বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত তাঁত : ঈদের মৌসুমে কর্মহীন সিরাজগঞ্জের তাঁতিরা

বণিক বার্তা প্রতিনিধি সিরাজগঞ্জ

প্রতি বছর ঈদের সময় দম ফেলার ফুরসত মেলে না সিরাজগঞ্জের তাঁতিদের। দুই ঈদের মৌসুমে কাপড় বুনতে তাদের ব্যস্ত থাকতে হয় দিন-রাত। কিন্তু এবার আর সপ্তাহকাল পরই কোরবানির ঈদ হলেও তাদের হাতে কোনো কাজ নেই। সাম্প্রতিক বন্যায় জেলাজুড়ে তাঁতযন্ত্রের ক্ষতি হওয়ায় তারা নতুন করে এখনই উৎপাদনে যেতে পারছেন না।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে সিরাজগঞ্জ সদর, বেলকুচি, চৌহালী, উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুরের তাঁতপল্লীগুলো কর্মব্যস্ত থাকার কথা থাকলেও পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিপরীত। বন্যার পানিতে ১০-১২ দিন তলিয়ে থেকে তাঁতগুলো কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে এমন তাঁতের সংখ্যা অন্তত তিন হাজার। ক্ষতিগ্রস্ত এসব তাঁত মেরামত শেষে উৎপাদন উপযোগী করতে আরো অন্তত এক সপ্তাহ সময় প্রয়োজন। তাই বন্যার পানি নেমে গেলেও তাঁত মালিকরা এখনই উৎপাদন শুরু করতে পারছেন না। এ অবস্থায় কাজে ফিরতে পারছেন না শ্রমিকরাও। তাছাড়া প্রতিটি তাঁত মেরামতে ১৫-২০ হাজার টাকা সংগ্রহেও তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

এদিকে তাঁত বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন জেলার অসংখ্য তাঁত শ্রমিক। কাজ না থাকায় তারা পরিবারের দৈনন্দিন খরচও জোগাড় করতে পারছেন না। তাই ঈদু উদযাপনেও তাদের কোনো প্রস্তুতি নেই।

বেলকুচির রাজাপুর ইউনিয়নের সারুটিয়া গ্রামের তাঁত মালিক হাসেন আলী জানান, বন্যার পানিতে তার চারটি তাঁত ও তাঁতে থাকা কাপড় নষ্ট হয়ে গেছে। এখন প্রতিটি তাঁত চালু করতে কমপক্ষে ২০ হাজার করে টাকা লাগবে। কিন্তু সেই টাকা তিনি জোগাড় করতে পারছেন না।

একই গ্রামের তাঁত মালিক সাখাওয়াত আলী বলেন, আমার ১২টি তাঁতের মধ্যে তিনটি নষ্ট হয়ে গেছে। বন্যার কারণে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে প্রায় দুই সপ্তাহ। এ অবস্থায় ঈদের বাজার ধরা কঠিন হয়ে পড়বে। একই কথা জানান উপজেলার উত্তর সারুটিয়া গ্রামের তাঁত মালিক বাবলু শীল। তার তাঁতের ঘর পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়েছে চারটি তাঁত ও সঙ্গে থাকা কাপড়। এতে তার ক্ষতি হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা।

বেলকুচির রান্ধুনীবাড়ির তাঁত শ্রমিক আব্দুস সালাম ও মো. বাবু বলেন, বন্যার কারণে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে হাতে কোনো কাজ নেই। তাঁত চালু হতে আরো অন্তত তিন-চারদিন সময় লাগবে। বেকার বসে থেকে তারা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। ঈদের প্রস্তুতি তো দূরের কথা, এখন সংসারের খরচ মেটাতেই তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম সাইফুর রহমান জানান, তার উপজেলায় তাঁত শ্রমিকদের মাঝে চাল বিতরণ শুরু করেছেন। এরই মধ্যে ৭০০ শ্রমিককে ১০ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সবাইকে এ চাল দেয়া হবে, যতদিন না তারা কাজে ফিরতে না পারছেন। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত তাঁত মালিকদেরও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণ করা হবে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহম্মাদ বলেন, বন্যার কারণে সিরাজগঞ্জে ফসল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাটের পাশাপাশি তাঁত শিল্পও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কী পারিমাণ তাঁত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। বন্যার পানি সম্পূর্ণ নেমে গেলে সঠিক হিসাব জানা যাবে।

তিনি আরো বলেন, তাঁত সিরাজগঞ্জের জেলা ব্র্যান্ডিং হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ফলে গুরুত্বপূর্ণ এ শিল্পের দিকে সরকার ও জেলা প্রশাসনের নিয়মিত নজরদারি ও মনিটরিং রয়েছে। বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে জেলার তাঁতিদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, সিরাজগঞ্জে মোট ১৪ হাজার ৮৭০টি কারখানায় ৪ লাখ ৫ হাজার ৬৭৯টি বিভিন্ন ধরনের তাঁত রয়েছে। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত জেলার ৪৬ হাজার ৪০৩টি পরিবার। আর কর্মসংস্থান হয়েছে ২ লাখ ৮ হাজার ১৫৬ জনের।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন