শেষ পাতা, খবর

ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় স্বয়ংক্রিয় বৈদ্যুতিক ট্রাফিক সিগনাল বাতির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ উদ্যোগ কার্যকর হবে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই। এতদিন পর্যন্ত এসব বাতির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ছিল সিটি করপোরেশনের হাতে। সেখান থেকে তা হস্তান্তর হবে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত এক সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ‘ঢাকা শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন’ শীর্ষক ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান।
সভায় বৈদ্যুতিক সিগনালবাতির পাশাপাশি রিমোট নিয়ন্ত্রিত অটোমেটিক সিগনালিং ব্যবস্থা চালুরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে এটি কার্যকর করা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার রাস্তায় ব্যাপক হারে ট্রাফিক সিগনাল বাতি স্থাপনের কাজ শুরু হয় ২০০৪ সালের দিকে। ঢাকা আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পের আওতায় (২০০৪-১২) স্থাপন করা হয় ৫৯টি সিগনাল বাতি। এতে ব্যয় হয় প্রায় ১৪ কোটি টাকা। ২০০৯ সালে বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তায় ক্লিন এয়ার অ্যান্ড সাসটেইনেবল এনভায়রনমেন্ট (কেস) প্রকল্পের আওতায় স্থাপন করা হয় ১০০টি স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সংকেত ব্যবস্থা। তবে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় এসব সিগনাল বাতি কোনো কাজেই আসেনি। সিগনাল বাতির ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এসবের সুফল পায়নি রাজধানীবাসী। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১৭ মে পরীক্ষামূলকভাবে রাজধানীর কাকলী থেকে শাহবাগ পর্যন্ত ১১টি পয়েন্টে অটোসিগনাল চালু করা হয়। কিন্তু এগুলো চালুর পর থেকেই দেখা দেয় তীব্র যানজট। এ অবস্থায় ট্রাফিক পুলিশ সড়ক নিয়ন্ত্রণে সনাতনী পদ্ধতিতে ফিরে যেতে বাধ্য হয়। বর্তমানে ঢাকার রাস্তায় হাত, বাঁশি এমনকি দড়ি ব্যবহার করেও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যায় ট্রাফিক পুলিশকে।
বর্তমানে ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থায় ইনটেলিজেন্ট ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার (আইটিএস) একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। এর মাধ্যমে ক্যামেরা (সিসিটিভি) বা রাস্তায় বসানো ভেহিকল ডিটেক্টরের (গাড়ি শনাক্তকরণ যন্ত্র) মাধ্যমে গাড়ির সংখ্যা হিসাব করা হবে। এ যন্ত্রে নির্দিষ্ট সময়ে একটি লেন দিয়ে কতগুলো গাড়ি পার হলো তার হিসাব সংরক্ষণ করা হয়। এ অনুযায়ী কোনো লেনে গাড়ির চাপ বেশি থাকলে, সেদিকের গাড়িগুলোর জন্য সবুজ সংকেত জ্বলে ওঠে। কোনো গাড়ি ট্রাফিক আইন অমান্য করলে সেটিকেও দ্রুত শনাক্ত করে ফেলা যায়। রাস্তায় থাকা পথচারীদেরও হিসাব করে আইটিএস। সে অনুযায়ী সংকেত দেয় পথচারী পারাপারের। সবকিছু নিয়ন্ত্রিত হয় একটি কন্ট্রোল রুম থেকে। পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকার মহাখালী, গুলশান-১, পল্টন ও ফুলবাড়িয়ায় আইটিএস স্থাপনের কাজ চলছে। এসব পয়েন্টে আইটিএস সফল হলে, তা ঢাকার সব সিগনালে স্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে।
ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং যানজট নিরসনে স্বয়ংক্রিয় বৈদ্যুতিক সিগনাল ব্যবস্থায় গুরুত্ব দিচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ঢাকায় এ সিগনাল ব্যবস্থা চালু করার বিষয়ে ডিএমপিকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে কার্যালয় থেকে। পাশাপাশি ১৫ অক্টোবরের মধ্যে রিমোট কন্ট্রোলড অটোমেটিক বৈদ্যুতিক সিগনালিং পদ্ধতি চালুর জন্যও ডিএমপিকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সভায় যানবাহন ব্যবস্থাপনায় আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এগুলো হলো— ঢাকায় বাস চালানোর সময় দরজা বন্ধ রাখতে হবে। স্টপেজ ছাড়া কোথাও যাত্রী না ওঠানো। এটি ২০ আগস্টের মধ্যে কার্যকর করতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ও ডিএমপিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বাসের দৃশ্যমান দুটি স্থানে চালক ও হেলপারের নাম, লাইসেন্স নম্বর ও মোবাইল নম্বর রাখতে হবে।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কোনো মোটরসাইকেলে দুজনের বেশি যাত্রী উঠতে পারবে না। দুজনকেই হেলমেট ব্যবহার করতে হবে। মহাসড়কে চলাচলরত বাসের চালক ও যাত্রীদের সিটবেল্ট ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনে যাত্রীদের আসনের সঙ্গে সিটবেল্ট সংযোজন করতে হবে। এটিও আগামী ২০ আগস্টের মধ্যে সম্পন্ন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এছাড়া ১৮ আগস্টের মধ্যে ফুটওভারব্রিজ বা আন্ডারপাসের ১০০ মিটারের মধ্যে রাস্তা পারাপার বন্ধেরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সভায়। এগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে পর্যাপ্ত সংখ্যক লাইট লাগানোর জন্য সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে ২০ আগস্ট পর্যন্ত। ৩০ আগস্টের মধ্যে আন্ডারপাসগুলোর বাইরে আয়নার ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষ স্বচ্ছন্দে এবং নিরাপদে তা ব্যবহার করতে পারে।
সাধারণ মানুষ যাতে রাস্তা পারাপার হতে না পারে, সেজন্য ঢাকার সবগুলো সড়ক বিভাজকের উচ্চতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়া হয় সভায়। ৩০ অক্টোবরের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়া মহাখালী ফ্লাইওভার থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অন্তত দুটি মোবাইল কোর্ট চালু রাখতে হবে।
এর বাইরেও সভায় ফিটনেস সনদ দেয়ার প্রক্রিয়াটি যথাযথভাবে অনুসরণ, ফিটনেসবিহীন যানবাহন ধ্বংসসহ সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে আরো কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
পাঠকের মতামত