পৌরকর্মীরা ঢাকায় : ব্যাহত মশকনিধন অভিযান, আতঙ্কে নোয়াখালী পৌরবাসী

বণিক বার্তা প্রতিনিধি নোয়াখালী

রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বেতন-ভাতা ও পেনশন সুবিধার দাবিতে গত ১৪ জুলাই থেকে ঢাকায় আন্দোলন করছেন দেশের সব পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। টানা ১৯ দিনের এ কর্মবিরতিতে স্থবির হয়ে পড়েছে পৌরসভাগুলোর অধিকাংশ কার্যক্রম। এ অবস্থায় নোয়াখালী পৌরসভায় নিয়মিত শহর পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি ব্যাহত হচ্ছে মশকনিধন অভিযান।

পৌর নাগরিকরা বলছেন, এমনিতেই মশকনিধনে বিগত সময়ে নোয়াখালী পৌরসভা কর্তৃপক্ষ তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। সম্প্রতি সারা দেশেই এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। আর ঠিক এ সময়েই পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মবিরতিতে রয়েছেন। ফলে নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা অভিযান না হওয়ায় শহরজুড়ে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমা হচ্ছে। অপসারণ করা হচ্ছে না মশার বংশ বিস্তারের অনুকূল জমে থাকা পানি ও ডাবের খোসার মতো আবর্জনা, যা দেশজুড়ে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপের মধ্যে পৌরবাসীদের আতঙ্কের কারণে পরিণত হয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, নোয়াখালী শহরের বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ ডাব বিক্রেতারা ডাবের খোসা ফেলে রেখেছেন। প্রধান সড়কের পাশে ৮-১০টি স্থানে জমা হয়েছে ময়লার স্তূপ। বিশেষ করে শহরের হাসপাতাল সড়ক, জজকোর্ট সড়ক ও সোনাপুর থেকে মাইজদী বাজার পর্যন্ত সড়কের অবস্থা সব থেকে খারাপ। ময়লায় পূর্ণ হয়ে আছে সড়কের পাশের ড্রেনগুলোও।

এদিকে সিভিল সার্জন ড. মোমিনুর রহমান বলেন, নোয়াখালীতে এ পর্যন্ত ৫৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে অনেককেই উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা পাঠানো হয়েছে। আর গতকাল পর্যন্ত নোয়াখালীতে চিকিৎসাধীন রয়েছে ৩১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। এদের মধ্যে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালেই চিকিৎসা নিচ্ছেন ২৯ জন। তাদের অধিকাংশই ঢাকা বা অন্য স্থানে এ রোগের শিকার হন। নোয়াখালীতে অবস্থানকালে কেউ আক্রান্ত হয়েছেন কিনা, তা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে যেহেতু এখানে অনেকেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাই অন্যদের মধ্যেও মশাবাহিত রোগটি ছড়িয়ে পড়ার কম-বেশি ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।

কামাল হোসেন মাসুদ নামে নোয়াখালীর এক সাংস্কৃতিক কর্মী বলেন, বর্তমানে সারা দেশের মতো নোয়াখালীতেও প্রতিদিন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছে। এতে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছে পৌর নাগরিকরা। এ অবস্থায় পৌর কর্মচারীদের কর্মবিরতিতে শহরের মশকনিধন কার্যক্রম একভাবে বন্ধই বলা চলে, যা মশাবাহিত এ রোগের ঝুঁকি আরো বাড়াচ্ছে।

নোয়াখালী পৌরসভার প্যানেল মেয়র রতন কৃষ্ণ পাল বলেন, মশকনিধন অভিযান পর্যাপ্ত মাত্রায় হচ্ছে না সত্যি। মূলত প্রয়োজনীয় পরিমাণ ওষুধ না পাওয়ায় নিয়মিত মশকনিধন অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে গত ২৮ জুলাই থেকে এ অভিযান শুরু হয়েছে। কিন্তু পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ঢাকায় আন্দোলনে থাকায় অভিযান পরিচালনায় বেগ পেতে হচ্ছে।

পৌরসভা সার্ভির অ্যাসোসিয়েশনের নোয়াখালীর সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান বলেন, এ সংকটকালীন সময়ে আমাদের নাগরিকদের পাশে থাকার খুবই ইচ্ছা ছিল। কিন্তু নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় বাধ্য হয়ে আমাদের আন্দোলন করতে হচ্ছে। আর আমাদের দাবির বিষয়ে সরকার সাড়া না দিলে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন