ঈদে যাত্রীসেবা : প্রস্তুত রাষ্ট্রায়ত্ত তিন পরিবহন সংস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক

আসন্ন ঈদুল আজহায় যাত্রীসেবা দিতে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত তিন পরিবহন সংস্থা—বাংলাদেশ রেলওয়ে, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)। ঈদ উপলক্ষে এ সংস্থাগুলোর মধ্যে নিয়মিত ট্রেনের পাশাপাশি আরো আট জোড়া বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করবে রেলওয়ে। একইভাবে সহস্রাধিক বাস যাত্রীসেবার জন্য প্রস্তুত রেখেছে বিআরটিসি। এছাড়া নিয়মিত লঞ্চের পাশাপাশি আরো ২২টি বিশেষ লঞ্চ পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছে বিআইডব্লিউটিসি।

বর্তমানে প্রতিদিন ৩৫২টি যাত্রীবাহী ট্রেন পরিচালনা করছে রেলওয়ে। ঈদ উপলক্ষে এগুলোর সঙ্গে যোগ হচ্ছে আরো আট জোড়া বিশেষ ট্রেন। ট্রেনগুলো হলো দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল, চাঁদপুর ঈদ স্পেশাল (দুই জোড়া), সান্তাহার ঈদ স্পেশাল, লালমনি ঈদ স্পেশাল, খুলনা ঈদ স্পেশাল ও শোলাকিয়া স্পেশাল (দুই জোড়া)। স্বাভাবিক সময়ে ঢাকা থেকে চলাচলকারী আন্তঃনগর ট্রেনগুলোয় আসন রয়েছে ২৬ হাজার ৫০০টি। বিশেষ ট্রেনগুলো (ঢাকা থেকে চারটি) যোগ হলে এ আসন সংখ্যা চলে যাবে ৩০ হাজারের কাছাকাছি।

গত ঈদুল ফিতরে সব মিলিয়ে ১ হাজার ৪১০টি কোচ দিয়ে যাত্রীসেবা পরিচালনা করেছিল রেলওয়ে। এবার সেটি বেড়ে ১ হাজার ৪৩৭টিতে উন্নীত হয়েছে। নতুন যোগ হওয়া কোচগুলো সরবরাহ করেছে সংস্থাটির পাহাড়তলী ও সৈয়দপুর ওয়ার্কশপ। ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য ঈদের সময় সব কয়টি আন্তঃনগর ট্রেনের সাপ্তাহিক ছুটিও বাতিল করা হয়েছে। এর মাধ্যমে পূর্বাঞ্চলে ১৯টি ও পশ্চিমাঞ্চলে আরো ২৯টি বাড়তি ট্রিপ পরিচালনা করা সম্ভব হবে। ঈদে যাত্রীসেবার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ২২৬টি লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন)। শুধু ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানোই নয়, যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের সুবিধার্থে ঈদের তিনদিন আগেই বন্ধ করে দেয়া হবে পণ্যবাহী ট্রেন (কনটেইনার ও জ্বালানি তেলবাহী ট্রেন বাদ দিয়ে)। টিকিট বিক্রির ক্ষেত্রে যেন কোনো অনিয়ম না হয়, সেজন্য গঠন করা হয়েছে বিশেষ পর্যবেক্ষক দল।

একইভাবে চলন্ত ট্রেনে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে আরএনবি ও জিআরপির কার্যক্রম আরো জোরদার করা হচ্ছে। এ কাজে র্যাব, বিজিবি, স্থানীয় পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা নেবে রেলওয়ে।

প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বণিক বার্তাকে বলেন, প্রতি ঈদেই যাত্রীসেবা দেয়ার জন্য রেলওয়ে বিশেষ প্রস্তুতি নেয়। এবারো তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। ঘরমুখী মানুষকে নিরাপদে পৌঁছানো এবং ঈদের পর তাদের নিরাপদে কর্মস্থলে পৌঁছানোর জন্য রেলওয়ের কর্মীরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। আশা করছি, এবার রেলপথে স্বস্তি নিয়ে যাতায়াত করতে পারবে মানুষ।

রেলওয়ের পাশাপাশি ঈদ ঘিরে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে বিআরটিসিও। গত ঈদুল ফিতরে সংস্থাটি ১ হাজার ১৪২টি বাস দিয়ে ঈদের সময় যাত্রীদের সেবা দিয়েছিল। এবারো সহস্রাধিক বাস ঈদে যাত্রীসেবা দেয়ার জন্য প্রস্তুত রেখেছে সংস্থাটি। ঈদের সময় বিআরটিসির বাস সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেন ঢাকা ও আশপাশের বিভিন্ন তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। এবারো তাদের টার্গেট করেই যাত্রীসেবা পরিচালনার পরিকল্পনা করছে সংস্থাটি।

আসন্ন ঈদুল আজহায় যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে প্রস্তুতিতে পিছিয়ে নেই আরেক রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন সংস্থা বিআইডব্লিউটিসিও। সংস্থাটি এবার দেশের বিভিন্ন রুটে চলাচলরত নিয়মিত লঞ্চের পাশাপাশি ২২টি বিশেষ লঞ্চ দিয়ে যাত্রীসেবা দেবে।

স্বাভাবিক সময়ে ঢাকার সদরঘাট টার্মিনাল থেকে দেশের ৪৭টি রুটে প্রতিদিন শতাধিক লঞ্চ চলে। ঈদের সময় সংখ্যাটি বেড়ে যায়। লঞ্চ মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদুল আজহায় যাত্রী পরিবহনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে ২১০টির বেশি ছোট-বড় লঞ্চ।

ঈদে যেন কোনো আনফিট নৌযান যাত্রী পরিবহন করতে না পারে, সেজন্য বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) তত্পর রয়েছে বলে বণিক বার্তাকে জানিয়েছেন সংস্থাটির নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম পরিচালক আলমগীর কবির। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ঈদে মানুষ যাতে নিরাপদে চলাচল করতে পারে, সেজন্য আমরা সম্ভাব্য সব ধরনের উদ্যোগ নিয়েছি। ফিটনেসবিহীন নৌযানগুলোর প্রতি আমরা সর্বোচ্চ কঠোরতা অবলম্বন করব।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন