স্বস্তির এসি বাসে ভাড়া নিয়ে অসন্তোষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকার গণপরিবহন নিয়ে যাত্রীসাধারণের অস্বস্তি-ভোগান্তি চরমে। ভাঙাচোরা কাঠামো ও তেল চিটচিটে সিটের বাসগুলোয় ঠাসাঠাসি করে যাত্রী তোলা হয়। গ্রীষ্মকালে গরমে হাঁসফাঁস, সঙ্গে যানজট!

এ পরিস্থিতিতে কিছুটা স্বস্তি এনেছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) বাস। তীব্র গরম ও যানজটের এ শহরে কর্মমুখী মানুষকে আকর্ষণ করতে পেরেছে পরিচ্ছন্ন সিটের এসব পরিবহন। যদিও ভাড়া নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আর এসব বাসের ভাড়া নির্ধারণে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষও (বিআরটিএ) হস্তক্ষেপ করছে না।

বেশ কয়েক বছর আগে ঢাকার অন্যতম ব্যস্ত রুট উত্তরা-মতিঝিলে ৩০টি এসি বাস চালু করে রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন সংস্থা বিআরটিসি। যানজটপ্রবণ এ রুটে এসব বাস চালুর পর পরই বেশ জনপ্রিয় হয়। অফিস শুরু ও শেষের সময় এসব বাসে আসন না পেয়ে অনেককে দাঁড়িয়ে যাতায়াত করতেও দেখা যায়।

এরপর ২০১৬ সালের আগস্টে রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান-বনানীতে চালু হয় এসি বাস ‘ঢাকা চাকা’। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে এটি পরিচালনা করছে নিটল মোটরস লিমিটেড। বর্তমানে তেজগাঁও-গুলশান লিংক রোডের নাভানা মোড় থেকে শুরু হয়ে গুলশান শুটিং ক্লাব, গুলশান-১ ও রূপায়ণ টাওয়ার হয়ে গুলশান-২ এবং বনানীর কাকলী মোড় থেকে শুরু হয়ে বনানী বাজার ও গুলশান-২ নম্বর হয়ে বারিধারার নতুন বাজার—এ দুই রুটে চলছে ঢাকা চাকা। চালুর পর থেকেই বেশ জনপ্রিয় হয়েছে এটি।

গত বছরের মার্চে মতিঝিল-আব্দুল্লাহপুর রুটেও চালু হয় ঢাকা চাকা। প্রতিদিন মতিঝিল-গুলিস্তান-রামপুরা-বাড্ডা-কুড়িল বিশ্বরোড-আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত চলাচল করছে এ বাস। ভাড়া ৬০-১০০ টাকা।

নিটল নিলয় গ্রুপের সহায়তায় গ্রীন ঢাকা প্রাইভেট লিমিটেড এ সেবা পরিচালনা করছে। ঢাকা চাকা নামের বাসগুলোই পরে গ্রীন ঢাকা নামে ব্র্যান্ডিং করা হয়েছে। টাটা মোটরসের তৈরি এসব বাসের আসন সংখ্যা ৫০।

ঢাকার আরেকটি ব্যস্ততম রুট মতিঝিল-সাভার। এ রুটে গত ৩ মে থেকে এসি বাস নামিয়েছে বিআরটিসি। মতিঝিল থেকে গুলিস্তান, ফার্মগেট হয়ে সাভার পর্যন্ত বর্তমানে ২০টি বাস চলাচল করছে। রুটটিতে আরো ১০টি বাস যুক্ত হবে বলে জানা গেছে।

‘লাল সবুজ’ নামে এ বাসগুলোয় সর্বোচ্চ ভাড়া ছিল ১৫০ টাকা। তবে যাত্রীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পরে কমিয়ে ১২০ টাকা করা হয়েছে। তবে সর্বনিম্ন ভাড়া আগের মতোই (৫০ টাকা) রয়ে গেছে।

এর বাইরে উত্তরা চক্রাকার, ধানমন্ডি চক্রাকার নামেও ঢাকায় এসি বাস পরিচালনা করছে বিআরটিসি। এছাড়া একাধিক বেসরকারি কোম্পানি ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে এসি বাস পরিচালনা করছে।

রাজধানীর গণপরিবহন ব্যবস্থাপনায় এসি বাস আমূল পরিবর্তন আনতে পারে বলে মনে করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহবুব আলম তালুকদার। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ঢাকার যানজটের প্রধান কারণ ব্যক্তিগত গাড়ির আধিক্য। এসব গাড়ির বিকল্প হিসেবে ঢাকায় ভালো ভালো বাস যেগুলোয় এসিসহ সব আধুনিক সুবিধা থাকবে, সেগুলো নামানো গেলে ব্যক্তিগত গাড়ির প্রতি মানুষের নির্ভরশীলতা কমে আসবে।

এদিকে এসি বাস কর্মব্যস্ত মানুষের জন্য স্বস্তি এনে দিলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা একেবারে নগণ্য। তাছাড়া এ সেবা এখনো বিআরটিএর নিয়ন্ত্রণে না থাকায় ভাড়া নির্ধারণে শৃঙ্খলার অভাব রয়েছে। সম্প্রতি যাত্রী অসন্তোষের মুখে সাভার-মতিঝিল রুটে বিআরটিসির বাসে ভাড়া কমালেও বেসরকারি কোম্পানিগুলোর ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগ উপেক্ষিতই রয়ে গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গ্রীন ঢাকা প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মমিনুল্লাহ মামুন বলেন, চাহিদা থাকলেও ঢাকায় এসি বাস তেমন একটা নেই। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসের রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বেশি। এছাড়া যানজটের কারণে ট্রিপও কম হয়। ভাড়া থেকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখেই ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।

বেসরকারি এসি বাসের ভাড়া সমন্বয়ের ব্যাপারে বিআরটিএর কিছু করার আছে কিনা জানতে চাইলে সংস্থাটির পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানি বলেন, এসি বাসের ভাড়া বিআরটিএ নির্ধারণ করে না। মালিকরাই ভাড়া নির্ধারণ করেন। এর পরও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে বিষয়টি নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন