চট্টগ্রাম কৃষি অঞ্চল : অনাবৃষ্টিতে কমেছে আউশ আবাদ, পূরণ হয়নি লক্ষ্যমাত্রা

নিজস্ব প্রতিবেদক চট্টগ্রাম ব্যুরো

২০১৯-২০ আউশ মৌসুমে চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাঁচ জেলায় প্রায় ১ লাখ ৩৪ হাজার হেক্টর জমিতে ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। তবে লক্ষ্যমাত্রা তো পূরণ হয়ইনি, উল্টো আবাদ কমে এক লাখ হেক্টরের নিচে নেমে এসেছে। এমনকি তা গত ২০১৮-১৯ মৌসুমের চেয়েও প্রায় ১৯ হাজার হেক্টর কম। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, মৌসুমের শুরুতে অনাবৃষ্টির কারণে এবার আউশ ধানের আবাদ কম হয়েছে। আবার মৌসুমের শেষ দিকে ভারি বর্ষণের কারণে অনেক ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এসব কারণে এবার ধান উৎপাদনও অনেক কম হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ আউশ মৌসুমে এ অঞ্চলের চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলায় প্রায় ১ লাখ ৩৩ হাজার ৮৩০ হেক্টর জমিতে ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ৩০ জুন মৌসুম শেষে আবাদ হয়েছে ৯৮ হাজার ৭০৯ হেক্টর জমিতে, যা লক্ষ্যমাত্রার থেকে ৩৫ হাজার হেক্টর কম। গত ২০১৮-১৯ মৌসুমে এসব জেলায় সব মিলিয়ে প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ ধান আবাদ হয়েছিল। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে আউশ আবাদ কমেছে প্রায় ১৯ হাজার হেক্টর।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমাতে সরকারিভাবে আউশ আবাদে জোর দেয়া হচ্ছে। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রণোদনা দেয়া সত্ত্বেও চট্টগ্রাম অঞ্চলে আউশের আবাদ কমে যাচ্ছে। এ অঞ্চলের কৃষকরা ২০১০-১১ অর্থবছরে ১ লাখ ৭১ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে আউশের আবাদ করেছিলেন। ১০ বছরের ব্যবধানে এ অঞ্চলে আউশের আবাদ কমেছে প্রায় ৭৩ হাজার হেক্টর। জলবায়ু পরিবর্তন ও সময়মতো বৃষ্টিপাত না হওয়া আউশ আবাদ কমে যাওয়ার কারণ। এছাড়া কৃষক বাজারে সঠিক দাম না পাওয়ায় এ ধান আবাদে আগ্রহ হারাচ্ছেন।

চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার কৃষক আনোয়ার আলী জানান, আউশের মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় অনেকে ধানের আবাদ করতে পারেননি। সেচ দিতে গেলে খরচ বেশি পড়ে যাওয়ার কারণে অনেকে আগ্রহ থাকলেও আউশের আবাদ করেননি। কারণ বাজারে ভালো দাম পাওয়া যায় না।

জেলাভিত্তিক আউশ ধান আবাদের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এবার চট্টগ্রাম জেলায় আউশ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৪২ হাজার ৫০০ হেক্টর ধরা হলেও আবাদ হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার ৯০২ হেক্টর জমিতে। ২০১৮-১৯ মৌসুমে এ জেলায় ৩৫ হাজার ৮৮১ হেক্টর জমিতে আউশ ধান আবাদ হয়েছিল। ২০১৯-২০ মৌসুমে কক্সবাজারে ৪ হাজার ৫৬০ হেক্টর জমিতে আউশ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৭৪৫ হেক্টর জমিতে। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ জেলায় আউশ আবাদ হয়েছিল ৪ হাজার ৩৪২ হেক্টর জমিতে।

এবার নোয়াখালীতে আউশ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৪৪ হাজার ১৮০ হেক্টর নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে প্রায় ৩৬ হাজার ৬৫৭ হেক্টর জমিতে। গত ২০১৮-১৯ মৌসুমে এ জেলায় আউশ আবাদ হয়েছিল ৪০ হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে। ২০১৯-২০ মৌসুমে ফেনীতে ১২ হাজার হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আউশ আবাদ হয়েছে প্রায় ৫ হাজার ২৫৫ হেক্টর জমিতে। গত ২০১৮-১৯ মৌসুমে এ জেলায় আউশ আবাদ হয়েছিল ৯ হাজার ২২৫ হেক্টরে। এবার লক্ষ্মীপুরে ৩০ হাজার ৫৯০ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আবাদ হয়েছে প্রায় ১৮ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে। গত ২০১৮-১৯ মৌসুমে এ জেলায় আউশ আবাদ হয়েছিল ২৮ হাজার ৩৯ হেক্টর জমিতে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক আলতাফ হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণে আউশ আবাদ লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক কম হয়েছে। তাছাড়া সম্প্রতি এ অঞ্চলে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে আউশের অনেক ক্ষতি হয়েছে। যার কারণে এ অঞ্চলে আবাদ কমার পাশাপাশি ধান উৎপাদনও কমে যাবে। তার পরও আমরা মাঠপর্যায়ে কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি, যেন আবাদ কম হলেও উৎপাদন কমে না যায়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন