টকিজ

দিন শেষে আঁধার নেমে এলে জ্বলে ওঠে এ শহরের কৃত্রিম আলো। অন্ধকারকে পরাস্ত করার আনন্দেই যেন পুরো শহর মত্ত হয়ে ওঠে। কেমন জানি এক বিস্ময় ভর করে রাতজাগা মানুষের চোখে-মুখেও। প্রায় যানবাহনশূন্য রাজপথের ধারে খানিকটা সময় দলবেঁধে হৈ-হুল্লোড় করা মানুষের দেখা মেলে ঢের। চিরকুট ব্যান্ডের সদস্যরাও যেন এ নিশাচর দলেরই সদস্য। একসঙ্গে দলবেঁধে গান গাওয়ার শুরু থেকে আজো চিরকুটের সদস্যরা রাত বাড়লেই নেমে পড়েন রাজপথে। ঘুরেফিরে হৈ-হুল্লোড় করতে করতে তারা সতেজ হওয়ার চেষ্টা করেন। চিরকুটের অন্যতম সদস্য সুমীর ভাষায়, এ রাতের সঙ্গে চিরকুটের দহরম-মহরম সম্পর্ক। তাই রাতের স্মৃতিকে আগলে রাখতেই যেন দলটি ‘কাঁটাতার’ শিরোনামে একটি নতুন মিউজিক ভিডিও তৈরি করেছে। মিউজিক ভিডিওটি যথারীতি অডিয়েন্সের কাছ থেকে সাড়াও পাচ্ছে বেশ।
মিউজিক ভিডিওটি নির্মাণ করা হয়েছে চিরকুট ব্যান্ডের সর্বশেষ প্রকাশিত অ্যালবাম ‘উধাও’-এর একটি গান দিয়ে। এ নিয়ে চিরকুট মুখোমুখি হয় টকিজের। জানতে চাওয়া হয়, কেন এ গান দিয়েই প্রথম মিউজিক অ্যালবামটি বের করা হলো? কারণ জানাতে গিয়ে সুমী বললেন, ‘এ গানের একটা মজার বিষয় হলো, রাতে আমরা যেভাবে ঘুরে ঘুরে কাজ করি এবং গানটির মধ্য দিয়ে আমাদের চিরকুট যেভাবে বেড়ে উঠেছে, সেগুলোরই রোমন্থন করার চেষ্টা হয়েছে এর মধ্য দিয়ে।’ কথা প্রসঙ্গে আরো জানা গেল, সুমী, পাভেল, ইমন, দিদার ও জাহিদ— চিরকুটের এ সদস্যরা সুর বাঁধা, মিউজিক কম্পোজসহ গান তৈরির আনুষঙ্গিক কাজের বেশির ভাগই রাতে করেন। ধ্যানমগ্ন হয়ে কাজ করতে করতে অনেকটা সময় বাদে ক্লান্তি এসে ভর করে তাদের ওপর। ঠিক তখনই তারা চলে যান রাজধানীর মগবাজার, হাতিরঝিলের মতো জায়গায়। শুধু তা-ই নয়, কখনো কখনো পুরান ঢাকার রাতের খাবার হোটেলগুলোও তাদের গন্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। পেটপূর্তি করে কোলাহলহীন নিস্তব্ধ রাতে তারা সমস্বরে গেয়ে ওঠেন নিজেদের বানানো গানের পঙিক্ত। সুমী কথার ফাঁকে তাই বললেন, ‘আমাদের নস্টালজিক মুহূর্তকে এ গান আর মিউজিক ভিডিওটির মধ্য দিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে চাই।’
চিরকুট সম্প্রতি ছয় লাইনের একটি গান বেঁধেছে। ‘গোলাপের কাঁটা’ শিরোনামের গানটি চিরকুট বানিয়েছে অমনিবাস ছবি ‘ইতি, তোমারই ঢাকা’র জন্য। মূলত এ অমনিবাসের মধ্যে ‘সাউন্ডস গুড’ নামের যে ছবিটি নির্মাতা গোলাম কিবরিয়া ফারুকী বানিয়েছেন, তাতেই এ গান থাকছে। গানটির কথা লিখেছেন সুমী। আর পুরো সংগীতায়োজন করেছেন ব্যান্ডটির ড্রামার পাভেল আরিন। সব মিলিয়ে একেবারে ভিন্ন মেজাজে আছে চিরকুট।
এখানেই শেষ নয়, চিরকুট জানিয়েছে, এখন থেকে ইউটিউব ভিত্তিক কিছু কাজ শুরুর পরিকল্পনা করেছে তারা। এছাড়া নতুন নতুন গানও তৈরি হচ্ছে, যা আপাতত চমক হিসেবেই রাখতে চাইছেন। এসব কথা জানানোর বাইরে সুমী আরো একটি বিষয়কে খুব গুরুত্ব দিতে চাইলেন এবং বললেন, ‘আমরা শিগগিরই লোকনির্ভর তথা শিকড়সন্ধানী গানের কাজে হাত দেব। এর মধ্য দিয়ে অন্য আরেক চিরকুটকেও শ্রোতারা আবিষ্কার করবে।’
পাঠকের মতামত