গানারদের আক্রমণে গতি বাড়াবেন পেপে!

লিল থেকে আর্সেনালে নাম লেখাতে মঙ্গলবার ফ্রান্স থেকে ইংল্যান্ডে পৌঁছেছেন আইভরি কোস্টের ফরোয়ার্ড নিকোলাস পেপে। স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে বুধবারই তার চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার কথা। পেপেকে ক্লাব রেকর্ড ফি দিয়ে কিনছে গানাররা। খেলোয়াড়টির জন্য প্রিমিয়ার লিগ জায়ান্টদের খরচ পড়বে ৭২ মিলিয়ন পাউন্ড।

পেপের দলবদলে এমিরেটসে পড়বে বড় প্রভাব। আর্সেনালে তার আগমনে বেশ শোরগোল পড়ে গেছে, যেমনটি হয়েছিল ২০১৩ সালে রিয়াল মাদ্রিদ থেকে মেসুত ওজিলের দলবদলের সময়। এবার বেশি আলোচনা দলবদল ফি নিয়েই। ২০১৮ সালে বরুশিয়া ডর্টমুন্ড থেকে পিয়েরে এমেরিক-অবামেয়াংকে ৫৬ মিলিয়ন পাউন্ডে কিনে ক্লাব রেকর্ড গড়েছিল আর্সেনাল। এবার আরো ১৬ মিলিয়ন পাউন্ড বেশি দিয়ে পেপেকে কিনে সেই রেকর্ডটি ভাঙতে চলেছে গানাররা।

আরেকটি কারণে এ দলবদল আলোচিত। তাকে নিয়ে শীর্ষ সারির তিন ফরোয়ার্ড পাচ্ছে আর্সেনাল, যা অনেক ক্লাবের কাছেই ঈর্ষণীয় লাগতে পারে। অবামেয়াং গত মৌসুম শেষ করেন সব ধরনের প্রতিযোগিতায় ৩১ গোল নিয়ে। ১৯ গোল করার পাশাপাশি ১০ গোলে অ্যাসিস্ট করে আর্সেনালের মৌসুমসেরা খেলোয়াড় হয়েছেন অবামেয়াংয়ের স্ট্রাইকিং পার্টনার আলেক্সান্ডার লাকাজেত্তে।

অবামেয়াং ও লাকাজেত্তের সঙ্গে এবার যুক্ত হচ্ছেন গতিময় স্ট্রাইকার পেপে। এতে আগামী মৌসুমে ভয়ংকর এক স্ট্রাইকিং ‘ত্রয়ী’ হাতে পাচ্ছেন আর্সেনাল কোচ উনাই এমেরি। আসন্ন মৌসুমে যেকোনো দলই সমীহ করে খেলবে এ তিনজনকে।

২০১৮-১৯ মৌসুমে ২২ গোল করার পাশাপাশি অ্যাসিস্ট করেন ১১ গোলে। ডান প্রান্ত দিয়ে খেলা পেপেকে নিয়ে তার লিল সতীর্থ হোসে ফন্তে বলেন, ‘সে অবিশ্বাস্য। সে খুবই ক্ষিপ্রগতির, রেশমি বাম পা তার, ওয়ান-টু-ওয়ান পজিশনে সে অদ্বিতীয়। ফিনিশিংও দারুণ। পেনাল্টি নেয়, ফ্রি-কিকেও ভালো। সে পরিপূর্ণ এক খেলোয়াড়। আর্সেনাল সমর্থকরা তাকে পেয়ে দারুণ খুশি হবে। আমি তো অনেকের সঙ্গেই খেলেছি কিন্তু এ ছেলেটি আলাদা। কোনো সন্দেহই নেই যে সে আলাদা। সে নিজেকে অনেক উঁচুতে নিয়ে যেতে পারবে এবং বিশ্বের অন্যতম সেরা হবে। আমার বিশ্বাস, সেখানে পৌঁছানোর মতো সবকিছুই আছে তার।’

