টেলিকম ও প্রযুক্তি
10 Shares

ভারতের টেলিকম খাত ঋণভারে জর্জরিত হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে নতুন করনীতি গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্সের (জিএসটি) আওতায় উচ্চহারে কর আরোপ খাতটির জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। এছাড়া তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে চাপে রয়েছে টেলিকম কোম্পানিগুলো। আর্থিক সংকটে ভুগতে থাকা খাতটির উন্নয়নে প্যাকেজ সুবিধার পাশাপাশি টেলিকম সেবায় জিএসটির হার কমানোর কথা ভাবছে দেশটির সরকার। খবর দ্য টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া।
টেলিকম সচিব অরুনা সুন্দরারাজন গত শুক্রবার জানান, টেলিকম খাতের উদ্বেগের বিষয়টি সরকারের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। জিএসটি বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছি।
তিনি বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতির উন্নয়নে কাজ চলছে। টেলিকম কোম্পানিগুলো কী ধরনের আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, তা জানতে এরই মধ্যে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। অপারেটরদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে সংকটপূর্ণ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার কার্যকর উপায় বের করতে কাজ করছে এ গ্রুপ।
টেলিকম খাত ঋণে ন্যুব্জ হয়ে পড়ার কারণ জানতে গত জুনে অপারেটরদের নিয়ে শুনানির আয়োজন করে আন্তঃমন্ত্রণালয় গ্রুপ। সে সময় জিএসটি বিষয়ে তীব্র বিরোধিতা করে আইডিয়া সেলুলার, ভোডাফোন ও এয়ারটেলসহ একাধিক টেলিকম কোম্পানি। টেলিকম সেবাকে নিত্য প্রয়োজনীয় হিসেবে গণ্য করা ও একই সঙ্গে খাতটির জন্য জিএসটি ১৮ শতাংশের পরিবর্তে ৫ শতাংশ নির্ধারণের দাবি করা হয়। তবে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় টেলিকম খাতের জন্য জিএসটির হার ১২ শতাংশে নামিয়ে আনা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
টেলিকম অপারেটরদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতি কাটিয়ে আনার জিএসটির হার কমিয়ে রাখার বিকল্প নেই। টেলিকম সেবার সঙ্গে মানুষকে সম্পৃক্ত করার জন্য এটাই সবচেয়ে ভালো পন্থা হতে পারে। কারণ উচ্চকরের জন্য ভোক্তাদের অতিরিক্ত বিল পরিশোধ করতে হবে। সাধারণ ভোক্তারা এ নিয়ে এক ধরনের হতাশার মধ্যে রয়েছেন।
ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয় জিএসটির পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে জানায়, ইনপুট ক্রেডিট সুবিধার কারণে টেলিকম অপারেটরগুলোর সামগ্রিকভাবে আর্থিক বোঝা বাড়বে না। বরং এর ফলে এ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয় ৩ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে।
ব্যাংকারদের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে টেলিকম খাতের অক্ষমতার বিষয় নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। টেলিকম শিল্পকে অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল খাত হিসেবে বিবেচনা করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আনার দাবি জানানো হয়।
বিশ্লেষকদের তথ্যমতে, স্পেকট্রাম ক্রয় এবং তীব্র মূল্যযুদ্ধের কারণে বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে টেলিকম কোম্পানিগুলোর সরাসরি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি রুপি। বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে অপারেটররা এ বিপুল ঋণ পরিশোধের আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। বিভিন্ন ব্যাংক টেলিকম কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি এ খাত-সংশ্লিষ্ট প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে এমন প্রতিষ্ঠানকে সরাসরি ঋণ দিয়েছে আরো ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি রুপি।
বলা হচ্ছে, টেলিকম কোম্পানিগুলোর ওপর স্পেকট্রাম ক্রয় বাবদ ৩ লাখ ৯ হাজার কোটি রুপির বোঝা চেপে আছে। পরবর্তী স্পেকট্রাম নিলামে এ আর্থিক বোঝা আরো বাড়তে পারে।
ব্যাংকারদের তথ্যমতে, সেবা সরবরাহে টেলিকম কোম্পানিগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি ব্যাংক ঋণ কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে।
টেলিকম কোম্পানিগুলো এর আগে জিএসটির হার কমানোর পাশাপাশি স্পেকট্রাম ব্যবহার বাবদ চার্জ কমিয়ে ১ শতাংশ করে ব্যাংক ঋণের বোঝা কমাতে বার্ষিক পরিশোধ সুবিধা দেয়ার দাবি জানিয়েছে।
জানা যায়, ২০১৬ সালের নিলামে ভারতের টেলিযোগাযোগ বিভাগ স্পেকট্রাম ব্যবহার বাবদ ৩ শতাংশ চার্জ নির্ধারণ করেছিল। একই সঙ্গে লাইসেন্স ফি ৮ শতাংশের পরিবর্তে ৫ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছে টেলিকম কোম্পানিগুলো।
পাঠকের মতামত