৩০ হাজার কোটি ডলারের চীনা পণ্যে শুল্কারোপ ট্রাম্পের

পাল্টা পদক্ষেপের ঘোষণা বেইজিংয়ের

বণিক বার্তা ডেস্ক

চীনের আরো ৩০ হাজার কোটি ডলার সমমূল্যের পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্মার্টফোন, পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যে আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে এ শুল্ক কার্যকর হতে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে একটি টুইটের মাধ্যমে নতুন এ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। খবর বিবিসি ও ব্লুমবার্গ।

চীনের সঙ্গে বিপুল বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়ে গত বছর থেকে বেইজিংয়ের রফতানি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ শুরু করে ট্রাম্প প্রশাসন। বাণিজ্য উত্তেজনা কমাতে এ বছর ওয়াশিংটন ও বেইজিং কয়েক দফা বৈঠকও করেছে। গত সপ্তাহে দুই দেশের প্রতিনিধিদের সর্বশেষ দফা বৈঠক হয়। আর এরপর বৃহস্পতিবার টুইটারে ট্রাম্প নতুন করে আরো ৩০ হাজার কোটি ডলারের চীনা পণ্যে শুল্কারোপের ঘোষণা দেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের এ ঘোষণার ফলে ‘কার্যত’ সেপ্টেম্বর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানীকৃত সব চীনা পণ্যেই শুল্ক বসতে যাচ্ছে।

সাংহাইয়ে গত সপ্তাহের বৈঠকে চীন ‘আরো বেশি মার্কিন কৃষিপণ্য নেয়ার প্রতিশ্রুতিকে সম্মান’ না দেখানোয় ট্রাম্প দেশটির কড়া সমালোচনা করেন। টুইটার পোস্টে যুক্তরাষ্ট্রে ফেনটানিল বিক্রি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়ায় চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভও প্রকাশ করেন তিনি।

আলোচনা সম্পর্কে অবহিত ছয়জন ব্যক্তি ব্লুমবার্গকে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি রবার্ট লাইটহাইজার ও অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মানিউচিনের সঙ্গে চলতি সপ্তাহের শুরুতে অনুষ্ঠিত আলোচনায় চীনের পক্ষ থেকে নতুন কোনো প্রস্তাব আসেনি। এজন্য মে মাসে উভয় পক্ষ যে সম্ভাব্য চুক্তির প্রসঙ্গ টেনেছিল, তাকে বাস্তবে রূপ দিতে আলোচনায় অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। এ কারণে বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউজে বেইজিংয়ের ওপর চাপ বৃদ্ধির নীতি গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট পরে সাংবাদিকদের জানান, ৩০ হাজার কোটি ডলারের চীনা পণ্যে ‘স্বল্প সময়ের’ জন্য এ ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ধাপে ধাপে বেড়ে এটি ২৫ শতাংশও ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, ‘চীনের সঙ্গে এমনটা কারো না কারো অনেক আগেই করা উচিত ছিল।’

অন্য একটি টুইটে ‘একটি সমন্বিত বাণিজ্য চুক্তি বাস্তবায়নে চীনের সঙ্গে ইতিবাচক আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার’ অঙ্গীকার করেন ট্রাম্প এবং দুই দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

তবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। ব্যাংককে আসিয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের এক ফাঁকে তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যসংক্রান্ত বিরোধ মেটানোর জন্য শুল্ক আরোপ কোনো গঠনমূলক পথ নয়। সঠিক কোনো পথ নয় এটি।’

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনইয়াং পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি অতিরিক্ত শুল্ক কার্যকর করতে যায়, তাহলে প্রয়োজনীয় পাল্টা পদক্ষেপ গ্রহণ করবে চীন। শুক্রবার নিয়মিত সংবাদ বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, চীন কোনো ধরনের জোরজবরদস্তি, হুমকি, ব্ল্যাকমেইলিং মেনে নেবে না এবং প্রধান নীতিসংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনো আপস করবে না।

চীন কোন ধরনের পদক্ষেপ নেবে, সে বিষয়টি স্পষ্ট করেননি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র।

৩০ হাজার কোটি ডলারের চীনা পণ্যে ট্রাম্পের ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রভাব গিয়ে পড়েছে শেয়ারবাজারে। শুক্রবার বিশ্বের বিভিন্ন শেয়ারবাজারে শেয়ারদরে ব্যাপক দরপতন দেখা দেয়। ওয়াল স্ট্রিটে ডাও জোনস সূচকের পতন হয় ১ দশমিক ১০ শতাংশ। এশীয় শেয়ারবাজারেও একই প্রবণতা লক্ষ করা যায়। তেলের দামও বড় একটা হোঁচট খেয়েছে।

৩০ লাখ মার্কিন কোম্পানির প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন ইউএস চেম্বার অব কমার্স বলছে, চীনের ওপর সর্বশেষ দফা শুল্ক আরোপে আমেরিকান ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, কৃষক, শ্রমিক ও ভোক্তাদের ওপর বোঝা হিসেবে দেখা দেবে এবং শক্তিশালী মার্কিন অর্থনীতির ওপর চাপ হিসেবে দেখা দেবে।

উভয় পক্ষকে পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইউএস চেম্বার অব কমার্স।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন