কাঁটাবাড়িতে খাল পুনঃখনন

দুর্ভোগ কেটেছে পত্নীতলার হাজারো কৃষকের

বণিক বার্তা প্রতিনিধি নওগাঁ

নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার কাঁটাবাড়িতে খাল পুনঃখননের কারণে পাল্টে গেছে শম্ভুপুর বিলের চিত্র। এ খাল পুনঃখননের সুবাদে জলাবদ্ধতা কেটে যাওয়ায় এ বিলের প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে আবার ধানসহ বিভিন্ন ফসল আবাদ করা যাচ্ছে। এতে সরাসরি উপকৃত হচ্ছেন আশপাশের কয়েকটি গ্রামের হাজারো কৃষক।

উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার শম্ভুপুর বিলে ইশাপুর, মথুরাপুর, শম্ভুপুর, কাঁটাবাড়ি, হাড়পুর, আজমতপুরসহ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের প্রায় ৫০০ হেক্টর জমি আছে। একসময় এ বিলে বোরো ও আমন ধান আবাদ করা হতো। তবে পানি নিষ্কাশনের পথ না থাকায় বোরো মৌসুমের সময় বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে বিলের ফসল পানিতে ডুবে যেত। এতে কৃষকদের ক্ষতি হতো। এ দুর্ভোগ নিরসনে স্থানীয় কৃষকরা কাঁটাবাড়ি পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি গঠন করে খাল পুনঃখননে আবেদন করে। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে টেকসই ক্ষুদ্রাকার পানিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সরকার ‘কাঁটাবাড়ি পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেড’-এর জন্য ৫১ লাখ ৫২ হাজার ৪৯৫ টাকা বরাদ্দ দেয়। এ প্রকল্পের আওতায় ৩৭ লাখ ৮৪ হাজার ৭৯৯ টাকা ব্যয়ে পত্নীতলা ইউনিয়নের শম্ভুপুর বিল থেকে কাঁটাবাড়ির ওপর দিয়ে আত্রাই নদ পর্যন্ত ২ হাজার ৮০০ মিটার খাল পুনঃখনন, ১১ লাখ ২৪ হাজার ৩৩৯ টাকা ব্যয়ে ১ হাজার ২০০ মিটার বাঁধ, ১ লাখ ৬৮ হাজার ৪৬৫ টাকা ব্যয়ে তিনটি বাঁশের সাঁকো এবং ৭৫ হাজার ৮৯২ টাকায় তিনটি রেফারেন্স লাইন নির্মাণ করা হয়।

খাল পুনঃখননের পর থেকেই বিলের পানি অনায়াসে নিষ্কাশন হচ্ছে। এতে এখন বিলে আমন ধানেরও আবাদ করা যাচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমের খালের পানি দিয়ে রবিশস্যের আবাদ করা হচ্ছে। এতে উপকৃত হচ্ছেন কয়েকটি গ্রামের হাজারো কৃষক। এর পাশাপাশি ভূগর্ভস্তরের পানির ওপর চাপ কমেছে।

কাঁটাবাড়ি গ্রামের কৃষক আব্বাস আলী জানান, শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচ দিতে গিয়ে ফসল আবাদে বেশি খরচ পড়ত। এখন খালের পানি দিয়েই আবাদ করা যাচ্ছে। এতে আমাদের অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে। এ পানি দিয়ে এবার আমি ছয় বিঘা জমিতে ধান আবাদ করেছি।

সমিতির সদস্য হাড়পুর গ্রামের ইয়াকুব আলী, সুকুমার দাস ও কোষাধ্যক্ষ খাদেমুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় এলাকাবাসী ও সমিতির সদস্যদের প্রায় ৫০০ হেক্টরের মতো জমি আছে।

কাঁটাবাড়ি পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মিজানুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক বলেন, এ সমিতির সদস্য সংখ্যা ৬০৩। সমিতির সদস্য ও স্থানীয় এলাকাবাসীর সুবিধার্থে খাল পুনঃখননের জন্য উপজেলা এলজিইডিতে আবেদন করা হয়। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের সমিতির নামে একটি প্রকল্প আসে। এর অধীনে খাল খনন, সেতু, বাঁধ ও রেফারেন্স নির্মাণ লাইন করা হয়েছে। খাল খননের কারণে সমিতির সদস্যদের পাশাপাশি আশপাশের এলাকার মানুষও উপকৃত হচ্ছে।

পত্নীতলা এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী সৈকত দাস বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে টেকসই ক্ষুদ্রাকার পানিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এ খাল পুনঃখননের জন্য ৫১ লাখ ৫২ হাজার ৪৯৫ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। মূলত ফসল উত্পাদনে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমাতে এ খাল পুনঃখনন করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, স্ক্যাবেটর দিয়ে ৭০ শতাংশ এবং সুবিধাভোগী শ্রমিকদের দিয়ে ৩০ শতাংশ খাল পুনঃখননের কাজ করা হয়েছে। এ খালের পানি সমিতির সদস্য ও স্থানীয় কৃষকরা তাদের জমিতে ফসল ফলানোর কাজে ব্যবহার করছেন। সমিতির সদস্যরা চাইলে মাছ চাষ ও হাঁস পালনও করতে পারেন। সব মিলিয়ে খাল পুনঃখননের কারণে এ এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়নে গতি এসেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন