ঈদের আগেই রেলে শিডিউল বিপর্যয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশন থেকে সকাল ৮টা ২৫ মিনিটে চিলাহাটীর উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল আন্তঃনগর ট্রেন নীলসাগর এক্সপ্রেসের। যদিও ট্রেনটি স্টেশন ছেড়েছে ৫৫ মিনিট দেরিতে, ৯টা ৩০ মিনিটে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় চিলাহাটী পৌঁছার কথা থাকলেও গতকাল সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ ফুলবাড়ী পর্যন্ত পৌঁছতে পারে ট্রেনটি। বিলম্ব প্রায় ৩ ঘণ্টা।

সিলেট থেকে বেলা ৩টায় ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসার কথা আন্তঃনগর পারাবত এক্সপ্রেসের। গতকাল নির্ধারিত সময়ের ২০ মিনিট পর রওনা হয় ট্রেনটি। সেখান থেকে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ জংশনে আসতেই ১ ঘণ্টা ৫ মিনিট দেরি করে পারাবত এক্সপ্রেস। ট্রেনটির ঢাকা পৌঁছার নির্ধারিত সময় রাত ১০টা ৩৫ মিনিট।

পারাবত এক্সপ্রেসের মতোই গতকাল নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ১ ঘণ্টা ৯ মিনিট পিছিয়ে ছিল আন্তঃনগর দ্রুতযান এক্সপ্রেস। সকাল ৭টা ২০ মিনিটে পঞ্চগড় থেকে ছেড়ে সন্ধ্যা ৭টায় ট্রেনটির অবস্থান ছিল ঢাকার জয়দেবপুর স্টেশনে। বেলা ২টা ৪০ মিনিটে কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও আন্তঃনগর কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস গন্তব্যে রওনা হয় ৩টা ৮ মিনিটে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ঢাকায় এসে পৌঁছার কথা থাকলেও ট্রেনটি গতকাল সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ টঙ্গী স্টেশনেই অবস্থান করছিল।

একইভাবে লালমনিরহাট থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর লালমনি এক্সপ্রেস ৪৫ মিনিট, ঢাকা থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া আন্তঃনগর সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ৪৭ মিনিট, রাজশাহী থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর পদ্মা এক্সপ্রেস ২৯ মিনিট ও ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া আন্তঃনগর কালনী এক্সপ্রেস ২৩ মিনিট বিলম্বে চলছিল। ট্রেনগুলোর এসব তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে এসএমএসে ট্রেন ট্র্যাকিং সেবা নিয়ে। গতকাল সন্ধ্যা নাগাদ যখন ট্রেনগুলোর তথ্য সংগ্রহ করা হয়, তখন অনেকগুলো ট্রেন গন্তব্যের উদ্দেশে চলাচল করছিল। সেক্ষেত্রে গন্তব্যে পৌঁছার পর বিলম্বের পরিমাণ আরো বেশি হতে পারে।

ঈদের আগেই শিডিউল বিপর্যয়ে পড়া এসব ট্রেন ঈদযাত্রায় আরো ভয়াবহ অবস্থায় চলে যাওয়ার শঙ্কা করছে যাত্রীরা। তবে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, শিডিউলে পিছিয়ে থাকা ট্রেনগুলোর কয়েকটি সাপ্তাহিক ছুটি কাটিয়ে ফের নির্ধারিত সময় মেনেই চলতে সক্ষম হবে।

বর্তমানে যেসব ট্রেন শিডিউল বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছে, তার মধ্যে লালমনি এক্সপ্রেস ও কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস চলমান বন্যার কারণে দেরি করছে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, চলমান বন্যায় সারা দেশে অন্তত ৬০ কিলোমিটার রেলপথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জামালপুর, দেওয়ানগঞ্জ, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের অনেক জায়গায় এখনো রেললাইনে বন্যার পানি রয়েছে। লালমনি ও কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেসের পাশাপাশি বন্যার কারণে শিডিউল বিপর্যয়ের শঙ্কায় রয়েছে ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ রুটের তিস্তা এক্সপ্রেস, সান্তাহার-বুড়িমারী রুটের করতোয়া এক্সপ্রেস, ঢাকা-তারাকান্দি রুটের অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস, ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রুটের এগারোসিন্দুর প্রভাতী ও এগারোসিন্দুর গোধুলি এক্সপ্রেস, ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ রুটের ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস, ঢাকা-রংপুর রুটের রংপুর এক্সপ্রেস, ঢাকা-মোহনগঞ্জ রুটের হাওড় এক্সপ্রেস ও চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ রুটের বিজয় এক্সপ্রেস।

গত ঈদুল ফিতরেও ভয়াবহ শিডিউল বিপর্যয়ে পড়েছিল একাধিক ট্রেন। ট্রেনের জন্য ঢাকার স্টেশনগুলোয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকে ঘরমুখী মানুষ। এবারো সে শঙ্কা রয়ে যাচ্ছে। ঈদের সময় ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের শঙ্কা কতটা জানতে চাইলে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, এমনিতে তেমন কোনো সমস্যা নেই। তবে বন্যার কারণে বিভিন্ন স্থানে রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেসব স্থানে ট্রেন ঘণ্টায় ১৫-২০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে চলতে পারছে না। এ কারণে কয়েকটি ট্রেনে ঈদের সময় শিডিউল বিপর্যয় হতে পারে।

বর্তমানে প্রতিদিন ৩৫২টি যাত্রীবাহী ট্রেন পরিচালনা করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ঈদ উপলক্ষে এগুলোর সঙ্গে যোগ দিচ্ছে আট জোড়া বিশেষ ট্রেন। ২২৬টি লোকোমোটিভ ছুটবে ১ হাজার ৪৩৭টি কোচ নিয়ে। ব্যাপক প্রস্তুতি সত্ত্বেও ঈদুল আজহার সময় রয়ে যাচ্ছে শিডিউল বিপর্যয়ের শঙ্কা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন গতকাল বণিক বার্তাকে বলেন, ঢাকার জয়দেবপুর ও টঙ্গী স্টেশনে পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেনগুলো এসে কমলাপুরের দিকে রওনা হয়। দুটি লাইন থাকা সত্ত্বেও এখানে এসে সিস্টেম লসে পড়ে একাধিক ট্রেন। পশ্চিমাঞ্চলগামী ট্রেনগুলো চলে বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দিয়ে। সেখানে একটা ট্রেন পার হতে সময় লাগে অন্তত ৪০ মিনিট। সেখানেও শিডিউল বিপর্যয় হয়। আর সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো সিংহভাগ রেলপথ সিঙ্গেল লাইন। এ কারণে বিভিন্ন স্টেশনে ট্রেনগুলোর যখন ক্রসিং হয়, তখনো অনেক ট্রেন শিডিউল বিপর্যয়ে পড়ে।

মন্ত্রী আরো বলেন, রেলপথ মন্ত্রণালয় রেলওয়ের অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরালে নতুন দুই লাইনের রেলসেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সিঙ্গেল লাইনগুলোকে ডাবল লাইন করা হচ্ছে। সব না হলেও গুরুত্বপূর্ণ রেলপথগুলো ডাবল লাইন হলে শিডিউল বিপর্যয়ের সমস্যাটি আর থাকবে না। সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন