আন্তর্জাতিক ব্যবসা

যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বের অন্যান্য শীর্ষ অর্থনীতির মধ্যে চলমান বাণিজ্য বিভেদ নিয়ে সতর্ক করেছেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) প্রধান। তারা বলেছেন, ক্রমে বেড়ে চলা এ বাণিজ্য উত্তেজনা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে হুমকি সৃষ্টি করছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর জোট গ্রুপ অব সেভেনের (জি৭) সাম্প্রতিক সম্মেলনটি মতবিরোধের মধ্য দিয়ে শেষ হওয়ায় এ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন তারা। খবর ব্লুমবার্গ, এএফপি ও সিএনএন মানি।
আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টিন লাগার্দে সোমবার বার্লিনে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, শীর্ষ শিল্পোন্নত দেশগুলোর বাণিজ্যযুদ্ধের হুমকি তীব্র হয়ে ওঠায় বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ঝুঁকি বাড়ছে। তিনি আরো বলেন, ‘ছয় মাস আগে বিশ্ব অর্থনীতির আকাশে আমরা যে মেঘের পূর্বাভাস দিয়েছিলাম, তা দিনে দিনে আরো কালো হয়ে উঠছে এবং আমি বলব, এ সপ্তাহান্তে তা আরো ঘনীভূত হয়ে উঠেছে।’
দুই দিনব্যাপী জি৭ বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে অন্য দেশগুলোর মতের মিল না হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ কথা জানান আইএমএফ প্রধান লাগার্দে। আগেভাগেই জি৭ সম্মেলন থেকে চলে আসার পর টুইটারে ট্রাম্প জানান, যৌথ বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন তুলে নেয়া হয়েছে তিনি সম্মেলনের আয়োজক কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর বিরুদ্ধে দুর্বলতা ও অসততার অভিযোগ তোলেন।
সম্মেলনে জি৭-এর অন্য দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রকে আমদানিকৃত ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর নতুন করারোপ প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানিয়েও ব্যর্থ হয়। উপরন্তু অন্যান্য দেশের নেতাদের উদ্দেশে সব ধরনের বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা, শুল্ক এবং ভর্তুকি অবলুপ্ত করার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। এমনকি এসব দেশের সঙ্গে পুরোপুরিভাবে বাণিজ্য বন্ধ করে দেয়ারও হুমকি দেন যুক্তরাষ্ট্রের এ প্রেসিডেন্ট।
এ অবস্থায় জার্মানি ও ফ্রান্স যৌথ বিবৃতি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন প্রত্যাহারের ঘটনায় ট্রাম্পের সমালোচনা করে। জাতীয় নিরাপত্তার কথা জানিয়ে কানাডা, মেক্সিকো ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে আমদানি করা ইস্পাত এবং অ্যালুমিনিয়ামের ওপর নতুন শুল্ক আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। আর যুক্তরাষ্ট্রের এ তিন বাণিজ্য সহযোগী দেশের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে পাল্টা পদক্ষেপ গ্রহণের ঘোষণা দেয়ার পর বাণিজ্য নিয়ে বৈশ্বিক উত্তেজনা আরো বেড়েছে। এছাড়া বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীনের সঙ্গেও বাণিজ্য বিবাদে জড়িয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ চুরির অভিযোগে চীনের ৫ হাজার কোটি ডলার মূল্যের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। চলতি সপ্তাহেই এ পণ্যগুলোর তালিকা প্রকাশ করতে চাইছে দেশটি। অন্যদিকে চীনের পক্ষ থেকেও গাড়ি, উড়োজাহাজ এবং সয়াবিনসহ বিভিন্ন মার্কিন পণ্যে শুল্কারোপের হুমকি দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনার ফলাফল ঘিরে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে এ বাণিজ্য বিবাদ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আইএমএফ এবং ডব্লিউটিও প্রধান। বার্লিনে সোমবার সংবাদ সম্মেলনে লাগার্দের সঙ্গে সহমত জানিয়ে ডব্লিউটিও প্রধান রবার্তো আজেভেদো বলেন, বৈশ্বিক বাণিজ্যে বর্ধনশীল উত্তেজনা ‘অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাবের ঝুঁকি বাড়াবে এবং আর্থিক সংকটের পর বাণিজ্য প্রবৃদ্ধিতে সবচেয়ে শক্তিশালী টেকসই এ মুহূর্তকে বাধাগ্রস্ত করবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই এ উত্তেজনা বন্ধ করতে হবে। প্রতিশোধমূলক প্রক্রিয়া সবার জন্যই সহায়ক হতে পারে না। এটি কাউকেই সহায়তা করবে না।’
কুইবেকে জি৭ সম্মেলনে উপস্থিত লাগার্দে সরাসরি ট্রাম্পের নাম উল্লেখ না করলেও সম্প্রতি বর্ধনশীল সংরক্ষণবাদিতা নিয়ে সতর্ক করেন তিনি।
এর আগে আইএমএফের পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, চলতি বছর ও আগামী বছর বিশ্ব অর্থনীতি ৩ দশমিক ৯ শতাংশ সম্প্রসারিত হবে; যা ২০১১ সালের পর সর্বোচ্চ। তবে বিশ্বে চলমান অস্থিরতার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সুদের হার বৃদ্ধি, যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক প্রণোদনা হ্রাস এবং চীনের শ্লথগতির কারণে প্রবৃদ্ধি দুর্বল হয়ে পড়তে পারে বলে জানিয়েছে আইএমএফ।
পাঠকের মতামত