স্বর্ণকন্যাকে নিয়ে অনিশ্চয়তা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

গত এসএ গেমসে বাংলাদেশের মান বাঁচিয়েছেন মাহফুজা খাতুন শীলা। চার স্বর্ণপদকের দুটি জয় করেন এ সাঁতারু। আসন্ন এসএ গেমসেও বাংলাদেশের প্রত্যাশার কেন্দ্রে ২৯ বছর বয়সী এ সাঁতারু। কিন্তু পারিবারিক কারণে গেমসে খেলার বিষয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন শীলা।

১৫ জুলাই শুরু হয়েছে গেমসের সাঁতার ক্যাম্প। ৩২ সাঁতারু নিয়ে চালু হওয়া অনুশীলন কার্যক্রমে যোগ দিয়েছেন নৌবাহিনীর জলমানবী। ডাক্তারের পরামর্শে আপাতত হালকা অনুশীলন করছেন তিনি। এ সাঁতারু সম্পর্কে তার স্বামী ও সাবেক সাঁতারু শাহজাহান আলী রনি বণিক বার্তাকে বলেছেন, ‘আমরা অনেকদিন ধরেই ভবিষ্যত্ ও পারিবারিক বিষয়গুলো নিয়ে পরিকল্পনা করছিলাম। বিভিন্ন সাঁতার কার্যক্রমের কারণে ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছিল না। সম্প্রতি ডাক্তারের শরণাপন্ন হলে তাকে অতিরিক্ত পরিশ্রম না করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এ কারণেই গেমসে খেলার বিষয়ে দ্বিধায় আছে শীলা।’

গেমসে এ সাঁতারু আদৌ অংশগ্রহণ করবেন কিনা, এ সিদ্ধান্তের ভার শীলার ওপরই ছেড়ে দিয়েছেন শাহজাহান আলী। তার কথায়, ‘সাঁতার ও পরিবার দুটিই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ জায়গায় আমি শীলার ওপর চাপ দিতে চাই না। আমি চাই নিজের মতো করে সিদ্ধান্তটা সে-ই নিক।’

শাহজাহান আলী ২০০৬ সালে কলম্বো এসএ গেমস সাঁতারে স্বর্ণপদক জয় করেন। ২০১০ সালে ঢাকা গেমসে শারীরিক অসুস্থতা নিয়েও রুপা জয় করেন তিনি। ২০১৬ সালের এসএ গেমসে ব্রোঞ্জপদক পান এ সাঁতারু। পরবর্তীতে ওই আসরে ৫০ ও ১০০ মিটার ব্রেস্টস্ট্রোকে স্বর্ণজয়ী শীলার সঙ্গে ঘর বাঁধেন শাহজাহান আলী।

সাঁতারে শীলার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে শাহজাহান আলী বলেছেন, ‘সে প্রচণ্ড জেদি। এখনো ভালো কিছু করে দেখানোর মতো জেদ তার মাঝে রয়েছে। আমি মনে করি, আসন্ন এসএ গেমস সাঁতারে ভালো কিছু অর্জনের ক্ষমতা যাদের রয়েছে, তাদের মধ্যে শীলাই সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে।’

২০১৬ সালে প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেই জোড়া স্বর্ণপদক জয় করেন শীলা। এমনকি সাঁতার দলের কর্মকর্তা হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকেও কটু কথা শুনতে হয়েছে তাকে। পুলে ঝড় তুলে কড়া জবাব দিয়েছেন এ সাঁতারু। সাফল্য-পরবর্তী সময়েও উপেক্ষিত ছিলেন শীলা।

এ সাঁতারুকে উন্নত প্রশিক্ষণে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়নি বাংলাদেশ সাঁতার ফেডারেশন। এমনকি এশিয়ান গেমস, কমনওয়েলথ গেমস, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের মতো আসরগুলোর জন্য শীলাকে বিবেচনা করা হয়নি। তার পরিবর্তে যাদের পাঠানো হয়েছে, তাদের নৈপুণ্য ছিল হতাশজনক। এসব বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে শাহজাহান আলী বলেছেন, ‘তার ক্ষেত্রে কী ঘটেছে, সেটা সবাই জানেন। এ নিয়ে আমি কোনো কথা বলতে চাই না। এসব বিষয় নিয়ে শীলাও খুব বেশি আগ্রহী নয়। সে বরাবরই নিজের কাজে মনোযোগী। এখনো নিজের কাজ নিয়ে থাকতেই সে পছন্দ করে। সবকিছু অনুকূলে থাকলে আবারো দেশের পতাকা উঁচিয়ে ধরবে শীলা।’

এসএ গেমসের পরই বাংলাদেশী অ্যাথলিটদের মনোযোগ দিতে হবে বাংলাদেশ গেমসে। ওই আসরে নিজেদের সেরা সাঁতারুকে খেলাতে চাইবে নৌবাহিনী। পরবর্তীতে নানা ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক আসরের চাপও হয়তো থাকবে। এসব ভেবে শীলার মতো সিদ্ধান্তহীনতায় শাহজাহান আলীও, ‘আসলে এ মুহূর্তে কী করণীয় ভেবে পাচ্ছি না। আগামী দিনের কার্যক্রমে নজর দিলে দেখা যাচ্ছে গেমসের পর অন্তত পাঁচ-ছয় মাস বাংলাদেশ গেমস নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হবে। আপাতত শীলার বিশ্রামের সুযোগ দেখছি না।’

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন