ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ ঘোষণার পাল্টা জবাব

ইউয়ানের মান হ্রাস, মার্কিন কৃষিপণ্য আমদানি স্থগিত চীনের

বণিক বার্তা ডেস্ক

এক বছরের বেশি সময় ধরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে শান্ত করার চেষ্টা করছে চীন। কিন্তু প্রতিদানে আরো শুল্কের মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো দেশটির পণ্য। তবে এবার চীন ইঙ্গিত দিল, তারা আর চুপ থাকবে না, পাল্টা জবাব দিতে প্রস্তুত। গতকাল এক দশকের বেশি সময়ের মধ্যে চীনা মুদ্রা ইউয়ানের মান ডলারের বিপরীতে সর্বনিম্নে চলে আসে। অন্যদিকে মার্কিন কৃষিপণ্য আমদানি স্থগিত করতে সরকারি কোম্পানিগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বেইজিং। খবর ব্লুমবার্গ।

গতকাল ডলারের বিপরীতে চীনা মুদ্রার বিনিময় হার ৭-ইউয়ানের নিচে নেমে আসে। চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, চীনা পণ্যের ওপর আরো শুল্ক আরোপ করতে পারেন ট্রাম্প, এ আশঙ্কা থেকেই এ পতন।

৩০ হাজার কোটি ডলারে চীনা পণ্যে নতুন করে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ১ সেপ্টেম্বর এ শুল্ক  কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, রফতানিকে সহায়তা করতে চীন অন্যায্যভাবে নিজেদের মুদ্রা অবমূল্যায়িত রাখে এবং জুনে দেয়া প্রতিশ্রুতি মোতাবেক মার্কিন কৃষিপণ্য কিনতে ব্যর্থ হয়েছে দেশটি। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিনিয়োগকারীরা আরো সতর্ক হয়ে উঠেছেন। ফলে এশিয়ার শেয়ারবাজারে সূচক পতন অব্যাহত রয়েছে।

২০১০ সালের পর এবারই প্রথম ডলারের বিপরীতে ইউয়ানের মানের এত বড় পতন ঘটল। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের মুদ্রাযুদ্ধ শুরুর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। 

পিপলস ব্যাংক অব চায়না (পিবিওসি) জানিয়েছে, যুক্তিসংগত ভারসাম্যমূলক স্তরে ইউয়ানের মান স্থিতিশীল রাখার জন্য যথেষ্ট অভিজ্ঞতা, আত্মবিশ্বাস ও সক্ষমতা তাদের রয়েছে। তবে ব্যাংকটি কোন স্তরকে তারা যুক্তিসংগতভাবে ভারসাম্যমূলক বলে মনে করছে, তা নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলেনি।

চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক দৈনিক রেফারেন্স হার ঠিক করে দেয়ার পর গতকাল দুপুরে ডলারের বিপরীতে ইউয়ানের মান কমে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ০২৯২।

হংকংয়ের ম্যাককুরি সিকিউরিটিজের চীনবিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ ল্যারি হিউ বলেন, বাণিজ্যযুদ্ধের তীব্রতা বৃদ্ধি, চীনা অর্থনীতি শ্লথ হয়ে পড়া, ইউয়ানের উচ্চতর অস্থিরতা সহ্য করার পিবিওসির ইচ্ছার প্রতিফলন হিসেবে চীনা মুদ্রার মানের এমন পতন ঘটেছে। পিবিওসি অস্পষ্ট পরিস্থিতিতে নিজেকে যুক্ত করেছে, তাই এটিকে সতর্কতার সঙ্গে ম্যানেজ করতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রকে কাবু করার জন্য মুদ্রার পর চীনের আরেকটি অস্ত্র দেশটি থেকে কৃষিপণ্য আমদানি বন্ধ করা। এখন থেকে চীনের সরকারি কৃষি ফার্মগুলো মার্কিন কৃষিপণ্য কেনা বন্ধ করবে এবং বাণিজ্য আলোচনা কোন পর্যায়ে যায়, সেজন্য অপেক্ষা করবে বলে বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন জানিয়েছেন। তবে গণমাধ্যমে কথা বলার অনুমতি না থাকায় তারা নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি। 

ট্রাম্প বারবার অভিযোগ করে বলছেন, ওসাকায় জি২০ সম্মেলনের ফাঁকে অনুষ্ঠিত বৈঠকে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তাকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সে অনুযায়ী ‘বড় আকারে’ কৃষিপণ্য কিনছে না চীন। এ বিষয়ে জানতে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো মন্তব্য করেনি।

মেব্যাংক কিম ইঞ্জিনিয়ার রিসার্চের অর্থনীতিবিদ চুয়া হাক বনি বলেন, নরম কূটনৈতিক কৌশল থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে চীন। দেশটি আর ট্রাম্পের ‘পানচিং ব্যাগ’ হতে চায় না। ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ হুমকির পাল্টা জবাব আসতে শুরু করেছে এবং এর মধ্য দিয়ে পুরোদমে শুরু হলো বাণিজ্যযুদ্ধ।

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন