এশিয়ার বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমাবে সৌদি আরব

বণিক বার্তা ডেস্ক   

মধ্যপ্রাচ্যের বেঞ্চমার্কে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাজারে মন্দা ভাব চলছে। এ অবস্থায় এশিয়ার বাজারে রফতানি বাড়াতে চায় জ্বালানিপণ্যটির রফতানিতে শীর্ষে থাকা সৌদি আরব। আগামী সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধে এশিয়ার বাজারে পণ্যটির দাম কমিয়ে আনবে দেশটি। এশিয়ার ক্রেতাদের ওপর করা জরিপের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্স।

এ সময়ে আরব ফ্লাগশিপে লাইট ক্রুডের অফিশিয়াল সেলিং প্রাইস (ওএসপি) প্রতি ব্যারেলে কমপক্ষে ৫০ সেন্ট কমে যাবে। আর জ্বালানিপণ্যটির প্রিমিয়াম ব্যারেলপ্রতি ২ ডলার কমে যাবে, যা প্রথমবারের মতো চার মাসের মধ্য সর্বনিম্ন।

এশিয়ার বাজারে রিয়াদের জ্বালানি তেলের দাম কমানোর ফলে পণ্যটির স্পটমূল্য এবং দুবাইয়ের ভবিষ্যৎ সরবরাহ চুক্তি বাজারের সঙ্গে এক ধরনের ব্যাকওয়ারডেশন (যেখানে ভবিষ্যৎ চুক্তি বাজারের চেয়ে স্পটমূল্য বেশি) ধারা তৈরি করবে। যেখানে জুন থেকে জুলাইয়ে জ্বালানিপণ্যটির দাম ব্যারেলপ্রতি ৭০ সেন্ট কমে এসেছে।

অন্যদিকে উত্তর এশিয়ার কয়েকটি পরিশোধন কেন্দ্রে সংস্কার কাজ চলার কারণে শরত্কালে জ্বালানিপণ্যটির চাহিদা কম ছিল। যার ফলে এখন সেপ্টেম্বর সরবরাহ চুক্তিতে এ অঞ্চলে জ্বালানিপণ্যটির চাহিদা অব্যাহতভাবে বাড়ছে।

রয়টার্সের জরিপে অংশ নেয়া একজন ক্রেতা মনে করেন, মিডিয়াম ও হেভি ক্রুড এবং লাইট ক্রুডের মধ্য মূল্য কমিয়ে সমন্বয় আনতে সহায়তা করবে।

এশিয়ার ক্রেতারা মনে করেন, সেপ্টেম্বরে আরব হেভি ক্রুডের অফিশিয়াল সেলিং প্রাইস (ওএসপি) অপরিবর্তিত থাকবে। তবে অনেক ক্রেতা মনে করেন, এ সময়ে আরব মিডিয়াম ক্রুডের ওএসপি ব্যারেলপ্রতি ২০ থেকে ৪০ সেন্ট কমে যাবে।

সৌদি আরব সাধারণত প্রতি মাসের ৫ তারিখে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ওএসপি প্রকাশ করে, যা ইরান, কুয়েত ও ইরাকের জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণের ওপর প্রভাব ফেলে। একই সঙ্গে প্রতিদিন এশিয়ার বাজারে প্রবেশ করা ১ কোটি ২০ লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেলের দামের ওপরও প্রভাব ফেলে এটি।

এদিকে এশিয়ার বাজারে সৌদি আরবের জ্বালানি তেলের দাম কমানোর আভাসে ইরাকের রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি এসওএমও সেপ্টেম্বরে অপরিশোধিত জ্বালানিপণ্যটির ওএসপির বিষয়টি নতুন করে বিবেচনা করতে পারে।

ইরান ও ভেনিজুয়েলার ওপর নতুন করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ায় দেশ দুটির জ্বালানি তেলের রফতানি বাজার সংকুচিত হয়ে এসেছে। ভারত, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানসহ এশিয়ার দেশগুলো ইরান ও ভেনিজুয়েলার জ্বালানি তেলের বড় ক্রেতা। তাই এ দুই দেশ থেকে আমদানি করতে না পারায় এশিয়ার দেশগুলো অপরিশোধিত জ্বালানি তেল কিনতে সৌদি আরবের দিকে ঝুঁকেছে। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে এশিয়ার বাজারে আধিপত্য বিস্তার করতে জ্বালানিপণ্যটির দাম কমিয়ে আনছে সৌদি আরব।

এরই মধ্যে ইরান থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি কমিয়েছে আমদানিকারকদের শীর্ষে থাকা চীন। চলতি বছরের জুনে ইরান থেকে জ্বালানি তেলের আমদানি ৬০ শতাংশ কমিয়ে এনেছে দেশটি। মে মাসে ইরান থেকে দৈনিক ২ লাখ ৫৪ হাজার ১৬ ব্যারেল জ্বালানি তেল আমদানি করেছিল দেশটি। সেখানে জুনে ইরান থেকে দেশটির আমদানি কমে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮ হাজার ২০৫ ব্যারেল।

অন্যদিকে চলতি বছরের জুনে সৌদি আরব থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ জ্বালানিপণ্য আমদানি করেছে চীন। এ সময়ে সৌদি আরব থেকে জ্বালানিপণ্যটির আমদানি গত বছরের তুলনায় ৮৪ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। এ সময়ে সৌদি আরব থেকে চীনের বাজারে ৭৭ লাখ ২০ হাজার ব্যারেল জ্বালানি তেল রফতানি হয়েছে।

ওপেক ও ওপেক প্লাস জোটের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী, ২০২০ সাল পর্যন্ত জ্বালানিপণ্যটির উৎপাদন বাড়াতে পারবে সৌদি আরব। সে অনুযায়ী, গত জুলাইয়ে দেশটিতে দিনে ৯৬ লাখ ৫০ ব্যারেল জ্বালানি তেল উত্তোলন করা হয়েছে। যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এখন এশিয়ার বাজারে রফতানি করছে সৌদি আরব।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন