কেন বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণের কেন্দ্রে পরিণত হবে ভারত

বণিক বার্তা ডেস্ক   

বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদন শিল্পে নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা রয়েছে ভারতের। এ লক্ষ্য পূরণে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানের গাড়ির শহর ডেট্রয়েটের মতো ভারতের একটি শহরকে ‘বৈদ্যুতিক গাড়ির ডেট্রয়েট’-এ পরিণত করার পরিকল্পনাও রয়েছে দেশটির সরকারের। তবে সরকারের এ লক্ষ্যের পেছনে বড় প্রভাব রেখেছে ভয়াবহ পরিবেশ দূষণ ও তেল আমদানিনির্ভরতা হ্রাসের চাপ।

তবে ভারতের জন্য এটি বেশ বড় একটি লক্ষ্য বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে দেশটিতে বৈদ্যুতিক গাড়ি খাত এখনো সম্প্রসারণশীল এবং চীনসহ বিশ্বের বহু বাজার থেকে ভারত পিছিয়ে রয়েছে। এছাড়া উচ্চ ব্যয় ও চার্জিং পয়েন্টের ঘাটতি বৈদ্যুতিক গাড়ির ক্রেতাদের জন্য বড় প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবে।

দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি ও উৎপাদন বাড়াতে একের পর এক আগ্রাসী রূপরেখা হাজির করছে সরকার, যার মধ্যে ক্রেতাদের কর অব্যাহতি ও পরিকল্পিত ভর্তুকি রয়েছে। পাশাপাশি বৈদ্যুতিক গাড়ি খাতে আগামী তিন বছরের জন্য সরকারের ১০ হাজার কোটি রুপি বরাদ্দ খাতটি শক্তিশালী হতে সহায়ক হবে।

ভারত সরকারের মূল লক্ষ্য তেল আমদানি ব্যয় কমানো। এর সঙ্গে দূষণ হ্রাস ও টেকসই গতিশীলতার সুবিধা যুক্ত হওয়ায় বৈদ্যুতিক পরিবহনের গুরুত্ব বেড়েছে। এ প্রসঙ্গে মুম্বাইভিত্তিক কোটাক ইনস্টিটিউশনাল ইকুইটিজের গাড়ি বিশ্লেষক হিতেশ গোয়েল বলেন, পেট্রল ও ডিজেলচালিত গাড়ির বদলে বৈদ্যুতিক ও প্লাগ-ইন হাইব্রিডের মতো পরিবেশবান্ধব গাড়ি গ্রহণের মাধ্যমে বৈশ্বিক গাড়ি শিল্প একটি বিপ্লবের দারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে।

গোয়েল বলেন, চীন, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ দ্রুততার সঙ্গে বৈদ্যুতিক গাড়ি গ্রহণ করবে। পাশাপাশি ভারতের বাজারও বৈদ্যুতিক গাড়িকে স্বাগত জানাবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।

এ মুহূর্তে ভারতের বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজার তুলনামূলকভাবে ছোট হলেও বাজারটি বড় হওয়ার প্রস্তুতি দেখা যাচ্ছে। সোসাইটি অব ম্যানুফ্যাকচারার্স অব ইলেকট্রিক ভেহিকলসের পরিসংখ্যান অনুসারে, চলতি বছরের মার্চে শেষ হওয়া অর্থবছরে ভারতে বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৬০০টি, যেখানে আগের অর্থবছরে এ সংখ্যা ছিল মাত্র ১ হাজার ২০০। একই সময়ে দেশটিতে ১ লাখ ২৬ হাজার বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছে, যা আগের ছিল ৫৪ হাজার ৮০০টি।

জার্মানির গবেষণা প্রতিষ্ঠান জেডএসডব্লিউর পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০১৮ সালে চীনে বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি হয়েছে ১২ লাখ। উৎপাদক ও ভোক্তা উভয়ের জন্য ভর্তুকি ও প্রণোদনা দেয়ার মাধ্যমে বৈদ্যুতিক গাড়ির সক্রিয় প্রচারণা করে যাচ্ছে বেইজিং। ভারতও একই পথ অনুসরণ করতে যাচ্ছে।

ভারতের অন্যতম বৃহৎ বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি মাহিন্দ্রা ইলেকট্রিক। আগের অর্থবছরের তুলনায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কোম্পানিটির বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি আড়াই গুণ বেড়ে ১০ হাজার ২৭৫টিতে দাঁড়িয়েছে। ভারতের টাটা মোটরসও বৈদ্যুতিক গাড়ি খাতে দ্রুত জায়গা করে নিচ্ছে। সরকারকে ১০ হাজার বৈদ্যুতিক গাড়ি সরবরাহের একটি চুক্তি পেয়েছে টাটা। আগামী বছরগুলো নিয়ে নিজস্ব পরিকল্পনা রয়েছে কোম্পানিটির।

২০৩০ সাল নাগাদ ৩০ শতাংশ যানবাহন বৈদ্যুতিকে রূপান্তরের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে ভারত। যদি ২০১৭ সালে গৃহীত লক্ষ্যমাত্রায় ২০৩০ সাল নাগাদ শতভাগ বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্যবহারের কথা বলা হয়েছিল।

দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম এ দেশের ভয়াবহ দূষণ সমস্যা পরিবহন খাতকে বৈদ্যুতিকে রূপান্তরের প্রয়োজনীয়তা বাড়িয়ে তুলেছে। পরিবেশবাদী সংস্থা গ্রিনপিসের প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত ৩০টি শহরের ২২টিই ভারতের।

 

সূত্র: দ্য ন্যাশনাল

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন