বৃহস্পতিবার | আগস্ট ১০, ২০১৭ | ৬ ফাল্গুন ১৪২৫
  • আজকের পত্রিকা▾
    • প্রথম পাতা
    • খবর
    • টেলিকম ও প্রযুক্তি
    • সম্পাদকীয়
    • আন্তর্জাতিক ব্যবসা
    • আন্তর্জাতিক খবর
    • পণ্যবাজার
    • লাইফস্টাইল
    • টকিজ
    • শিল্প-বাণিজ্য ও ব্যাংক
    • শেয়ারবাজার
    • খেলাধুলা
    • দেশের বার্তা
    • শেষ পাতা
  • খবর▾
    • জাতীয়
    • দেশের খবর
    • বিশেষ খবর
    • চট্টগ্রাম বার্তা
    • ফিচার
    • শিক্ষা বার্তা
    • প্রবাসের বার্তা
  • আন্তর্জাতিক▾
    • আন্তর্জাতিক খবর
    • আন্তর্জাতিক ব্যবসা
  • অর্থনীতি▾
    • শিল্প-বাণিজ্য
    • পণ্যবাজার
    • শেয়ারবাজার
  • টেলিকম ও প্রযুক্তি
  • খেলা
  • টকিজ
  • লাইফস্টাইল▾
    • উড়ুক্কু
    • স্বাস্থ্যযত্ন
    • সর্বজয়া
    • সবুজ
    • আপন অঙ্গন
    • ঈপ্সনীয়
    • ভ্রমণ
  • সম্পাদকীয়
  • ম্যাগাজিন▾
    • সংকেত
    • রঙঢঙ
    • সিল্করুট
    • বদ্বীপ
    • বিশেষ সংখ্যা
  • স্থিরচিত্র
  • সবাক চিত্র
  • ই-পেপার
  • আজকের পত্রিকা
  • প্রথম পাতা
  • শেষ পাতা
  • টেলিকম ও প্রযুক্তি
  • আন্তর্জাতিক ব্যবসা
  • শেয়ারবাজার
  • পণ্যবাজার
  • খেলা
  • টকিজ
  • শিল্প-বাণিজ্য ও ব্যাংক
  • আন্তর্জাতিক খবর
    • দেশের খবর
      • খবর
      • সম্পাদকীয়
      • সাক্ষাৎকার
      • বিশেষ সংখ্যা
      • ম্যাগাজিন
        • বদ্বীপ
        • সংকেত
        • রঙঢঙ
        • সিল্করুট
      মেনু

      সম্পাদকীয়

      পরিবারে ভাঙন ও সামাজিক বিপর্যয়ের সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ

      ড. হাসান মাহমুদ | ২০:৫৫:০০ মিনিট, আগস্ট ১০, ২০১৭

      Shares

      ৩ আগস্ট বাংলা ট্রিবিউনে প্রকাশ— ঢাকায় বছরে ৫ হাজার ১৪৩টি পরিবার ভেঙে পড়ছে, যার মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ তালাকের নোটিস আসছে স্ত্রীদের কাছ থেকে। প্রতিবেদনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যানের উদ্ধৃতি দিয়ে এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে নারীদের স্বাধীনতা, সচেতনতা ও উপার্জন বৃদ্ধি, যা নারীকে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম করছে।

      তালাকের মাধ্যমে পরিবারের ভাঙন একটা সামাজিক বিপর্যয় এবং এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য এর কারণ ও প্রকৃতি যথাযথভাবে অনুসন্ধানপূর্বক সম্ভাব্য সমাধান খুঁজে বের করা সময়ের দাবি। এক্ষেত্রে বাস্তবভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে সমস্যার কারণ ও প্রতিকার বিষয়ে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মতামত দিতে পারেন সমাজবিজ্ঞানীরাই। কিন্তু উল্লিখিত প্রতিবেদনে সমাজবিজ্ঞানের একজন সিনিয়র অধ্যাপকের বরাতে তালাকের যেসব কারণ চিহ্নিত হয়েছে, সেগুলো যৌক্তিকভাবে অগ্রহণযোগ্য এবং ত্রুটিপূর্ণ। এ নিবন্ধে একটা সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে তালাকের প্রকৃত কারণ ও সম্ভাব্য সমাধান প্রস্তাব করব।

      বস্তুজগতে পদার্থের মূল যেমন অণু, সামাজিক জগতে সেই অণু হচ্ছে পরিবার। এজন্য পরিবার ভেঙে যাওয়া মানে গোটা সমাজ ব্যবস্থাই ধসে পড়া। অতএব বর্তমানে বাংলাদেশে যে ব্যাপক হারে তালাক সংঘটিত হচ্ছে, তা অবশ্যই জাতীয় জীবনের জন্য একটা অশনিসংকেত।

      বর্তমান বাংলাদেশে তালাকের মহামারী আকার ধারণ করার বিষয়টি প্রথম গণমাধ্যমে উঠে আসে চলতি বছরের গোড়ার দিকে। গত ১৪ মার্চে সময়ের কণ্ঠস্বর পত্রিকা গত ছয় বছরে ঢাকা শহরে প্রায় ৩১ হাজার বিয়ে বিচ্ছেদের তথ্য উল্লেখ করে। দৈনিক সমকালে ২৯ এপ্রিলে বিয়ে বিচ্ছেদের ওপর একটা বেশ বড় কলেবরে প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঢাকা শহরে গত ছয় বছরে বিয়ে বিচ্ছেদের ৩৬ হাজার ৩৭১টি আবেদনের মধ্যে ২৪ হাজার ৮০৩টি, অর্থাৎ ৬৮ শতাংশের ক্ষেত্রে আবেদনকারী হচ্ছেন নারী। আরো বেশক’টি সংবাদ মাধ্যম এ বিষয়ে তথ্যবহুল প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

      সমাজবিজ্ঞানীদের বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে নারীদের স্বাধীনতা, অর্থোপার্জনের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়া এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বৃদ্ধি— এক কথায়, নারীর ক্ষমতায়নকে স্ত্রীদের অধিক হারে তালাকের আবেদনের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যুক্তির খাতিরে এটি সঠিক বলে ধরে নিলেও খুব সহজেই ভুলটি ধরা পড়ে। সাধারণভাবে সমস্যার কারণ নির্ণয় করা গেলে সেটা দূর করতে পারলেই সমাধান হয়। ভাইরাসের কারণে জ্বর হলে শরীরকে ভাইরাসমুক্ত করলে জ্বর চলে যায়। একই যুক্তিতে তাহলে নারীর ক্ষমতায়ন রোধ করতে পারলেই তালাকের হার কমে যাবে, তথা পরিবারের ভাঙন রোধ করা যাবে!

      আরেকভাবে উল্লিখিত অনুমান তথা নারীর ক্ষমতায়নের কারণে তালাকের হার বৃদ্ধির ধারণার যথার্থতা পরীক্ষা করা যায়। নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি যদি সত্যিই তালাকের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ হয়ে থাকে, তার মানে দাঁড়ায় এই যে, নারী তালাক দিতে পারে না সেই ক্ষমতা না থাকার কারণে। অর্থাৎ যথেষ্ট ক্ষমতা থাকলে নারী তালাক দিত এবং দিচ্ছেও। এটা সঠিক বলে ধরে নিলে তো বলতে হয়, পরিবার মূলত নারীর অনিচ্ছায়, নারীর ওপর চাপিয়ে দেয়া একটা সামাজিক প্রতিষ্ঠান!

      উল্লিখিত দুটো যুক্তিকেই স্বাভাবিক বোধবুদ্ধিসম্পন্ন সবাই বাতিল করবে। অতএব নিঃসন্দেহে এ দাবি করা যায়, ক্রমবর্ধমান নারীর ক্ষমতায়ন তালাকের হার বৃদ্ধির প্রকৃত কারণ নয়। কিন্তু তালাক তো হচ্ছে। আর প্রতি তিনটি তালাকের ঘটনার দুটিতেই আবেদনকারী হচ্ছেন নারী। তাহলে এর প্রকৃত কারণ কি? প্রতিকারই বা কিরূপ?

      ২. সমাজবিজ্ঞানে প্রচলিত গবেষণারীতি অনুযায়ী ব্যক্তির যেকোনো সমস্যাকে স্থান (সমাজের সামগ্রিকতার মধ্যে ব্যক্তিজীবন) এবং কালের (ঘটে যাওয়া অতীতের ধারাবাহিকতার প্রেক্ষাপটে বর্তমান) পরিপ্রেক্ষিতে পাঠ করা হয়, যাকে এক কথায় বলা হয় ‘সোসিওলজিক্যাল ইমাজিনেশন’ বা সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি। এ পদ্ধতি অনুসরণ করে দেশের বিদ্যমান তালাক এবং পরিবার ভাঙনের সমস্যার বিশ্লেষণ উপস্থাপন করছি।

      তালাক নিয়ে আলোচ্য সংবাদ প্রতিবেদনগুলোর সবগুলোই উল্লেখ করেছে— দায়িত্ব পালনে অনীহা ও অবহেলা, পারস্পরিক আস্থাহীনতা ও বোঝাপড়ার অভাব এবং পরকীয়াকে আবেদনকারীরা (উল্লেখ্য, এদের ৭০ শতাংশ নারী) তালাকের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। (এসব প্রতিবেদন সিটি মেয়র ও অন্যান্য কর্মকর্তা এবং সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপকের বরাতে আরো যেসব কারণ উল্লেখ করেছেন, সেগুলো বাদ দিয়ে তালাকের আবেদনকারীদের উল্লিখিত কারণগুলোকে বিবেচনা করছি। কারণ সেগুলো তথ্য নয়, বরং অযৌক্তিক এবং ত্রুটিপূর্ণ বিশ্লেষণ)।

      ‘দায়িত্ব পালনে অনীহা ও অবহেলা’র অভিযোগ উঠতে পারে, যদি পরিবারের স্বামী/স্ত্রী আমাদের সমাজে প্রচলিত রীতিনীতি অনুসারে আর্থিক, সামাজিক ও দৈনন্দিন ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়। সাধারণত স্বামীর ক্ষেত্রে মূল দায়িত্ব হলো পরিবারের ভরণ-পোষণ ছাড়াও সন্তানের পড়াশোনা এবং নানাবিধ দেখভাল করা আর স্ত্রীর ক্ষেত্রে সন্তান জন্মদান ও প্রতিপালনের পাশাপাশি গৃহস্থালির কাজকর্ম তত্ত্বাবধান করা এবং অন্যান্য সামাজিকতা করা। এসব রীতিনীতি সমাজ কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা পরিবারের ওপর হঠাৎ একদিন চাপিয়ে দেয়নি, বরং বংশ পরম্পরায় যুগের পর যুগ ধরে নানাবিধ বাস্তব প্রয়োজনে এসবের উৎপত্তি এবং প্রচলন হয়েছে। আমাদের সমাজে ব্যক্তি নির্বিশেষ সবাই এসব রীতিনীতির মধ্যেই বেড়ে উঠেছে।

      কিন্তু আধুনিক বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায়, বিশেষ করে নব্বইয়ের দশক থেকে, আমাদের সমাজ পরিবর্তনের গতি ও প্রকৃতি সামাজিক বাস্তবতাকে প্রচলিত রীতিনীতির সঙ্গে ক্রমাগত অসামঞ্জস্যপূর্ণ করে তুলছে। গভীরভাবে লক্ষ করলে নানা ক্ষেত্রে এ অসামঞ্জস্যতা চোখে পড়বে। আমি শুধু একটি উদাহরণ দিয়ে পুরো প্রক্রিয়াটা ব্যাখ্যার চেষ্টা করব।

      বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবেই কৃষিভিত্তিক সমাজ, যেখানে সবাই একান্তবর্তী পরিবারে বসবাস করত। আশির দশকেও বাংলাদেশের জাতীয় আয়ের প্রায় ৭৫ শতাংশ আসত কৃষি থেকে এবং জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি সরাসরি কৃষিতে নির্ভরশীল ছিল। সেই সমাজে পরিবারের সবাই মিলে জমিতে কৃষি এবং/অথবা ব্যবসায়ের মাধ্যমে আয়- রোজগার করত, সন্তান জন্মদান ও প্রতিপালন করত, অন্য সব সামাজিকতা করত। ফলে কর্তব্য বা দায় যা কিছু ছিল, সবই ছিল মূলত সম্মিলিতভাবে পারিবারিক।

      কিন্তু বর্তমানে সে বাস্তবতা অনেকখানি বদলে গেছে। এখন জাতীয় আয়ের মাত্র ১৪ দশমিক ৭৯ (২০১৬-১৭ অর্থবছর)  শতাংশের মতো আসে কৃষি থেকে। শুধু কৃষিকাজ থেকে আর জীবনধারণের উপায় নেই। ফলে শিক্ষা লাভ করে একান্নবর্তী পরিবার থেকে বের হয়ে ব্যক্তি দূর-দূরান্তরে চলে যাচ্ছে চাকরি বা ব্যবসার কারণে, সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে স্ত্রী ও সন্তানদের। পরিবারের ভরণ-পোষণ, গৃহস্থালির ব্যবস্থাপনা, সন্তানদের লালন-পালন, ইত্যাদি দায়িত্ব পালনে পরিবারের সম্মিলিত ভূমিকা পালন করতে হচ্ছে ব্যক্তিকে, একাকী। সামাজিক প্রচলিত রীতিনীতি কিন্তু সেই আগের মতোই আছে। যেমন— সাধ্যে না কুলালেও পরিবারের স্ট্যাটাস অনুযায়ী খরচ করার মতো অর্থ রোজগার করতেই হয়। পোশাকে-আশাকে, চালচলনে ঠাটবাট বজায় রাখতেই হয়। আবার ঘরের মধ্যে রান্না-ধোয়া-মোছা থেকে শুরু করে যাবতীয় গৃহস্থালির কাজও করতে হয়। দশজনের দায়িত্ব ও কর্তব্য একজনের কাঁধে পড়লে, তা সে নারী-পুরুষ যে-ই হোক, ব্যর্থ হবেই। সেটা হচ্ছেও।

      এর পর দেখা যাক ‘পারস্পরিক আস্থাহীনতা ও বোঝাপড়ার অভাব’ অভিযোগটি। নারী ও পুরুষ উভয়েই নানা স্বপ্ন নিয়ে ঘর বাঁধে একত্রে সেসব স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করবে বলে। কিন্তু উপরে ব্যাখ্যা করলাম কেন বর্তমান সমাজিক বাস্তবতায় নারী-পুরুষ নির্বিশেষ একাকী ব্যক্তির পক্ষে পারিবারিক জীবনের যাবতীয় দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করা অসম্ভব। ফলে স্বভাবতই স্বামী-স্ত্রীর কল্পনা আর প্রাপ্তির মধ্যে ফারাক দেখা দেয়, যা ক্রমাগতভাবে বাড়তেই থাকে। প্রত্যাশা পূরণে ক্রমাগত ব্যর্থতার একপর্যায়ে গিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কেউ একজন অথবা উভয়েই সঙ্গীর ওপর আস্থাহীন হয়ে পড়ে। ফলে পারস্পরিক শলাপরামর্শের স্থান দখল করে বোঝাপড়ার অভাব। বাজার, রান্না, ঘুরাঘুরি ইত্যকার যেকোনো দৈনন্দিন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের দিকে তাকালেই ব্যাপারটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

      আর সঙ্গীর ওপর থেকে এ আস্থা যখন বিলীন হয়ে যায় যে, সে লালিত স্বপ্নগুলোকে বাস্তবায়িত করতে পারবে না, তখন অন্য কাউকে তেমন সামর্থ্যসম্পন্ন মনে হলে বিদ্যমান সঙ্গীকে ত্যাগ করে নতুন করে জুটি বাঁধা একটা সম্ভাব্য ফলাফল বৈকি।

      ঘটনার পরিক্রমায় শুরু হয় পরকীয়া অথবা পরকীয়ার সন্দেহ। শেষ দৃশ্যে তালাকের আবেদন এবং বিবাহ বিচ্ছেদ।

      ৩. পরিবর্তন ঘটেছে শুধু আর্থসামাজিক কাঠামোতেই নয়, বিয়ে এবং পরিবারের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতেও। আর এর কেন্দ্রে রয়েছে ভালোবাসা-নির্ভর ব্যক্তিগত পছন্দে বিয়ের মাধ্যমে একক পরিবার গড়ার প্রবণতা। ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অধিকাংশ সমাজে যুগ যুগ ধরে বিয়ের মাধ্যমে পরিবার গঠনের রীতি অনুসরণ করা হয়, যেখানে দুটি পরিবার, কখনো বা গোত্র/গোষ্ঠী দুজন তরুণ-তরুণীকে জোড় বেঁধে দেয়। এখানে ব্যক্তির পছন্দ/অপছন্দ গৌণ, পরিবারের ইচ্ছাই মুখ্য। কাজেই ব্যক্তিগত ভালোবাসাও হিসাবের বাইরে। বিভিন্ন সমাজের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বিয়ে ও পরিবারের বিশ্বজনীন রূপ এইটাই।

      ভালোবাসার ইতিহাস মানুষের ইতিহাসের সমান পুরনো। কিন্তু ভালোবাসার ভিত্তিতে বিয়ে মাত্র ৫০ বছর আগের।

      রোমান্টিক ভালোবাসা এবং সেখান থেকে বিয়ের মাধ্যমে একক পরিবার, যেখানে স্বামী উপার্জনকারী আর স্ত্রী গৃহস্থালির ব্যবস্থাপক। এমন পরিবারের উদ্ভব হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। দ্রুত উন্নয়নশীল অর্থনীতি, ভোগবাদ ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ মিলেমিশে এ ধরনের বিয়ে এবং পরিবারকে আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে যা, ক্রমে সমগ্র পশ্চিমা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

      স্বামী-স্ত্রীর ব্যক্তিগত নৈকট্য এবং যৌনতৃপ্তিসহ আর সব চাহিদা এবং আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ এই পরিবারের মূল লক্ষ্য। আগেকার পরিবারকেন্দ্রিক বিয়েতে যেখানে মূল লক্ষ্য ছিল নৈতিকতা এবং পরিবারের তথা সমাজের প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য, এই নতুন পরিবারে তা ব্যক্তিগত সন্তুষ্টি।

      কিন্তু ব্যক্তির সন্তুষ্টির লক্ষ্যে গড়া এই একক পরিবারের ভিত্তিমূলে রোমান্টিক ভালোবাসা নিয়ে আসাটা ধ্বংসাত্মক বলে প্রতীয়মান হতে খুব একটা দেরি হলো না। একান্নবর্তী/যৌথ পরিবারের মাধ্যমে আরেঞ্জড বিয়েতে সমগ্র পরিবারের অংশগ্রহণ থাকে— বিয়ে থেকে শুরু করে আয় উপার্জন, গৃহস্থালি, সন্তান লালন-পালন, বিনোদন, সামাজিকতা ইত্যাদির সবকিছুতে। কিন্তু একক পরিবারে সব কাজ করতে হয় স্বামী ও স্ত্রীকে, কারো সাহায্য ছাড়া।

      অনেকের দায়িত্ব একজনের ওপর এসে পড়ে বলে এই একক পরিবার স্বাভাবিক নিয়মেই ভেঙে পড়ে, যেমন ভেঙে পড়ে একতলা ফাউন্ডেশনের ওপর তৈরি করা বহুতল ভবন। বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই রোমান্সের জগৎ থেকে কঠিন বাস্তবে নেমে আসে নবদম্পতি। দুজনে একসঙ্গে দেখা স্বপ্নগুলো একে একে ভেঙে যেতে থাকে। ফলস্বরূপ, নানা টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে তারা ক্রমাগত বিচ্ছেদের দিকে এগিয়ে যায়।

      উদ্ভবের মাত্র দুই দশকের মধ্যেই আমেরিকায় একক পরিবার এত ব্যাপক হারে ভেঙে যেতে থাকে যে, পরিবারকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য গড়ে ওঠে বিয়ে বিচ্ছেদ প্রতিরোধ-বিষয়ক কাউন্সেলিংয়ের শত শত পেশাদার এজেন্সি। কিন্তু প্রায় চার দশক ধরে কাজ করেও এরা আমেরিকায় বিয়ে বিচ্ছেদ ঠেকাতে পারেনি। কারণ এরা সমস্যার গোড়ায়, তথা ব্যক্তির সাধ্যাতীত দায়িত্ব/আশা/আকাঙ্ক্ষা পূরণের ভিত্তিকে স্বাভাবিক ধরে নিয়েছে।

      এটা একটা সাধারণজ্ঞান যে, একতলার ফাউন্ডেশনের ওপর দশতলা দালান তৈরি করলে সেটা ভেঙে পড়বে, একজনের কাঁধে ১০ মণ ওজনের বোঝা দিলে সে ব্যর্থ হবে। রোমান্টিক ভালোবাসাভিত্তিক বিয়ের মাধ্যমে গঠিত পরিবারও ঠিক একই রকম।

      পরিবারের জন্য উপার্জন করতে স্বামী দিনমান পরিশ্রম করে বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া-দাওয়া করে ঘুমাতেই যাবে, স্ত্রীর সঙ্গে টিভিরুমে বসে সিরিয়াল দেখবে না, কিংবা জানালার ধারে বসে চাঁদের দিকে তাকিয়ে কবিতা বলবে না। বরং চিন্তা করবে আগামী দিনের কাজগুলো কীভাবে করবে, আয়-উপার্জন বাড়িয়ে সংসারে কীভাবে আরো সচ্ছলতা আনবে। আবার সন্তানদের নাইয়ে-খাইয়ে স্কুলে দিয়ে এসে, ঘরদোর পরিষ্কার করে সারা দিনের জন্য রান্না-বান্না করে আবার সন্তানদের স্কুল থেকে নিয়ে এসে হোমওয়ার্ক দেখিয়ে রাতের খাবার খাইয়ে-দাইয়ে ঘুম পাড়ানোর মধ্য দিয়ে ক্লান্ত-শ্রান্ত স্ত্রীর মুখে বিয়ের আগের প্রেমময় অভিব্যক্তি দেখার আশা করাও অবাস্তব।

      রোমান্টিক ভালোবাসা সত্য, কিন্তু পরিবারের মতো একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠানের ভিত্তি হিসেবে অযৌক্তিক এবং ভঙ্গুর। এটি কল্পনার জগতে ব্যক্তিকে রাজারানী বানাতে পারলেও বাস্তবে সামর্থের অতীত দায়িত্ব-কর্তব্য চাপিয়ে দিয়ে কার্যত ব্যর্থতার দিকে ঠেলে দেয়। আর তাই বিয়ের ভিত্তি হিসেবে রোমান্টিক ভালোবাসা কখনই গ্রহণযোগ্য বিবেচ্য হয়নি, কোনো সমাজেই না। যেমন— প্রাচীন ভারতবর্ষে ভালোবাসাকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী অসামাজিক কর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হতো। গ্রিকরা ভালোবাসাকে মনে করত এক ধরনের মানসিক রোগ, যে ধারণা মধ্যযুগে সারা ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় ফ্রান্সে ভালোবাসাকে মনে করা হতো মনোবৈকল্য রোগ, যার ওষুধ ছিল ভালোবাসার ব্যক্তি বা অন্য কারো সঙ্গে যথাসম্ভব দ্রুত যৌন সংসর্গ করা, যাতে রোগ তাড়াতাড়ি সেরে যায়। চীন দেশে বাবা-মা পুত্রকে বাধ্য করত পুত্রবধূকে তালাক দিতে, যদি তার ব্যবহার বা কাজকর্ম আশানুরূপ না হতো। এক্ষেত্রে স্ত্রীর প্রতি পুত্রের ব্যক্তিগত ভালোবাসা বিবেচ্যই ছিল না। চৈনিক ভাষায় ভালোবাসা শব্দটিই ছিল না এর কাছাকাছি একটি শব্দ ছিল, যার অর্থ ছিল বেআইনি ও অসামাজিক সম্পর্ক। ১২ ও ১৩ শতকে ইউরোপে আদর্শ ভালোবাসা ছিল সমাজের উচ্চশ্রেণীতে বিবাহ সম্পর্ক-বহির্ভূত দুজনের মধ্যকার সম্পর্ক। প্রকৃত ভালোবাসার প্রথম শর্তই ছিল দুজন বিবাহিত হবে না। ইউরোপের মধ্য এবং নিম্নশ্রেণীতেও ভালোবাসাকে পরিবারের বাইরের বিষয় হিসেবে গণ্য করা হতো, যা তাদের নানা জনপ্রিয় গান ও গল্পকথার মধ্যে দাম্পত্য ভালোবাসাকে ব্যঙ্গ করার মধ্যে দৃশ্যমান।

      অর্থাৎ, যুগে যুগে মানবসমাজে রোমান্টিক ভালোবাসা ছিল ঠিকই, কিন্তু তার ভিত্তিতে পরিবার গঠন করার রীতি ছিল না। বরং সেই ভালোবাসাকে রাখা হতো পরিবারের বাইরে। কারণ পরিবারের প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি হিসেবে ভালোবাসা দুর্বল ও ভঙ্গুর।

      ৪. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের সব দেশের যেখানে সমাজ বিয়ের ভিত্তি হিসেবে রোমান্টিক ভালোবাসাকে গ্রহণ করেছে, সেখানেই বিয়ে বিচ্ছেদের মহামারী লেগেছে। বাংলাদেশেও একই ধারাবাহিকতা লক্ষ করছি আমরা। এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সমস্যার মূল কারণ, তথা ভালোবাসার ভিত্তিতে বিয়ের ধারা থেকে সরে এসে পরিবারের প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্যের ওপর জোর দিতে হবে। বিয়ের আগে ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে হররোজ ডেটিং করলেও বিয়ের সময় মনে রাখতে হবে যে, পরিবার মূলত একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান, যার ভেতর দিয়ে সমাজ ব্যক্তির ওপর সমাজকেই প্রতিপালন করার দায়িত্ব আরোপ করে— নতুন প্রজন্মের জন্মদান, লালন-পালন এবং সমাজের সদস্য হিসেবে যাবতীয় রীতিনীতি এবং জ্ঞানের শিক্ষাদান, বড়দের সেবা এবং সমগ্র পরিবারের কার্যক্রম পরিচালনার মধ্য দিয়ে সমাজকে চলমান রাখা।

      পরিবার মূলত একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান, যার মধ্য দিয়ে নানা রীতিনীতি অনুসরণ করার মধ্য দিয়ে ব্যক্তি তাদের ওপর অর্পিত সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে। যেহেতু সেসব দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে অন্য আরো অনেকের সহযোগিতা আবশ্যক, তাই সমাজ ব্যক্তিদেরকে এমন ধরনের পারিবারিক কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসে, যেখানে তারা ব্যক্তিগত প্রয়োজনগুলো মেটানোর পাশাপাশি অন্যদের সহায়তায় সামাজিক দায়িত্ব-কর্তব্যগুলোও যথারীতি পালন করতে পারে। আর এমন সহযোগিতামূলক পরিবারের ভিত্তি হলো পারস্পরিক দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ।

      বিয়ে করে ‘নিজের কী কী অধিকার আদায় করতে পারলাম আর কী কী থেকে বঞ্চিত হলাম’-জাতীয় ভাবনা থেকে বের হয়ে এসে ‘পরিবারের অন্যদের প্রতি কী কী কর্তব্য পালন করতে পারছি আর কী কী বাকি আছে’ নিয়ে সচেতন হওয়া চলমান তালাকের টর্নেডো থামানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায়। এর পর সামাজিক পরিমণ্ডলে— বিদ্যালয়ের পাঠক্রমের মাধ্যমে সরাসরি আর নানা মিডিয়া ও শিল্পকলার মাধ্যমে অনুচ্চারে— পরিবারের ভিত্তি হিসেবে ব্যক্তির স্থানে সমষ্টিকে পুনঃস্থাপন করতে হবে বিয়ে বিচ্ছেদের মধ্য দিয়ে পরিবারের ভাঙন তথা সমাজের ধ্বংস ঠেকাতে হলে।

       

      লেখক: রিসার্চ ফেলো, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া লস অ্যাঞ্জেলেস; শিক্ষক, নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কাতার

      পাঠকের মতামত

      সংশ্লিষ্ট খবর

      • বাংলাদেশের সমসাময়িক অর্থনীতি ও রাজনীতি
      • বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক
      • প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হাজারো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান : দ্রুত সংস্কারের ব্যবস্থা নিন
      • সংশোধিত এডিপির আকার আরো বড় হচ্ছে : মানসম্পন্ন উন্নয়ন নিশ্চিত হোক
      • সুরুজ মিয়ার সৌজন্য সংকট!
      • আল মাহমুদ: ‘পরাজিত হয় না কবিরা’

      সর্বাধিক পঠিত

      • ব্যাংকিংয়ে মূল সমস্যা মানবসম্পদে 
      • ছিঁচকে টাউট, ভিআইপি টাউট, বিশ্বটাউট
      • বাংলাদেশে অর্থনীতিচর্চার অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ
      • যে চোরাবালিতে ডুবতে চলেছেন এরদোগান
      • দুই অর্থনীতির গল্প বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম
      • বিশ্বের সব দরিদ্র মানুষের জীবনচিত্র এক রকম নয় 
      • খেলাপি ঋণ আদায়ে যা করণীয় 
      • ইসলামী ব্যাংকিংয়ে আস্থা ও অনাস্থা
      • বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ ও এনটিআরসিএর অদক্ষ পরিকল্পনা
      • পুঁজিবাজারের চ্যালেঞ্জ ও সংস্কার প্রসঙ্গ
      • সর্বশেষ
      • নির্বাচিত
      • উপজেলা ও সিটিতে জাতীয় নির্বাচনের মতো পরিবেশ থাকবে : সিইসি
      • সরকারি জমি বিক্রি: সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র
      • ভারতে নিযুক্ত হাই কমিশনারকে ডেকে পাঠিয়েছে ইসলামাবাদ
      • এমপিদের শপথের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা রিট খারিজ
      • সফরে এসে ইমরান খানকে কী দিলেন যুবরাজ সালমান?
      • পটুয়াখালীতে বাস উল্টে বাসমালিক নিহত
      • অভিজিৎ হত্যার চার্জশিট প্রস্তুত
      • বিশ্বকাপের পর ওয়ানডে থেকে বিদায় নিতে চান গেইল
      • সংসদে অর্থমন্ত্রী : সব ব্যাংকের ঋণের সুদহার এক অংকে নামবে শিগগিরই
      • সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কমিটির নেতৃত্বে শাজাহান খান
      • অনুমোদন পেল আরো তিন ব্যাংক
      • ইনভয়েসিং ও ওয়্যারহাউজ অনিয়ম বন্ধের আহ্বান সালমান এফ রহমানের
      • শেরপুরে দেশী মুরগির ৩৫০ মডেল খামার 
      • পেনাল্টিতে রক্ষা বার্সার, হারল রিয়াল
      • সরু রাস্তা বড় না করেই পুরান ঢাকায় ৩ বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করছে ডিএসসিসি
      • জেআরপি ২০১৯ : ভাসানচরকে অন্তর্ভুক্ত করেনি জাতিসংঘ
    • আরো খবর
    • সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

      বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ : বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

      পিএবিএক্স: ৮১৮৯৬২২-২৩, ই-মেইল: [email protected] | বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ ফ্যাক্স: ৮১৮৯৬১৯

      GO TOP