হিমালয় ডেকেছিল ছুটির নিমন্ত্রণে...

ফাহমিদা তাপসী

ভাবুন তো, বছরের প্রথম সূর্য ওঠা দেখছেন সম্পূর্ণ নতুন কোনো শহরে, নতুন কোনো আলোয়। ভালো লাগা ছেয়ে যাবে নিশ্চিতভাবেই। শুধু কি তাই, স্মৃতির ডায়েরিতে যে মোটা দাগে স্থান করে নেবে বিশেষ সে ভ্রমণ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ঠিক এমন ভাবনা থেকেই পরিকল্পনার শুরু হয়েছিল। ২০১৮ সালে প্রথম সকাল দেখব চমত্কার কোনো দেশ থেকে। চমত্কার দেশ হিসেবে বেছে নিলাম হিমালয়ের দেশ নেপালকে। কেননা হিমালয়ের ফাঁক গলে উঁকি দেয়া সূর্যের সৌন্দর্য কল্পনা করতেই কী অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করেছে, সেটা শব্দে প্রকাশ করা কঠিন। কল্পনাকে সত্যি করতেই আমরা সাত বন্ধু দলবেঁধে গত ২৮ ডিসেম্বর রওনা হলাম নেপালের উদ্দেশে।

ওয়েলকাম টু নেপাল, বিমানবন্দরে পা রাখতেই ছোট্ট এ বার্তা দেখে কয়েক সেকেন্ডের জন্য থমকে গিয়েছিলাম। দুপুর গড়িয়েছে বেশিক্ষণ হয়নি, অন্তত ঘড়ির কাঁটা তা-ই বলছিল। বিকালের স্নিগ্ধতা ছিল, তবে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা আর হিমশীতল বাতাসে বোঝার উপায় নেই, সেটা যে মিষ্টি রোদের ঝলমলে বিকাল। যা-ই হোক, প্রচণ্ড ঠাণ্ডা বাতাস ঘোর লাগা অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে বাধ্য করল যেন। বুঝলাম, চলে এসেছি বাংলাদেশ থেকে ৮১৩ কিলোমিটার দূরের দেশ নেপালে। বিমানবন্দর থেকে আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করে যখন বের হয়ে এলাম, তখন সূর্য ডুবে গেছে। বিমানবন্দরের বাইরে গাড়িসহ অপেক্ষা করছিল আমাদের নেপালি বন্ধু। গাড়িতে উঠেই কুশলাদি বিনিময় পর্ব সেরে নেয়া হলো।

আগে থেকেই অনন্ত হোটেল বুকিং দিয়ে রেখেছিল। ফলে কাঠমান্ডুর পর্যটন এবং বেশ পুরনো শহর থামেলে প্রবেশ করে হোটেলে ব্যাগ রেখে আমরা পা বাড়ালাম খাওয়ার উদ্দেশে। রেস্তোরাঁয় অপেক্ষা করছিল অনন্তর স্ত্রী লক্ষ্মী ও বোন অমৃতা ও নিধি। এক কোণের টেবিলে আমরা বসে পড়লাম। নেপালি মোমোর কথা কমবেশি সবাই শুনেছি। এবার চেখে দেখার পালা। মোমোসহ বেশকিছু খাবার অর্ডার করে আড্ডায় মেতে উঠলাম সবাই। মূলত পরিকল্পনা শুরু করে দিলাম পাঁচদিন আমরা কোথায় কীভাবে কাটাব। তখনই সিদ্ধান্ত নেয়া হলো দুদিন কাঠমান্ডু এবং আশপাশ ঘুরে দেখা হবে। আর বছরের শেষ দিন অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর আমরা রওনা দেব নাগরকোটের দিকে। সেখানেই দেখা হবে নতুন বছরের সূর্যোদয়। এরই মধ্যে খাবার চলে এল। ধোঁয়া ওঠা গরম মোমো, ফ্রায়েড রাইস, সিজলিং চিকেন, ক্যাশু নাট সালাদ, ভেজিটেবল স্যুপ আর সবশেষে হিমালয়ান টি। মোমো খেয়ে ঠিক যতটা ভালো লেগেছে, চা ঠিক ততটা তৃপ্তি দিতে পারেনি।&dquote;&dquote;

পেটপূজা শেষে যখন রাস্তায় নেমে এলাম, পুরো শহর তখন নীরব। অনেক সময় কাটিয়েছি রেস্তোরাঁয়—বিষয়টি এমন নয়, বরং নেপালে রাত নেমে আসে দ্রুত। সন্ধ্যার আলো মিলে যাওয়ার পর পরই মূলত সেখানের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। বড়জোর কয়েকটা খাবারের দোকান খোলা পাওয়া যায় বেশ রাত পর্যন্ত। তবে রাস্তায় মানুষের আনাগোনা বন্ধ হয়ে যায় না একদমই। কেননা অধিকাংশ পর্যটকই থামেলে অবস্থান করেন। বলে রাখা ভালো, তাদের দিনের শুরুও কিন্তু হয় অনেক আগেই। খুব স্পষ্ট করে বলা যায়, সূর্য ওঠার আগেই তাদের দিনের শুরু হয়।

পুরো দিনের ক্লান্তিসহ হোটেলে প্রবেশ করে আর সময় নিলাম না কেউই। ঘুমিয়ে পড়লাম দ্রুত। পরদিন সকালে ঘুম ভাঙল অন্যদের ডাকাডাকিতে। উঠে ফ্রেশ হয়ে হোটেলের লাউঞ্জে নেমে এলাম নাশতা করব বলে। হোটেলের ম্যানেজার লাউঞ্জেই ছিলেন আমাদের দেখে স্মিত হেসে বসার অনুরোধ করলেন। লুচির, আলুর দম, সবজি, চাটনি অর্ডার করা হয়েছে সবার জন্য। নাশতা সেরে আমরা বেরিয়ে পড়লাম কাঠমান্ডুতে ঘুরে দেখার মতো দর্শনীয় স্থানগুলোর উদ্দেশে। পশুপতিনাথ মন্দির, দরবার স্কয়ার ঘুরে দেখলাম প্রথম দিন। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া দরবার স্কয়ার মেরামতের কাজ চলছিল তখনো। তবু পর্যটকের অভাব নেই। আশপাশের স্থানজুড়ে প্রচুর হকার নেপালি গহনা, মূর্তিসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে বসে রয়েছেন পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য। দরবার স্কয়ার দিয়ে হেঁটে যেতেই চোখে পড়েছিল রাস্তার পাশে বসে এক দল স্ট্রিট সিংগার নেপালি ফোক গান গাচ্ছেন। কিছুটা সময় দাঁড়িয়ে গান শুনেছি সবাই। গানের একটা শব্দ না বুঝলেও শুনতে মন্দ লাগেনি। পরদিন প্রাচীন বৌদ্ধ কমপ্লেক্স সম্ভুনাথ, প্রাচীন ভক্তপুর শহর ঘুরে দেখার পাশাপাশি কাঠমান্ডু শহরের অলিগলিতে ঘুরে বেড়াতে ভুল করিনি। হেঁটে পুরনো শহরের অলিগলি ঘুরে বেড়াতে মন্দ লাগেনি একটুও।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন