অদ্ভুতুড়ে জনপদ : ঘৃণা-গুজব-হত্যায় খুঁজি তৃপ্তির হাসি

নাজমুল হক তপন

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম খুললেই সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ছে পরিচিত বা অর্ধপরিচিতদের রক্ত চেয়ে পোস্ট। মেয়র সাহেব গুজবে কতটা প্রভাবিত সে প্রশ্ন তোলার সময় কোথায়? বিশাল বিশাল লাইন পেরিয়ে স্বজনদের হাসপাতালে ভর্তির যুদ্ধ, প্লাটিলেট নিরুপনের লড়াই, এরপর রক্ত সংগ্রহের জন্য একের পর এক ফোন কিংবা ফেসবুকে রক্ত চেয়ে বারবার পোস্ট দেয়া, দিশেহারা অবস্থা মানুষের। ক্রমেই পুরো দেশে ‘সন্ত্রাসের রাজত্ব’ কায়েম করছে এডিস মশা। এক দিকে ডেঙ্গু অন্যদিকে ভয়াবহ বন্যা। প্রতিদিনই বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।

এখন আড্ডায় ডেঙ্গু, বন্যা, ছেলে ধরা গুজবে কান দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলা- এসব থেকে বেরিয়ে আসাটা কঠিন। কয়েকদিন আগে এক আড্ডায় একজন বললেন, অতীতে সব সময়ই দেখা গেছে, দেশের ক্রান্তিকালে ঝাঁপিযে পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য, অসংখ্য সংগঠন নেমে পড়তো। ডেঙ্গুতে মানুষের এত রক্তের চাহিদা, ঢাবির সংগঠনগুলো যদি আন্তরিকতা নিয়ে মাঠে নামে তাহলে এর চেয়ে ভাল আর কিছু হতে পারত না। এবারে ঢাবি বন্যায় আক্রান্তদের পাশে নাই আবার ডেঙ্গুতেও নাই।

পুরো দেশের আর্তনাদ ঢাবিতে পৌঁছাচ্ছে না। এভাবে বলাই যেতে পারে, দেশের মানুষের ভোগান্তি, মৃত্যু পরোয়ানা মাথায় নিয়ে দিনযাপন এসব কিছুই এখন গা সওয়া। ঢাবি কি পুরো দেশ থেকে আলাদা কিছু? ঠিক এরকম একটা সময়ে ঢাবি ছাত্ররা কিন্তু ঠিকই নেমেছে আন্দোলনে। পুরো দেশে সর্বগ্রাসী যে বিচ্ছিন্নতা তারই এক দৃষ্টান্ত যেন এবারের ঢাবির এই আন্দোলন। তাদের থেকে সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। এই আন্দোলনে সাত কলেজের প্রতি ঢাবি ছাত্রদের যে বিদ্বেষ, তা দেখে শিউরে উঠেছেন অনেকেই। ওরা (সাত কলেজের ছাত্ররা) কেন আমাদের সমান মর্যাদা পাবে, চাকরি থেকে শুরু করে সব জায়গায় আমাদের সমান সুযোগ পাবে, সহজ কথায় বাংলাদেশের সব ঐতিহাসিক অর্জনে বড় ভুমিকায় থাকা ঢাবির বর্তমান প্রজন্মের এমনি মনোভাব।

পুরো দেশের আবেগের কেন্দ্র ঢাবি এখন শুধুই ঢাবিয়ানদের। আটকে পড়েছে একটা ছোট্ট পরিধির মধ্যে। সাত কলেজ নিয়ে এ সময়ের গর্বিত ঢাবিয়ানদের (!) নাক সিঁটকানো বলে দেয় অনেক কিছুই। পরস্পরের প্রতি ঘৃণা-বিদ্বেষ পুরো দেশেই এখন এক সংক্রামক রোগ। আমরা সবাই সবাইকে ঘৃণা করি, অবিশ্বাস করি। বিষয়টাকে দেখা যেতে পারে এভাবে- ফল বিক্রেতা বিশ্বাস করে না দুধ বিক্রেতাকে। আবার ফল বিক্রেতাকে নিয়ে একই অবিশ্বাস দুধ বিক্রেতার। ক্ষতিকর কেমিক্যাল মেশানো নিয়ে পরস্পরকে সন্দেহের চোখে দেখে দুজনই। এমনি অবস্থা সর্বত্রই। এই অবিশ্বাস থেকে জন্ম নিচ্ছে ঘৃণা-বিদ্বেষ, ব্লেম গেম।

চিকিৎসকদের বিশ্বাস করতে পারছে না রোগী। চিকিৎসক আর রোগী যেন পরস্পরের শত্রুপক্ষ। দেশের প্রতিটা জায়গাতেই এমন চিত্র। গণ-পরিবহনের সংশ্লিষ্ঠদের সঙ্গে যাত্রীদের সম্পর্ক কোন মাত্রায় আদায়-কাঁচকলায় সেটা অনুধাবন করার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার পড়ে না। ছাত্র-শিক্ষক, বাড়িওয়ালা-ভাড়াটিয়া, ক্রেতা-বিক্রেতা,  অফিস-আদালতে সেবা চাইতে আসা মানুষ, সবারই অভিযোগের তীর একে অপরের প্রতি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন