বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ঝুঁকি তৈরি করছে ‘গোপন’ ঋণগ্রহীতারা

বণিক বার্তা ডেস্ক   

বৈশ্বিক অর্থনীতি ক্রমে মন্দার দিকে ধাবিত হচ্ছে। এ অবনতির কারণ খোঁজার চেষ্টা করে যাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। অন্যদিকে মার্কিন পাবলিক ট্রেডিং করপোরেশন এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের একটি গবেষণা ও বিশ্লেষক ইউনিট বৈশ্বিক অর্থনীতির সমস্যার পেছনের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে ঋণগ্রহীতাদের ‘ঋণ গোপন রাখার’ প্রবণতা খুঁজে পেয়েছে। খবর রয়টার্স।

এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের সহপ্রতিষ্ঠান এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল মার্কেট ইন্টেলিজেন্স জানিয়েছে, এ ধরনের ঋণগ্রহীতারা মূলত ক্ষুদ্র কোম্পানি হয়। এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল রেটিংস এসব ক্ষুদ্র কোম্পানির ঋণমান করে না। উল্লেখ্য, ঋণমান নির্ধারণের মাধ্যমে একটি সরকার বা কোম্পানির ঋণ পরিশোধের সক্ষমতার মূল্যায়ন করা হয়।

ব্যয়সংকোচন, অনিয়মিত বন্ড ছাড়া, ব্র্যান্ডের সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের পরিচিতি ইত্যাদি কারণে ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে ঋণমান নির্ধারণের আগ্রহ কম থাকতে দেখা গেছে। অতীতে ঋণমান নির্ধারণ এড়িয়ে গেছে এমন সুপরিচিত কোম্পানির মধ্যে ইতালীয় বিলাসবহুল ফ্যাশন হাউজ প্রাডা ও জার্মানির স্পোর্টসওয়্যার ব্র্যান্ড এডিডাস রয়েছে।

এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল মার্কেট ইন্টেলিজেন্সের পরিচালক ও গ্লোবাল প্রডাক্ট ডেভেলপমেন্টের প্রধান মিশেল চেওং জানান, সাধারণত এসঅ্যান্ডপির ঋণমান ছাড়া সিংহভাগ সংস্থাই ক্ষুদ্র কোম্পানি এবং অর্থনৈতিক সংকটে এরাই সর্বপ্রথম ভুক্তভোগী হয়। সম্প্রতি সিএনবিসিকে চেওং বলেন, এ ধরনের ক্ষুদ্র কোম্পানির দলটি ‘বেশ লুকানো ও রাডারে নিচের’ দিকে থাকে। এর প্রধান কারণ ঋণমানহীন ঋণগ্রহীতারা সামষ্টিকভাবেও বেশ ছোট আকারের হয়। পাঁচ বছর ধরে এসব ঋণমানহীন ছোট কোম্পানিগুলোর সম্পদের পরিমাণ ঋণমানযুক্ত কোম্পানিগুলোর সম্পদের ১০ শতাংশেরও কম রয়েছে।

চেওং বলেন, এসব ঋণমানহীন কোম্পানি খুবই বিপজ্জনক। ঋণমানযুক্ত কোম্পানিগুলোয় সমস্যা দেখা যাওয়ারও আগে ঋণমানহীন কোম্পানিকে খেলাপি হয়ে পড়তে দেখা যায়। অর্থনীতি শৃঙ্খলে এরাই দুর্বলতম অংশ।

আয় পূর্বাভাস ও রাজস্ব প্রবৃদ্ধির মতো নির্দেশকগুলো পর্যালোচনার মাধ্যমে চেওং ঋণমানহীন সংস্থাগুলোর সম্ভাব্য ঝুঁকি শনাক্ত করেছেন। এছাড়া তিনি করপোরেট পুনর্গঠনের মতো ‘নেতিবাচক’ ঘোষণার সম্ভাব্য সংকটের আভাস খোঁজার চেষ্টা করেছেন। তার বিশ্লেষণে সব অঞ্চল ও খাতের ঋণমানহীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে আর্থিক সংকটের মুখোমুখি থাকতে দেখা গেছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের মধ্যে বৈশ্বিক অর্থনীতি ক্রমে মন্দার দিকে ধাবিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে ব্যবসা মনোভাবের আরো অবনতি ঋণখেলাপির সংখ্যা আকস্মিকভাবে বাড়িয়ে তুলতে পারে।

চেওং বলেন, একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা হলো, ঋণমানহীন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রফিট মার্জিনে পতন। কয়েক বছর ধরে সস্তা ঋণ প্রাপ্যতার কারণে স্বল্প লাভজনক প্রকল্পগুলোয় অতি বিনিয়োগ এর পেছনের কারণ।

বিশ্লেষকরা বহু আগে থেকেই বিশ্বব্যাপী স্বল্প সুদহারের কারণে ঋণ বেড়ে যাওয়ার বিপদ সম্পর্কে বলে আসছেন। ২০০৮-০৯ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের পর সারা বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো অর্থনীতি উদ্দীপ্ত করতে শিথিল মুদ্রানীতি গ্রহণ করায় এ ধরনের সস্তা ঋণ পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

চলতি বছরের এপ্রিলে প্রকাশিত গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্টে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) জানায়, স্বল্প সুদহার অর্থনীতিতে ব্যাপক মাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ বাড়িয়ে তুলেছে, যা আর্থিক ব্যবস্থার দুর্বলতা বাড়াচ্ছে। ফলে অর্থনৈতিক অবনতির প্রভাব মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি।

এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল মার্কেট ইন্টেলিজেন্সের মূল্যায়নে দেখা গেছে, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রযুক্তি খাতের ঋণমানহীন প্রতিষ্ঠানগুলো সবচেয়ে বেশি আকস্মিকভাবে খেলাপি হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। চলতি বছর চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ‘নজিরবিহীন’ হারে খেলাপি হতে দেখা গেছে। এছাড়া যুক্তরাজ্যের চুক্তি ছাড়াই ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ত্যাগের সম্ভাবনা কোম্পানিগুলোর পূর্বাভাস ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। একই সময় চাহিদার পতন ও বৈশ্বিক বাণিজ্য উত্তেজনার কারণে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রযুক্তি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন