্যাঙেরঘাট ব্রিজ সড়ক, খানপাড়া-মোকামতলা সড়ক, সোনাতলা রেলগেট-বালুয়াহাট সড়ক, সোনাতলা হাসপাতাল-সরকারবাড়ি সড়ক, ভেমটিঘাট-বিশুরপাড়া ভায়া নয়াপাড়া সড়ক, শাহবাজপুর জাহিদুলের বাড়ি-শাহবাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সড়ক, সোনাতলা-গবরজান ব্রিজ সড়কগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। পানি স্রোতের তোড়ে রশিদপুর ও জাহানাবাদ এলাকার দুটি কালভার্ট উল্টে গেছে।

এছাড়া সারিয়াকান্দিতে ২৬ কিলোমিটার, গাবতলীতে ৩০ কিলোমিটার ও শাজাহানপুর উপজেলার এক কিলোমিটার পাকা রাস্তা

নষ্ট হয়েছে।

সারিয়াকান্দি উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী লিয়াকত আলী জানান, এ উপজেলায় ২৬ কিলোমিটার পাকা রাস্তা বন্যার পানির

তোড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এখানে পাঁচটি

সেতু-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উপজেলার অভ্যন্তরে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। পানি থাকায় কোনো কোনো স্থানে নৌকায় চলাচল করতে হচ্ছে।

গাবতলীর সহকারী প্রকৌশলী রিপন কুমার সাহা জানান, বন্যায় ৩০ কিলোমিটারের বেশি পাকা রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক এলাকা এখনো পানির নিচে আছে। পানিতে তলিয়ে থাকায় রাস্তাগুলোর ক্ষতি বেশি হচ্ছে। এদিকে পানি যত কমে যাচ্ছে, ততই ইট-পাথর সরে যাচ্ছে।

সোনাতলা উপজেলার হাটকরমজা এলাকার বাসিন্দা আব্দুল করিম, ভেলুরপাড়া এলাকার রাজা মিয়া, তেকানী এলাকার শামছুল হক মাস্টার জানান, বন্যার পানির স্রোতের তোড়ে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় যান চলাচল এক ধরনের বন্ধই

আছে। বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত দেখা যাচ্ছে। কোথাও বা আবার রাস্তাই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এসব রাস্তা দ্রুত সংস্কার না করা হলে দুর্ভোগ পোহাতে হবে।

এ ব্যাপারে সোনাতলা উপজেলা প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান জানান, সড়কগুলো সংস্কার করতে প্রায় ১৫ কোটি টাকার প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই ৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। পর্যায়ক্রমে বরাদ্দের পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পাবে। স্থানীয় সংসদ সদস্যও সড়কগুলো দ্রুত সংস্কার করতে নির্দেশনা দিয়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন