মুদ্রানীতির প্রতিক্রিয়ায় এফবিসিসিআই : খেলাপি ঋণের দুর্বিষহ বোঝা বিনিয়োগের অন্তরায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বৃদ্ধিতে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহে চাপ সৃষ্টির আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য মুদ্রানীতি নিয়ে গতকাল এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ প্রতিক্রিয়া জানায় সংগঠনটি। তাদের মতে, এর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উৎপাদনশীল খাত। এছাড়া ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের দুর্বিষহ বোঝা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে বলেও জানানো হয়েছে।

এফবিসিসিআই জানিয়েছে, মূল্যস্ফীতি নিম্নমুখী রেখে উচ্চতর হারে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে। অর্থবছরের সঙ্গে মিল রেখে এক বছর মেয়াদি মুদ্রানীতি প্রণীত হওয়ায় মুদ্রানীতি এবং বাজেট ও রাজস্ব নীতির মধ্যে সমন্বয় থাকবে বলে এফবিসিসিআই মনে করে। তবে উচ্চতর প্রবৃদ্ধিকে ধরে রাখতে ব্যবসাবান্ধব মুদ্রানীতি ও ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে এফবিসিসিআই।

ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ, যেখানে পূর্ববর্তী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি নির্ধারিত ছিল ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ, এমন তথ্য উল্লেখ করে এফবিসিসিআই বলছে, উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনে ব্যাপক বিনিয়োগ প্রয়োজন। সহজলভ্য ঋণপ্রবাহ ছাড়া কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন সম্ভব নয়। বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে দেয়ায় এ খাতে ঋণপ্রবাহ সংকুচিত হতে পারে, যা বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত ও বাধাগ্রস্ত করবে। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও বিনিয়োগের স্বার্থে এ খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা হ্রাস করা সংগত নয় বলে এফবিসিসিআই মনে করে।

অন্যদিকে ঘোষিত মুদ্রানীতিতে সরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি করে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ করা হয়েছে, যেখানে গত অর্থবছরে এ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৯ শতাংশ, এমন তথ্য উল্লেখ করে এফবিসিসিআই বলেছে, সরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বৃদ্ধি করায় তা বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের ক্ষেত্রে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এতে উৎপাদনশীল খাত, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বেসরকারি খাতের জন্য এফবিসিসিআই ঋণের উচ্চতর প্রবৃদ্ধি সংকুলানের সুযোগ রাখার আহ্বান জানিয়েছে।

ঘোষিত মুদ্রানীতি যথাযথভাবে বাস্তবায়নে মনিটরিং জোরদার করার আহ্বান জানিয়ে সংগঠনটি বলেছে, জাতীয় উচ্চতর প্রবৃদ্ধিকে আরো গতিশীল করার স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী সব ব্যাংকে এক অংকের (সিঙ্গেল ডিজিট) সুদহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে এফবিসিসিআই মনে করে। এখনো প্রায় সব বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সুদের হার এক অংকের উপরে রেখেছে। এফবিসিসিআই মনে করে, শিল্পায়নের স্বার্থে সব বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের ঋণের সুদের হার অবিলম্বে এক অংকে নামিয়ে আনবে।

ব্যাংকিং খাতে নন-পারফর্মিং লোন (এনপিএল) বা খেলাপি ঋণের বিষয়টি একটি সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, দীর্ঘদিন ধরে এ দুর্বিষহ বোঝা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে। ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে আরো দক্ষ ও বিনিয়োগবান্ধব করতে খেলাপি ঋণ কমানোর প্রচেষ্টা আরো বাড়াতে হবে। এজন্য ব্যাংকগুলোর ঝুঁকি ব্যবস্থাপনাকে আরো জোরদার করা প্রয়োজন।

সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নপূরণের ধারাবাহিকতায় দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড ও পেপারলেস ব্যাংকিং কার্যক্রমে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে স্বচ্ছ, যুগোপযোগী ও আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মনিটরিং ও সুপারভিশনকে আরো নিবিড় ও জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছে এফবিসিসিআই।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন