১৮ মাসের মাথায় অপসারিত এইচএসবিসির প্রধান নির্বাহী

বণিক বার্তা ডেস্ক

আকস্মিকভাবেই প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জন ফ্লিন্টকে অপসারণের ঘোষণা দিয়েছে ব্রিটিশ বহুজাতিক ব্যাংক এইচএসবিসি। মাত্র ১৮ মাস আগে ব্যাংকটির সিইওর দায়িত্ব গ্রহণ করেন ফ্লিন্ট। প্রধান নির্বাহীর অপসারণ প্রসঙ্গে এইচএসবিসি জানিয়েছে, চ্যালেঞ্জিং বৈশ্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে পরিবর্তন প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। খবর রয়টার্স।

প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার আকস্মিক অপসারণের ঘোষণায় এইচএসবিসির শেয়ারদরে বড় পতন ঘটেছে। গতকাল হংকংয়ের বাজারে তালিকাভুক্ত এইচএসবিসির শেয়ারদর ১ দশমিক ৯ শতাংশ কমে ৭ ডলার ৭৯ সেন্টে (৬১ হংকং ডলার) দাঁড়ায়, যা ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবরের পর সর্বনিম্ন।

এদিকে অর্ধবার্ষিক মুনাফা ১৬ শতাংশ বৃদ্ধি এবং ১০০ কোটি ডলার পর্যন্ত একটি পুনঃক্রয় কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া সত্ত্বেও ব্রিটিশ ঋণদাতাটির শেয়ারদরে পতন দেখা গেল।

ফ্লিন্টের অপসারণ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, কোম্পানির মধ্যে ফ্লিন্টের কৌশল বাস্তবায়ন নিয়ে মতপার্থক্যের কারণে তাকে অপসারণ করা হয়েছে। গতকাল অর্ধবার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের পাশাপাশি ফ্লিন্টকে অপসারণের ঘোষণা দিয়েছে এইচএসবিসি।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্যযুদ্ধ আরো তীব্র হওয়া, সারা বিশ্বে মুদ্রানীতি শিথিলের পদক্ষেপ, প্রধান বাজার হংকংয়ে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, ব্রেক্সিটকেন্দ্রিক অনিশ্চয়তাসহ নানা সংকটে জর্জরিত হয়ে পড়েছে ইউরোপের বৃহত্তম ব্যাংকটি। এমন পরিস্থিতিতে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে অপসারণের ঘোষণা দেয়া হলো।

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে এইচএসবিসির সিইও হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ৫১ বছর বয়সী ফ্লিন্ট। এর আগে ব্রিটিশ আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির খুচরা ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা ব্যবসা পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ফ্লিন্টের নিয়োগ ছিল এইচএসবিসির বাইরে থেকে নিযুক্ত চেয়ারম্যান মার্ক টাকারের প্রথম বড় কোনো সিদ্ধান্ত। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের শেষ দিকে পর্ষদের চেয়ারম্যান হন টাকার।

ফ্লিন্টের অপসারণ প্রসঙ্গে এক বিবৃতিতে টাকার বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতি ক্রমাগত জটিল ও চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠছে। আমরা যেসব চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছি, তা মোকাবেলা ও ভবিষ্যৎ সুযোগগুলো কাজে লাগানোর জন্য একটি পরিবর্তন জরুরি বলে পর্ষদ মনে করছে।

এইচএসবিসি জানিয়েছে, নতুন সিইও নিয়োগের ক্ষেত্রে পর্ষদ অভ্যন্তরীণ ও বাইরের প্রার্থীদের বিবেচনা করে দেখবে। এ মুহূর্তে এইচএসবিসির বৈশ্বিক বাণিজ্যিক ব্যাংকিং ইউনিটের প্রধান নোয়েল কুইন অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পালন করবেন।

এখন পর্যন্ত ফ্লিন্টকে অপসারণের কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানায়নি এইচএসবিসি। তবে কৌশল বাস্তবায়নের গতি এবং ফলাফল নিয়ে টাকার ও ফ্লিন্টের মতপার্থক্যের ফলে তাকে অপসারণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। বিষয়সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি জানিয়েছেন, মূলত মুনাফা প্রবৃদ্ধি জোরদারে ব্যয়সংকোচন ও জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপকদের আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে ফ্লিন্টের নমনীয় দৃষ্টিভঙ্গি এ মতপার্থক্য সৃষ্টি করেছে।

এদিকে সিইওর আকস্মিক অপসারণের ঘোষণা দেয়ার পর এইচএসবিসি কয়েক হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা করছে বলে গতকাল ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে। সংবাদপত্রটিকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে এইচএসবিসির প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা ইউইন স্টিভেনসন জানান, ঊর্ধ্বতন পদগুলোও ছাঁটাইয়ের লক্ষ্যের মধ্যে রয়েছে। এর মাধ্যমে ব্যাংকটির ৪ শতাংশ পর্যন্ত মজুরি ব্যয় সাশ্রয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে। পরিকল্পনা অনুসারে এইচএসবিসি কর্মী ছাঁটাই ও কর্মসংস্থান হ্রাস—উভয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।

ওয়াল স্ট্রিটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ ব্যাংকটির ২ লাখ ৩৭ হাজার ৬৮৫ কর্মীর ২ শতাংশ পর্যন্ত ছাঁটাই হতে পারে। উল্লেখ্য, ব্রিটিশ আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির ৮০ শতাংশের বেশি মুনাফা অর্জিত হয় এশিয়া থেকে।

 

 

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন