বিজিএমইএর দাবি : অ্যাকর্ডের নতুন নতুন শর্তে ত্রুটি সংশোধনে ব্যর্থতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

পোশাক কারখানার অগ্নিনিরাপত্তায় অ্যাকর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী উপকরণ কিনছেন মালিকরা। কিন্তু এসব উপকরণ স্থাপনের পর তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সক্রিয় করার ধাপে বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন তারা। শিল্প মালিকদের দাবি, অগ্নিনিরাপত্তা উপকরণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সক্রিয় করার ধাপে এসে অ্যাকর্ড নতুন নতুন শর্ত জুড়ে দিচ্ছে। এ কারণেই ব্যর্থ হতে হচ্ছে তাদের।

পোশাক কারখানার অগ্নিনিরাপত্তা নিয়ে রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে গতকাল এক কর্মশালার আয়োজন করে বিজিএমইএ। ‘ওয়ার্কশপ অন ফায়ার সেফটি ইস্যুজ অ্যান্ড টেকনিক্যাল গাইডলাইন’ শীর্ষক দিনব্যাপী এ কর্মশালার মধ্যভাগে আয়োজন করা হয় প্রেস ব্রিফিংয়ের। সেখানে কারখানায় অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিতে মালিক ও অ্যাকর্ডের কর্মসূচির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা হয়। অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিতে মালিকদের বারবার ব্যর্থতার কারণ ও অ্যাকর্ডের তালিকাভুক্ত কারখানার ব্যবসা বন্ধের বিষয়েও সাংবাদিকদের অবগত করা হয়।

গতকাল বিজিএমইএর আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক, সিনিয়র সহসভাপতি ফয়সাল সামাদ ও পরিচালক মিরান আলী, শরিফ জহির, মোহাম্মদ আবদুল মোমেন। এছাড়া বুয়েটের অধ্যাপক ড. মাকসুদ হেলালি এবং অ্যাকর্ডের চিফ সেফটি ইন্সপেক্টর স্টিফেন কুইনও এতে অংশ নেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ের শুরুতে শরিফ জহির বলেন, কিছু বিষয়ে আমরা কারখানার পক্ষ থেকে সমস্যা পাচ্ছি, যেগুলো আমরা আজ অ্যাড্রেস করলাম। এ সমস্যাগুলোর সমাধান না করলে আমাদের সম্পন্ন করা কাজগুলো নিয়ে ক্রেতাদের সামনে যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হবে, সেগুলো যথাযথভাবে উপস্থাপিত হবে না। এসব কারণেই আজকে সিদ্ধান্ত হয়েছে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করার, যে বিভ্রান্তিগুলো আছে সেগুলো আমরা সমাধান করতে পারি।

ড. রুবানা হক বলেন, স্থাপত্য ও বিদ্যুৎ এই বিষয়গুলোতে আমাদের কারখানাগুলো খুব ভালো করেছে। কিন্তু অগ্নিসংক্রান্ত বিষয়ে এসে আমরা কোনোমতেই ভালো করতে পারছি না। একেকটা কারখানা চার-পাঁচবার করে পরিদর্শন হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে পরিদর্শনের ফলাফল বা ফাইন্ডিংস ৩৫টা পর্যন্ত চলে যাচ্ছে। যে বিষয়টি প্রথম পরিদর্শনে ধরা পড়া উচিত ছিল, সেটি তিন বা চারটা পরিদর্শনের পর ধরা হচ্ছে। তখন ওই নতুন বিষয়টিকে নতুন ফাইন্ডিংস হিসেবে যখন দিচ্ছে, তখন আমাদের আর সময় থাকছে না তা সংশোধনের। যদিও আমাদের সময় গড়িয়ে যাচ্ছে।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, অ্যাকর্ডের নিজস্ব বিশেষজ্ঞ না থাকায় তারা ২০১৭ সালে নতুন ফার্মের সঙ্গে চুক্তি করে বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেয়। ওরা বাংলাদেশে আসার পর থেকে একাধিকবার কারখানা পরিদর্শন করেছে এবং প্রত্যেকবারই নতুন কিছু সুপারিশ করেছে। তারা বলছে, এতে করে আমাদের ভালো হবে। কিন্তু আমাদের কথা হচ্ছে, ওই বিষয়গুলো তো ২০১৩ সালে জানার কথা ছিল আমাদের। কিন্তু ২০১৮, ২০১৯ সালে এসে যখন এতগুলো নতুন সুপারিশ নিয়ে আসা হয়, তখন কোনো কারখানাই সেগুলো আর রাখতে পারছে না। যার কারণে আমাদের কাজ সম্পন্ন করতে বিলম্ব হচ্ছে এবং অগ্রগতির হারও তাই অগ্নিসংক্রান্ত বিষয়ে কম।

রুবানা হক আরো বলেন, অ্যাকর্ড বাংলাদেশের বাইরে থেকে এক্সপার্ট এনেছে ভালো। সমস্যা হচ্ছে প্রথমত তারা দেরিতে এসেছে, দ্বিতীয়ত তাদের সুপারিশ বাস্তবায়ন না হলে সংশ্লিষ্ট কারখানাকে শাস্তিও দেয়া হচ্ছে। এটা অনুচিত। যে মুহূর্তে অ্যাকর্ড বলছে, অগ্রগতি শ্লথ, সঙ্গে সঙ্গেই ক্রেতা বলছে আমি আর ব্যবসা দেব না তোমাদের। ফলে ব্যবসা সংকুচিত হচ্ছে। এটার দায়ভার কে নেবে? এ প্রেক্ষাপটে আমরা একটা ফাস্ট ট্র্যাক ফায়ার কমিটি তৈরি করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছি, যেখানে আমাদের জাতীয় বিশেষজ্ঞও থাকবেন। প্রয়োজন মনে না করলে আমাদের কাউকে রাখারও দরকার নেই, কিন্তু জাতীয় বিশেষজ্ঞ থাকতে হবে। বর্তমানে এসকেলেশন বা ব্যবসা বন্ধের প্রক্রিয়ায় প্রায় ৪০০ কারখানা আছে বলে জানান ড. রুবানা হক।

উল্লেখ্য, অগ্নিনিরাপত্তাবিষয়ক কারখানার সংশোধন কার্যক্রম পর্যালোচনায় বিজিএমইএ দেখেছে, অ্যাকর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী অগ্নিনিরাপত্তা সংস্কারের পদক্ষেপগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং সক্রিয় করার (টিঅ্যান্ডসি: টেস্টিং অ্যান্ড কমিশনিং) ধাপেই কারখানাগুলো ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। কোনো কারখানাই পূর্ণাঙ্গ সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে পারছে না। ফলে টিঅ্যান্ডসি ধাপে ব্যর্থতার হার ৯৫ শতাংশ। এ প্রেক্ষাপটেই গতকালের কর্মশালাটির আয়োজন করে বিজিএমইএ। এদিকে অ্যাকর্ডের তথ্যমতে, তালিকাভুক্ত কারখানাগুলোর নিরাপত্তাবিষয়ক সার্বিক অগ্রগতি ৫৪ শতাংশ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন