শেষ পাতা, খবর

অর্থ পাচার মামলায় বিসমিল্লাহ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) খাজা সোলেমান আনোয়ার চৌধুরী, তার স্ত্রী ও গ্রুপের চেয়ারম্যান নওরীন হাবিবসহ নয়জনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০-এর বিচারক আতাবুল্লাহ গতকাল এ আদেশ দেন। কারাদণ্ডের পাশাপাশি আসামিদের পাচারকৃত ১৫ কোটি ৩৩ লাখ ৬১ হাজার ৬৮৬ টাকার দ্বিগুণ পরিমাণ অর্থ জরিমানাও করেছেন আদালত। ওই অর্থ ৬০ দিনের মধ্যে আদায় করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে বলা হয়েছে।
দণ্ডিত অন্য আসামিরা হলেন— বিসমিল্লাহ গ্রুপের পরিচালক খাজা সোলেমানের বাবা সফিকুল আনোয়ার চৌধুরী, গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আকবর আজিজ মুতাক্কি, মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আবুল হোসেন চৌধুরী, ব্যবস্থাপক রিয়াজউদ্দিন আহম্মেদ, নেটওয়ার্ক ফ্রেইট সিস্টেম লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. আক্তার হোসেন, জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা মোস্তাক আহমদ খান ও এসএম শোয়েব-উল-কবীর।
২০১৩ সালের নভেম্বরে রাজধানীর নিউমার্কেট থানায় আসামিদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের এ মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পরে তদন্ত শেষে নয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিলে আদালত তা আমলে নিয়ে ২০১৬ সালে বিচার শুরু করেন। অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় গতকাল মামলার রায়ে সব আসামির ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত। তবে দণ্ডিত নয় আসামির সবাই মামলার শুরু থেকে পলাতক।
গতকাল রায় ঘোষণার এ মামলায় দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, বিসমিল্লাহ গ্রুপের বিরুদ্ধে ডজনের বেশি মামলা রয়েছে, যার মধ্যে প্রথম মামলার রায় হলো। মামলায় দুদকের পক্ষে মোট ২৪ জনের সাক্ষ্য শুনে বিচারক রায় ঘোষণা করেছেন।
জানা যায়, সরকারি-বেসরকারি পাঁচটি ব্যাংক থেকে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন বিসমিল্লাহ গ্রুপের কর্ণধাররা। ২০১১ ও ২০১২ সালে সংঘটিত এ কেলেঙ্কারি বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানে ধরা পড়ে ২০১৩ সালে। বিসমিল্লাহ গ্রুপ কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়া পাঁচ ব্যাংক হলো— রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা, বেসরকারি প্রাইম, যমুনা, প্রিমিয়ার ও শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভুয়া রফতানি আদেশ ও পণ্য রফতানি দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে গ্রুপটি। হলমার্কের মতো বিসমিল্লাহ গ্রুপও নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের খোলা স্থানীয় এলসি (ঋণপত্র) দিয়ে আরেক (এটাও নিজস্ব) প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি নিয়ে বিল তৈরি করে (অ্যাকোমডেশন বিল) তা ব্যাংকে জমা দিয়ে অর্থ বের করে নিয়েছে।
বেসরকারি প্রাইম ব্যাংকের মতিঝিল শাখা থেকেই ৩১২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বিসমিল্লাহ গ্রুপ। ব্যাংকের মতিঝিল শাখা থেকে দেয়া এসব ঋণের মধ্যে ২৪৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ফান্ডেড, আর ৬২ কোটি ৬ লাখ টাকা নন-ফান্ডেড। বিসমিল্লাহ গ্রুপ সবচেয়ে বেশি অর্থ আত্মসাৎ করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক থেকে। ব্যাংকটির করপোরেট শাখা, মগবাজার শাখা ও এলিফ্যান্ট রোড শাখা থেকে নামসর্বস্ব চারটি কোম্পানির মাধ্যমে প্রায় ৭৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এর মধ্যে ফান্ডেড ঋণ ৬৭৮ কোটি ৪৪ লাখ ও নন-ফান্ডেড ১৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা। গ্রুপটির কোম্পানি এমএস হিন্দোল ওয়ালি টেক্সটাইল মিলসের নামে ১৯৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা, শেহরিন টেক্সটাইল অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নামে ১৭ কোটি ৫৫ লাখ, শাহরিজ কম্পোজিট টাওয়েলের নামে ২৯৮ কোটি ৩ লাখ ও আলফা কম্পোজিটের নামে ১৮৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে।
ঋণের নামে যমুনা ব্যাংক থেকে ১৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন বিসমিল্লাহ কেলেঙ্কারির হোতারা। ব্যাংকটির দিলকুশা শাখা থেকে দেয়া এ ঋণের মধ্যে ফান্ডেড ১০৮ কোটি ৪৪ লাখ ও নন-ফান্ডেড ৪৬ কোটি টাকা।
অন্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের ইস্কাটন শাখা থেকে ৯৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা ফান্ডেড ও ১০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা নন-ফান্ডেড এবং প্রিমিয়ার ব্যাংকের মতিঝিল শাখা থেকে ফান্ডেড ২৩ কোটি ২২ লাখ ও নন-ফান্ডেড ৩৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে বিসমিল্লাহ গ্রুপ।
ব্যাংকিং খাতের এ কেলেঙ্কারি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে ঊর্ধ্বতন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো। এরপর ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর বিসমিল্লাহ গ্রুপের এমডি ও চেয়ারম্যানসহ ৫৪ জনকে আসামি করে ১২টি মামলা করে দুদক। এর মধ্যে গ্রুপটির এমডি, চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনকে সবক’টি মামলায় আসামি করা হয়। আসামিদের মধ্যে অন্য ৪১ জন বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তা।
পাঠকের মতামত