মিয়ানমারের সম্ভাবনাময় বাজার ধরতে ২০১৩ সালে তিনটি দেশের পাঁচটি কোম্পানির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে নিলামের মাধ্যমে এক্সন মবিল এশিয়া প্যাসিফিক প্রাইভেট লিমিটেডের কাছ থেকে মিয়ানমারে লুব্রিক্যান্টস বাজারজাত করার কাজ পেয়েছিল এমজেএল বাংলাদেশ লিমিটেড। কিন্তু বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতার কারণে মিয়ানমার থেকে লুব্রিক্যান্টস ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে এমজেএল বাংলাদেশ লিমিটেড। সম্প্রতি মিয়ানমারের একেটি পেট্রোলিয়ামের সঙ্গে জয়েন্ট ভেঞ্চারের মাধ্যমে গঠন করা কোম্পানিতে নিজেদের শেয়ার বিক্রি করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এমজেএল বাংলাদেশের পর্ষদ।
গতকাল স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে এমজেএল বাংলাদেশ জানায়, তাদের পর্ষদ এমজেএল একেটি পেট্রোলিয়াম কোম্পানিতে থাকা ৫১ শতাংশ শেয়ার ১৩ লাখ ডলারে (প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৫০ পয়সা হিসেবে ১০ কোটি ৯৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা) বিক্রি করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এমজেএল বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজম জে চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, আমরা যখন মিয়ানমারে বিনিয়োগ করি, তখন নানা রকম সুযোগ-সুবিধার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল, বিভিন্ন আইন ও বিধিবিধান পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু যেগুলো আর পরে বাস্তবায়ন হয়নি। বিদেশী বিনিয়োগের জন্য মিয়ানমার আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে প্রচার পেলেও সেখানে ব্যবসা করতে গিয়ে আমদের অনেক ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। সেখানকার মানুষজনের শিক্ষার হার কম হওয়ায় পারস্পরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছিল। সেখানে ইন্টারনেটের গতি ধীর, এমনকি অনেক সময় ঘোষণা ছাড়াই বন্ধ করে দেয়। এতে বাংলাদেশ থেকে আমাদের সেখানকার কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগে সমস্যা হচ্ছিল। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায় সম্পৃক্ত রয়েছে। ফলে কোনো কিছু তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থের বিরুদ্ধে গেলেই তারা সেখানে হস্তক্ষেপ করে। মিয়ানমারের মুদ্রা বিনিয়ম হার অস্থিতিশীল। প্রতিদিনই এটি পরিবর্তন হয়। এটি ব্যবসার ক্ষেত্রে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। তাছাড়া রোহিঙ্গা ইস্যুর কারণে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে টানাপড়েন চলছে। এ কারণে সেখানে গিয়ে কাজ করতে আমাদের কর্মীরা সাহস পাচ্ছেন না। ফলে মিয়ানমার থেকে আমাদের ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে প্রথম বাংলাদেশী কোম্পানি হিসেবে মিয়ানমারে বিনিয়োগ করে এমজেএল বাংলাদেশ। মিয়ানমারের স্থানীয় কোম্পানি একেটি পেট্রোলিয়ামের সঙ্গে এমজেএল একেটি পেট্রোলিয়াম কোম্পানি লিমিটেড নামে একটি জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি গঠন করে এমজেএল বাংলাদেশ। এ কোম্পানিতে এমজেএল বাংলাদেশের ৫১ ও একেটি পেট্রোলিয়ামের ৪৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। ২০১৭-১৮ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, ৩০ জুন ২০১৮ পর্যন্ত এমজেএল একেটি পেট্রোলিয়াম কোম্পানিতে এমজেএল বাংলাদেশের বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। সাবসিডিয়ারিটির মোট সম্পদ দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা। ২০১৮ হিসাব বছরের জুন শেষে এমজেএল একেটি পেট্রোলিয়ামের রাজস্ব হয়েছে ৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, যা আগের বছর ছিল ১০ কোটি ৭২ লাখ টাকা। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী লোকসান হয়েছে ৮১ লাখ টাকা, যেখানে আগের বছর ২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা মুনাফা হয়েছিল। এমজেএল বাংলাদেশের মোট রাজস্বের ১ শতাংশ আসে এমজেএল একেটি পেট্রোলিয়াম থেকে।
৩০ জুন ২০১৮ সমাপ্ত হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের ৫০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে এমজেএল বাংলাদেশ। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ স্টক। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৭ টাকা। এর আগে ২০১৭ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে ৪৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল কোম্পানিটি। সে বছর এর ইপিএস ছিল ৬ টাকা ৯১ পয়সা।
২০১১ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এমজেএল বাংলাদেশের অনুমোদিত মূলধন ১ হাজার কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ৩১৬ কোটি ৭৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। রিজার্ভ ৩১৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ারের ৭১ দশমিক ৫৩ শতাংশ এর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের কাছে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ১৮ দশমিক শূন্য ৯, বিদেশী শূন্য দশমিক ৩২ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে বাকি ১০ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ শেয়ার।