এত বেশি অর্থ খরচ করে নিয়ে আসায় এটা নিশ্চিত যে এমেরির একাদশের অন্যতম নাম হয়ে উঠবেন পেপে। আর্সেনালের হেড কোচ এমন এক খেলোয়াড়কে চেয়েছিলেন, যিনি বাইরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল দিয়ে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের জন্য আতঙ্ক তৈরি করবেন, বল ধরেও রাখবেন; যে গুণ বর্তমান স্কোয়াডে কম খেলোয়াড়েরই আছে। কোনো সন্দেহ নেই, পেপে এমনই এক খেলোয়াড়।

গত মৌসুমে লিগ ওয়ানে গড়ে প্রতি ম্যাচে ২ দশমিক ৮টি ড্রিবলিং করেছেন পেপে, যা অ্যালেক্স আইওবির (১.৩) দ্বিগুণেরও বেশি। এছাড়া মেসুত ওজিলের ড্রিবলিং গড় শূন্য দশমিক ৯ এবং হেনরিখ মিখিতারিয়ানের শূন্য দশমিক ৮।  

পেপের আগমনে রেইস নেলসন ও মিখিতারিয়ানের ওপর চাপ বাড়বে। নেলসন গত মৌসুমে হফেনহেইমে ধারে খেলে এবার ফিরেছেন এবং এমেরির একাদশে জায়গা পাওয়ার আশা করছেন। কিন্তু পেপে আসায় নেলসনের আশা পূরণ না-ও হতে পারে, কেননা ডান প্রান্তে হয়তো ২৪ বছর বয়সী ফরোয়ার্ডই খেলবেন। গত রোববার লিওঁর বিপক্ষে ম্যাচে বাম উইং দিয়ে খেলা নেলসন প্রায়ই বল নিয়ে কাট করে ভেতরে ঢুকে পড়েছেন এবং ডান পা ব্যবহার করেছেন। তাই বলা যায়, এমেরি ৪-২-৩-১ ফরমেশনে খেলালে পেপের উল্টো প্রান্ত দিয়ে একটা সুযোগ পেলেও পেতে পারেন নেলসন। আর যদি এমেরি ৪-৩-৩ ফরমেশন ব্যবহার করেন, তবে সামনে অবামেয়াং ও লাকাজেত্তের সঙ্গে খেলবেন পেপে।

এমনও হতে পারে আগামী মৌসুমেও ধার চুক্তিতে পাঠানো হতে পারে ১৯ বছর বয়সী নেলসনকে। সেক্ষেত্রে পেপে কিংবা অবামেয়াংয়ের ব্যাকআপ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে মিখিতারিয়ান কিংবা আইওবিকে। মিখিতারিয়ানকে এ গ্রীষ্মে বিক্রি করে দিতে চায় গানাররা, যদিও সপ্তাহে ১ লাখ ৭০ হাজার পাউন্ড পারিশ্রমিক পাওয়া এ আর্মেনিয়ানের জন্য ভালো ক্রেতা মিলছে না। বাধ্য হয়েই তাই এমেরি হয়তো আরেক মৌসুম তাকে ব্যবহার করবেন এবং এতে তার হাতে বিকল্পও থাকবে। কেননা মিখিতারিয়ান উভয় প্রান্তে এবং স্ট্রাইকারের ঠিক পেছনে খেলতে সমর্থ।

মিখিতারিয়ানের পজিশনেই খেলেন ওজিল। গানাররা পারলে জার্মান তারকাকেও বিক্রি করে দেবে। যদিও তিনি কখনই চলে যাওয়ার আগ্রহ দেখাননি। প্রাক-মৌসুম সফরেও বেশ ভালো পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন তিনি। এমেরি যদি ৪-৩-৩ ফরমেশনে খেলান দলকে, তবে ওজিলের খেলার আশা কম। কিন্তু ফরমেশন ৪-২-৩-১ হলে তার সুযোগ থাকবে। এ ফরমেশনটা ওজিলের জন্য আদর্শ। দুই প্রান্তে থাকা পেপে ও অবামেয়াং এবং সামনে থাকা লাকাজেত্তেকে বল সরবরাহ করে যাবেন তিনি। ওজিলের ভয়ংকর থ্রু বলগুলোও কাজে লাগানোর মতো গতিময় খেলোয়াড় পেয়ে গেছেন এমেরি, তিনি পেপে। সব মিলিয়ে আসন্ন মৌসুমে আর্সেনালের ফরোয়ার্ড লাইন শিহরন জাগানোই হতে পারে। গোল ডটকম

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন