বেসিক ব্যাংক ভালোভাবে চলবে না হয় বন্ধ হবে —অর্থমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক পরিচালক ও কর্মকর্তাদের সতর্ক করে দিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ব্যাংক ভালোভাবে চলবে, না হয় বন্ধ হবে। এটি নির্ভর করছে আপনাদের ওপর। একটা সময় পর্যন্ত সমর্থন দেব, কিন্তু তা কোনোভাবে সীমাহীন নয়। তবে ব্যাংকটি বন্ধ করতে চাই না। আশা করব, বেসিক ব্যাংক অতীত ঐতিহ্য ফিরে পাবে। টানা তিন বছর কোনো শাখা লোকসান করলে সে শাখা বন্ধ করে দেয়া হবে।

গতকাল রাজধানীর মতিঝিলের সেনাকল্যাণ ভবনে বেসিক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন এ মজিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম ও অতিরিক্ত সচিব ফজলুল হক। ব্যাংকের সার্বিক আর্থিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. রফিকুল আলম।

ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের হুঁশিয়ার করে দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ফেরত না দিয়ে খেলাপি হয়েছেন তাদের খুঁজে বের করা হবে। তাদের বিরুদ্ধে এজেন্সির লোক লাগানো হবে। তাদের ঠিকানা চিহ্নিত করা হবে। তাদের দেশের বাইরেও যেতে দেয়া হবে না। এখনো সময় আছে ব্যাংকের টাকা ফেরত দিন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, গত দুই বছর বেসিক ব্যাংকের যেসব শাখা লোকসান দিয়েছে, এ বছরও যদি তারা লোকসান দেয় তাহলে ওইসব শাখা বন্ধ করে দেয়া হবে। এটা আমার অনুরোধ নয়, নির্দেশ। বর্তমানে ব্যাংকটির ৩৬টি শাখা লোকসানে আছে।

বেশি বেতন নেয়া, কাজ না করা ও ঋণ বিতরণে অনিয়মের বিষয়ে কর্মকর্তাদের সাবধান করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২ হাজার ১০০ কর্মকর্তার কী কাজ আমি জানি না। একদিকে বেশি বেতন নিচ্ছেন, অন্যদিকে ব্যাংকের উন্নতি নেই। বেতন কার কত হবে এটা নিজেরা বসে নতুনভাবে ঠিক করে নিলে লোকসান অনেকটা কমে যাবে। মাসে ১ কোটি টাকা বাঁচাতে পারলেও অনেক সাশ্রয় হবে।

বেসিক ব্যাংক টিকে থাকবে নাকি বন্ধ হবে তা এর কর্মকর্তাদের ওপর নির্ভর করছে মন্তব্য করে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আপনাদের নিজেদের বেতন নিজেদের আয় করে নিতে হবে। এ বছরই লোকসানি শাখাগুলো লাভে আনার চেষ্টা করবেন। তবে আমরা সব সময় সরকারি বা জনগণের ব্যাংক হিসেবে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করব।

তিনি বলেন, বেসিক ব্যাংক আবার ঘুরে দাঁড়াবে আমার সেই বিশ্বাস আছে। এজন্য ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ হয়ে কাজটি করে যেতে হবে। অর্থের অভাবে কোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয় না। বন্ধ হয় ম্যানেজমেন্টের কারণে।

বেসিক ব্যাংকের মোট লোকসান ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা ঋণ পুনঃতফসিলের যে নীতিমালা করেছি, তাতে অনেক টাকা আদায় হবে। কারণ এরই মধ্যে ৩৮০ জন ঋণখেলাপি যোগাযোগ করেছেন। তাদের কাছে টাকার অংক ৪ হাজার ৬০০ কোটি। তাদের ৯ শতাংশ সুদে ঋণ পরিশোধের জন্য ১১ বছর সময় দেয়া হবে। আমি কারো ঋণ মওকুফ করতে পারব না। তবে লজিস্টিক সাপোর্ট দেব। আপনারা পুরনো ঋণগ্রহীতাদের সঙ্গে আবার যোগাযোগ করুন। তাদের আমার কাছে নিয়ে আসুন। আমাদের সফল হতে হবে। এজন্য আপনাদের কাজ আপনাদের করতে হবে। আমার কাজ আমি করব।

বেসিক ব্যাংকে স্পেশাল অডিট করানো হবে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ঋণ জালিয়াতির সঙ্গে কর্মকর্তাদের যোগসাজশ থাকলে শাস্তি কম-বেশি পেতে হবে। ঋণ বিতরণে কোনো কর্মকর্তার অবহেলা আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হবে। তবে যেসব খেলাপি ভুল স্বীকার করে আবার ব্যবসা করতে চায়, আমরা তাদের ক্ষমা করব। যেসব কর্মকর্তা কাজ করতে চান না, তাদের বিরুদ্ধে একবারেই চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমি বদ দোয়া দিলে পেটে ব্যথা হবে। আমি বদ দোয়া দিতে চাই না। এ সময় কর্মকর্তাদের কাছে সব ঋণখেলাপির ঠিকানাও চান অর্থমন্ত্রী।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া বলেন, এমডিকে ব্যাংক পরিচালনার জন্য পুরোপুরি ক্ষমতা দেয়া হোক, যাতে সব কর্মকর্তাকে কঠোরভাবে চালাতে পারেন। সরকারি ব্যাংকে টাকা জমা রাখলে মার যাবে না এমন প্রচারণা চালিয়ে তহবিল বাড়াতে হবে। নির্ভরযোগ্য লোকদের ঋণ দেবেন; যাতে টাকা আদায় হয়। ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে যেসব খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করতে আসবে না, তাদের শক্তভাবে ধরতে হবে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম বলেন, বেসিক ব্যাংক থেকে প্রচুর সম্পদ চলে গেছে। এটা জনগণের সম্পদ, এটা আমরা গ্রাহ্য করব না। এ অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফজলুল হক বলেন, ২০০৯ সালে ৭০০ জন জনবল দিয়ে ৭২টি শাখার কার্যক্রম চললেও এখন দুই হাজারের বেশি কর্মকর্তা। অন্যান্য ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মতো বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দক্ষ ও উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে। আইসিটিতে দক্ষতা বাড়াতে হবে।

বেসিক ব্যাংকের সম্মাননা নিলেন না অর্থমন্ত্রী: অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রীকে ব্যাংকটির পক্ষ থেকে সম্মানসূচক ক্রেস্ট দিতে চাইলে তা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি এখন ক্রেস্ট নেবো না। এক বছরে যদি তারা ভালো করতে পারে, তাহলে ক্রেস্ট নেব। আপনারা ভালো করেন, আগামীতে আপনাদের সঙ্গে আমরা পিকনিক করব। এ সময় অর্থমন্ত্রীর পাশাপাশি অনুষ্ঠানে থাকা অন্য অতিথিরাও ক্রেস্ট গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন